বাবার রাগের কারণ জানতে চেয়েছ কি?
আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করেছি। কিন্তুমাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পাইনি বলে আমি ওখানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ার সুযোগ পাইনি। এখন পড়াশোনা করছি বিজ্ঞান নিয়ে। সমস্যাটা হচ্ছে যে আমি মিশন থেকে চলে আসায় প্রায়শই বাবা আমাকে বলে যে তাঁর সব টাকা নাকি আমার পেছনেই চলে যায়। আমি সারা দিন পড়লেও বাবার চোখে পড়ে না। কিন্তু আমি যেই একটু রিফ্রেশমেন্ট-এর জন্য টিভি দেখি অমনি বাবার কথা শুরু হয়ে যায়। এই ভাবে কথা শুনতে শুনতে আমার আর ভাল লাগে না। মনে হয় বাড়ি থেকে পালাই। আমি কী করব?
তোমাকে বলছি
তোমার বাবার সঙ্গে তোমার যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, সেটা খুবই দুঃখের। যে কোনও কারণেই হোক, তোমার রেজাল্ট আশানুরূপ হয়নি। তাতে তোমার এবং বাবা-মা সকলেরই কষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু তার ফলে যদি তোমার সঙ্গে বাবার সম্পর্কটাই খারাপ হয়ে যায়, তবে তো মুশকিল।
প্রথমেই বলি, তোমার বাবা যে আচরণ করেছেন বলে জানিয়েছ, সেটা সমর্থনযোগ্য নয়। আমি ধরে নিচ্ছি তোমার বাবা আগে থেকেই এ রকম অন্যায় করতেন না; অর্থাৎ ছোটবেলা থেকে তুমি ওঁকে এই রকম স্বভাবের বলে জানতে না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কেন উনি এ রকম করছেন, সেটা বোঝার একটা দায় আমাদের থেকে যায়। তোমার বাবার রাগের বর্ণনা থেকে আমার মনে হচ্ছে যে, উনি শুধু মাত্র তোমার রেজাল্টের জন্য রেগে বা উদ্বিগ্ন হয়ে নেই, আরও কিছু কিছু কারণ এর মধ্যে জড়িয়ে আছে। অর্থাৎ, ওঁর অযৌক্তিক আচরণ কেবল মাত্র একটি নয়, অনেকগুলি কারণ দিয়ে নির্ধারিত হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় overdetermined.
সমস্যা হল, তুমি বাবার এই আচরণটুকুর কথা ছাড়া আর কিছুই লেখনি। ফলে অনেকগুলি কারণই আমাকে কল্পনা করে বলতে হচ্ছে। একটু চিন্তা করার দরকার যে, তোমার রেজাল্ট কেন ওঁকে এতটা উদ্বিগ্ন ও ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। তোমার চিঠি পড়ে আমার মনে হচ্ছে, উনি তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে তো বটেই, নিজের কিছু সমস্যা নিয়েও হয়তো বিব্রত আছেন। এর নানা কারণ থাকতে পারে। তোমার পরিবারে অন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে তোমার বাবার সম্পর্ক কেমন, বাবার কর্মক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি হয়েছে কি না, শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না, বাবার অবসরের বয়স এসে গেছে বলে বা অন্যান্য পারিবারিক দায়িত্বের জন্য আর্থিক চাপ অনুভব করছেন কি না, ইত্যাদি অনেক সম্ভাবনার কথা আমার মনে আসছে। যখন এক জন মানুষ নানাবিধ সমস্যার মধ্যে থাকেন, তখন অনেক সময় এ রকম একটি মাত্র দুর্বল জায়গায় তার প্রকাশ হয়ে পড়ে। এটা বাঞ্ছনীয় নয়, কিন্তু এ রকম ঘটে।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
বাবার উপরে তোমার রাগ বা ক্ষোভ স্বাভাবিক। কিন্তু এক বারও কি বাবাকে প্রশ্ন করে দেখেছ যে বাবা কেন অযৌক্তিক ভাবে তোমার ওপর রাগ করছেন? আবার হয়তো বাস্তবিকই তোমার পড়ায় অবহেলা বা অমনোযোগের জন্য তোমার খারাপ রেজাল্ট হয়েছিল। বাবা হয়তো এখনও আশাভঙ্গের জন্য তোমাকে দায়ী করে চলেছেন। আসলে পরীক্ষার রেজাল্ট জিনিসটা অনেকগুলো পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তোমার রেজাল্ট কেন খারাপ হল, আর কতটা খারাপ হল, এটা জানাও জরুরি। বাবা যে ভাবে রাগ প্রকাশ করছেন, সেটা তোমার আগের কোনও আচরণের জন্য জমে থাকা রাগও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই বিষয়ে একটা বোঝাপড়ায় আসা দরকার।
তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছ। বাবার রাগে শুধুমাত্র বিরক্ত বা দুঃখিত না হয়ে বিষয়টার সমাধান করার দায়িত্বও কিছুটা তোমার ওপর পড়ে। বাবার সঙ্গে স্পষ্ট করে কথা বলো, বাবার উদ্বেগের কারণ যদি বাইরের জগতে হয়, সেখানে সাহায্য করার, পরামর্শ দেওয়ার বয়স তোমার হয়েছে। যদি তোমার আগের কোনও আচরণের সঙ্গে ব্যাপারটা জড়িত থাকে, তা হলে তা নিয়েও খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। মা এবং পরিবারের অন্যদের সাহায্য নিয়ে সমাধান করা যেতে পারে। তুমি প্রশ্ন করেছ ‘আমি কী করব’? আমি উত্তরে বলতে চাই, তুমি পরিবারের এক জন দায়িত্বশীল সদস্যের মতো চিন্তাভাবনা করে সমস্যার উৎস খুঁজে তার সমাধানে সাহায্য করবে; মন খারাপ করে পালিয়ে যাবে না।
বাবা-মাকে বলছি
আপনার ছেলেকে লিখেছি যে আপনার এই রাগের প্রকাশ সমর্থনযোগ্য নয়। কেন নয়, সে বিষয়ে দু-একটা কথা বলতে চাই। আপনি যে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, তাতে আমার সন্দেহ নেই। যদি ধরে নিই যে আপনার উদ্বেগ বাইরের কিছু সমস্যার জন্যে, তবে ছেলের ওপরে রাগ করে তা মিটবে না। মাঝখান থেকে ওর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে। যদি ছেলের কোনও অভ্যাসের কারণে আপনার উদ্বেগ বা রাগ হতে থাকে, তবে সেই অভ্যাস কাটানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে ঠিকই, কিন্তু সেটাও ওর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে করতে পারলেই ভাল হয়। নিছক বকাবকি করে ওর স্বভাব পাল্টানো যাবে না। পড়ার ফাঁকে একটু টিভি দেখলে বাস্তবিকই বিরাট কোনও ক্ষতি হয় না, তা আমরা সবাই জানি। টিভি-র নেশা হয়ে গেলে অবশ্যই আলাদা কথা। আপনার ছেলের বয়সটাও সংবেদনশীলতার; আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়ায় ওরও খারাপ লেগেছে। আপনার কাছে সহানুভূতি পেলে ওর ভবিষ্যতে সফল হবার সম্ভাবনা বাড়বে। সর্বোপরি ছেলেকে যা বলেছি, সেটা আপনাকেও বলতে পারি যদি বাইরের কোনও বিষয়ে আপনি উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে ছেলেকে সেই সমস্যার সমাধানের শরিক করে নিন, তাতে আপনাদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে।

ছেলেমেয়েকে নিয়ে মা-বাবার সমস্যা? নাকি মা-বাবাকে নিয়ে ছেলেমেয়ের সমস্যা? পড়ার খরচ
নিয়ে অভিভাবকের দুশ্চিন্তা? দূরের শহরে পড়তে যাওয়ার নামে মেয়ের গায়ে জ্বর আসা? যে
মুশকিলই হোক না কেন, পরিবারের সবাই মিলেই সমাধানে পৌঁছতে হবে। এ বার থেকে
‘প্রস্তুতি’-ও কথা বলবে গোটা পরিবারের সঙ্গেই। অভিভাবকদের বা সন্তানের যে কোনও দুশ্চিন্তার
কথা আমাদের জানান (এবং জানাও) নিজেদের সমস্যা। সুচিন্তিত উত্তর দেবেন বিশেষজ্ঞরা।

ইমেল: prastuti@abp.in বিষয়: Haate Haat।

অথবা, চিঠি পাঠান (এবং পাঠাও) এই ঠিকানায়:
হাতে হাত, প্রস্তুতি,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.