|
|
|
|
|
|
কোনও কাজ মাথায় রাখবে না |
সব লিখে ফেলবে। আর তা হলেই দেখবে, ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’
কত সহজ হয়ে যাচ্ছে। অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় |
টাইম ম্যানেজমেন্ট কথাটা বলতে বলতে, চলতে চলতে দিব্যি বাংলা হয়ে গেছে, প্রায় টেবিল-চেয়ারের মতোই। আমরা সবাই এখন কথায় কথায় বলি, ‘কিছুতেই টাইম ম্যানেজ করতে পারছি না।’ ভাল করে ভেবে দেখলে, কথাটা ঠিক নয়। টাইম ম্যানেজ করা যায় না, ওটা আমাদের হাতে নেই, আমরা কেউ হযবরল-র শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্কুচে নই যে চুরিচামারি করে কিছু টাইম ম্যানেজ করতে পারব। নদীর স্রোত যদি বা আটকানো যায়, সময় কখনও নয়।
আসলে আমরা যেটা ম্যানেজ করতে পারি, অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেটা হল কাজ। মানে, আমরা কখন কী ভাবে কী করব এবং কী করব না, এক মাত্র সেটাই আমাদের হাতে থাকে। না, সবটা হাতে থাকে না, অনেক কাজ আমাদের করতেই হয়, বাসে উঠলে টিকিটটা কাটতেই হয়, কিন্তু অনেক কাজই আবার কিছুটা ভেবেচিন্তে সময় বুঝে করার বা না-করার সুযোগ থাকে। টাইম ম্যানেজমেন্ট বলতে আসলে সেটাই বোঝায় সময় অনুসারে কাজের ম্যানেজমেন্ট।
মুশকিল হল, কাজগুলো কেবল জমতেই থাকে, কিছুতেই তাদের বাগে আনা যায় না, দু’দিন যদি কিছুটা গুছিয়ে ফেলা গেল, তৃতীয় দিন থেকে যেই না একটু ছাড়ান দেওয়া, অমনি চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে আবার যে কে সেই, টেবিলটা আবার স্তূপাকার, সম্পূর্ণ অগোছাল। এই সমস্যা নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই ভার।
তা হলে উপায়? বেশ কয়েক বছর আগে ডেভিড অ্যালেন নামে এক সাহেব একটা বই লিখেছিলেন। বইটার নাম : গেটিং থিংস ডান (পেঙ্গুইন)। গোটা বইটা কাজ সামলানো নিয়ে। কী করে সামলাতে হবে, তার একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ পথনির্দেশ, যাকে বলে হাতে ধরে শেখানো। অত কথার তো আর এখানে জায়গা নেই, তবে মূল কথাটা সংক্ষেপে বলে দেওয়া যায়।
প্রথম কথা হল, যত কাজ আছে, সব কিছুর হিসেব কষে ফেলতে হবে, কোনও একটা কাজও ‘করব’ বলে মাথায় ফেলে রাখা চলবে না। কারণ, যে কাজটার কথা মনে রেখে দেবে, সেটাই মনের ওপর একটা বোঝা হয়ে থাকবে, সচেতন বা অবচেতন ভাবে তার চিন্তাটা তোমাকে বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু কাজের হিসেব কষে ফেলা মানে কী? কী ভাবে মনকে বকেয়া কাজের ভার থেকে মুক্তি দেওয়া যায়?
ডেভিড বলেন, প্রথমে অনেকটা সময় নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বরাদ্দ করো, ভাল হয় যদি সেই সময়টার মধ্যে অন্য কোনও কাজ করতে না হয়। সাধারণত দুটো দিন পুরো লেগে যায় এ জন্য। শুনলেই মনে হতে পারে, দু’দিন? ওরে বাবা! কিন্তু এক বার এই গুছিয়ে নেওয়াটা সেরে ফেলতে পারলে পরে বিরাট সুবিধে হয়, অনেক সময় বাঁচে, কাজও অনেক ভাল হয়।
|
|
তো, যত রকমের কাজ অসমাপ্ত আছে, সব কিছুর তালিকা করে ফেলো। ছোট কাজ, বড় কাজ বলে কোনও বাছবিচার কোরো না। লাইব্রেরির বইটা ফেরত দিতে হবে, টেলিফোন বিলের টাকা দিতে হবে, কিংবা বিকেলে বন্ধুকে একটা দরকারি খবর দিতে হবে এর প্রত্যেকটাই কাজ। যখন হিসেব রাখছ, তখন কোনও কাজকেই বেশি বা কম গুরুত্ব দেবে না, কোনও একটা কাজের হিসেবও বাদ দেবে না।
কিন্তু হিসেবটা রাখবে কী ভাবে? প্রথম কথা, যে কাজ করার দরকার নেই, সেটা একেবারে সরিয়ে দাও, ভুলে যাও। অ-দরকারি কাজকে ‘না’ বলতে শেখো। আবার অনেক কিছু থাকে, যেগুলো হয়তো এখন কাজে লাগবে না, কিন্তু ভবিষ্যতে কোনও সময় কাজে লাগবে। ধরো, একটা লেখা পেয়েছ, যেটা এখন পড়ার সময় নেই, কিন্তু পরে পড়া দরকার। ফাইল করে রাখো। ফাইল করারও একটা সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করো।
এ বার এসো সেই সব কাজ, যেগুলো নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন রকমের উপায় আছে। এক, যেগুলো দু’তিন মিনিটে করা যায়, যেমন ধরো ফোন করে গ্যাস বুক করা, সম্ভব হলে সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলো। দুই, অন্য কাউকে যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া যায়, সেটা ঠিক ঠিক লোককে বুঝিয়ে দাও, যাকে বলে ‘ডেলিগেট’ করা। তিন, যে কাজটা এখনই করা সম্ভব নয়, সেটা কবে কখন করবে, এখনই নির্দিষ্ট করে লিখে রাখো।
শুনতে খুব সহজ মনে হচ্ছে? এক বার একটু সময় বের করে এই গুছিয়ে লিখে ফেলার কাজটা করে দেখ, গোটা জীবনটা কত সহজ হয়ে গেছে। প্রথম বার গোছানোটাই সবচেয়ে সময়সাপেক্ষ। তার পর কেবল হিসেব ধরে ধরে কাজগুলো করে যাওয়া, আর নতুন কাজ আসামাত্র লিখে ফেলা। এটা হতেই পারে যে, অনেক কাজই আগের হিসেব মাফিক করে উঠতে পারছ না, পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। হতেই পারে, কিন্তু সেটাও তৎক্ষণাৎ লিখে ফেলতে হবে, ‘মাথায় রাখলে’ চলবে না।
ব্যস। এটাই হল টাইম ম্যানেজমেন্ট। ঠিক ভাবে করতে পারলে তোমার মনে হবে, দিনগুলো সব আটচল্লিশ ঘণ্টার হয়ে গেছে! কাক্কেশ্বরও অবাক হয়ে যাবে।
পুনশ্চ: যদি জানতে চাও, নিজে এই কাজ গোছানোর কাজটা করতে পেরেছি কি না, এক বাক্যে বলব: পারিনি। ডেভিড অ্যালেনের বইটা গত তিন বছরে বার তিরিশ পড়েছি, এই পর্যন্ত। তবে হাল ছাড়িনি। চলো, চেষ্টা করি। |
|
|
|
|
|