রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভাঙচুর স্টেডিয়ামে
খেলা চলাকালীন এক দল দর্শকের উন্মত্ত আচরণের জেরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে গেল বনগাঁ মহকুমা প্রথম ডিভিশন ফুটবল লিগের ফাইনাল। রেফারির একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রবিবার ওই দর্শকেরা গ্যালারির ফেনসিংয়ের একাংশ এবং ভিআইপি গ্যালারির চেয়ার ভাঙচুর করে। হামলা চালানো হয় খেলোয়াড় এবং রেফারিদের ড্রেসিংরুমে। এসডিপিও (বনগাঁ) বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বিশাল বাহিনী এবং কমব্যাট ফোর্স নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামলান।
বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং কমব্যাট ফোর্স ঘটনাস্থলে যায়।
মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা পরিচালিত ওই খেলায় এ দিন মুখোমুখি হয় প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাব এবং জাগ্রত সঙ্ঘ। খেলার ১৮ মিনিটের মাথায় প্রতাপগড়ের শ্যামল চক্রবর্তীকে নিজেদের বক্সের মধ্যে ‘ফাউল’ করার জন্য জাগ্রত সঙ্ঘের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেন রেফারি সন্দীপ সরকার। জাগ্রত সঙ্ঘের খেলোয়াড়রা রেফারিকে ঘিরে প্রতিবাদ জানান। উত্তেজিত হয়ে ওঠেন গ্যালারির ডান দিকে থাকা দর্শকেরা। তাঁরা রেফারির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানান। এর পরেই গোলমাল ছড়ায়। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুনীল সরকার-সহ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ করা হয়। খেলোয়াড় এবং রেফারিদের ড্রেসিংরুমের ১১টি জানলার কাচ ইট দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। গ্রিল ও দরজা ভাঙারও চেষ্টা হয়।
এ দিন খেলা দেখতে এসেছিলেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। তাঁরা মাঠে নেমে দর্শকদের শান্ত হওয়ার আবেদন জানান। তাতে কর্ণপাত করেননি হামলাকারীরা। ওই সময়ে মাঠে বনগাঁর ওসি (ট্রাফিক)-সহ জনা সাতেক পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। মাঠে আসেন মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারাও। তাঁরা মাইকে খেলা স্থগিত ঘোষণা করেন। তখন ফের এক দফা উত্তেজনা ছড়ায়। দর্শকেরা টিকিটের দাম ফেরত চান। তবে রাত পর্যন্ত এই গোলমালের ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করেননি উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানান, আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার অভিযোগ, যে দর্শকেরা এ দিন ভাঙচুর চালায়, তারা জাগ্রত সঙ্ঘের নির্দিষ্ট জায়গায় বসেছিল।
সংস্থার সম্পাদক সুনীল সরকার বলেন, “ওই পরিবেশে খেলা চালানো সম্ভব ছিল না। তাই ফাইনালটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।” জাগ্রত সঙ্ঘের কার্যকরী কমিটির সদস্য তপন আইচের অভিযোগ, “রেফারির অদক্ষতার জন্যই এ দিন মাঠে ওই ঘটনা ঘটে।” তিনি বলেন, “রেফারি মাঝমাঠে ছিলেন। ফাউল হয় বক্স থেকে প্রায় ১০ হাত দূরে। তা সত্ত্বেও তিনি পেনাল্টি দেন। সহকারী রেফারিদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি।” সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা টিকিট কেটে খেলা দেখতে এসেছিলেন, খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরাই উত্তেজিত হয়ে এই ঘটনা ঘটান। ক্লাবের কেউ তাতে যুক্ত নন।” প্রতাপগড় স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। জাগ্রত সঙ্ঘের উচিত ছিল খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব দেখানো।”
জাগ্রত সঙ্ঘ তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও রেফারি সন্দীপবাবুর দাবি, “আমি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। বক্সের ১২ গজের মধ্যে ফাউল করেছিলেন জাগ্রত সঙ্ঘের খেলোয়াড়।” মহকুমা রেফারি অ্যান্ড আম্পায়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনাথবন্ধু ঘোষ বলেন, “আমরা ফাইনাল খেলা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য জেলা সংস্থায় আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকেই রেফারি এসেছিলেন। তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।” এ দিনের ঘটনার নিন্দায় সরব মহকুমার প্রাক্তন খেলোয়াড়রা। লাল্টু নাথ বলেন, “মনে হচ্ছে ফুটবল খেলার পরিবেশ বনগাঁ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।” ২১ অগস্ট এই মাঠেই অভিযান সঙ্ঘ এবং দীনবন্ধু স্মৃতি সঙ্ঘের মধ্যে লিগের খেলা চলাকালীন একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রেফারিকে মারধর করা হয়। প্রহৃত হন সহকারী রেফারিও। অভিযোগ ওঠে দীনবন্ধু স্মৃতি সঙ্ঘের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। দীনবন্ধু স্মৃতি সঙ্ঘকে দু’বছরের জন্য লিগ থেকে সাসপেন্ড করেছে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা।

ছবি: পার্থসারথি নন্দী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.