‘পরিবর্তনে’ জমজমাট শ্রীধরপুরের যাত্রাপাড়া
রাজনৈতিক অস্থিরতার ছায়া কাটিয়ে ‘পরিবর্তনের ছোঁওয়া’ লেগেছে নন্দকুমারের শ্রীধরপুরের যাত্রাপাড়ায়।
নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর-জঙ্গলমহল অশান্ত রাজ্যে ঘটনার ঘনঘটায় গত কয়েক বছর ধরে মন্দা চলছিল পূর্ব মেদিনীপুরের এই যাত্রা পাড়ায়। বুকিং কমে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই ঝিমনো পরিবেশটাই কেটে গিয়েছে আচমকা। আষাড় মাসে রথযাত্রায় বুকিং শুরুর প্রথম দিনেই ‘পরিবর্তন’টা টের পাওয়া গিয়েছিল। যাত্রার চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালের ঘটনাবলী নিয়ে তৈরি সামাজিক-রাজনৈতিক পালাকে ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছে এ বার। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকেই যাত্রাপালাগুলি মঞ্চস্থ হয় মূলত। রবিবার হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কের ধারে যাত্রাপালা বুকিংয়ের অফিসে তাই উপচে পড়ছিল ভিড়।
নন্দকুমারের যাত্রাপাড়ায় রয়েছে কলকাতা ও দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন যাত্রাদলের বুকিং অফিস। সব মিলিয়ে ১৮টি বুকিং অফিস রয়েছে এখানে। এক-একটি অফিসে ১০-২০টি যাত্রাদলের বুকিং হয়। দুই মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এমনকী ঝাড়খণ্ড, অসম, ত্রিপুরা থেকেও বুকিং হয় এখানে। গত ১৫ বছর ধরে কলকাতার চিৎপুরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে নন্দকুমারের এই যাত্রাপাড়া।
পোস্টারে ছয়লাপ শ্রীধরপুরের যাত্রাপাড়া। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবার শ্রীধরপুরে গিয়ে দেখা গেল চলতি বছরের নানা যাত্রাদলের ব্যানার-হোর্ডিংয়ে সেজে উঠেছে বুকিং অফিসগুলি। বায়না দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন পুজোকমিটি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। যাত্রাদলের কলা-কুশলীরাও ভিড় করেছেন সেখানে। দীর্ঘ দিন ধরে যাত্রাদলের বুকিংয়ের কাজে যুক্ত সন্তোষ মাইতি জানান, বিশ্বকর্মা পুজো থেকে সেই যে যাত্রার মরসুম শুরু হয়, চলে জুন মাস পর্যন্ত। এই মরসুমের মধ্যে গড়ে ১৫০-২০০ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যাত্রাদলগুলি। কোনও কোনও যাত্রাদল ২৩০ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে।
‘কালীমাতা যাত্রা সংবাদে’র বনমালী মাইতি বলেন, “গত ৩০ বছর ধরে এখানে যাত্রাদলের বুকিং করছি। এ বার গ্রামবাংলায় যাত্রাপালার চাহিদা খুব বেশি। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনেই আমার কাছে তিনটে যাত্রাপালা বুকিং হয়েছে।”
পরিস্থিতি যে অনেকটাই ইতিবাচক তা মেনে নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের যাত্রাদল মালিকদের সংগঠন তাম্রলিপ্ত যাত্রা প্রযোজক পরিষদের সম্পাদক শেখ জাহাঙ্গিরও। তাঁর নিজের সংস্থারই ৮ দিন অভিনয় হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। আরও ৪২ দিনের বুকিং রয়েছে। জাহাঙ্গির বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যাওয়ায় এ বার যাত্রার চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলেও এ বার যাত্রার বুকিং হচ্ছে। গত বছর যা সম্ভব ছিল না।” একই মত তাম্রলিপ্ত যাত্রা পরিচালক পরিষদের সম্পাদক সুনীল মাইতির। তিনিও বলেন, “রাজ্যের বহু এলাকায় যাত্রাপালা বন্ধ ছিল গত কয়েকবছর। এ বার সেখানে ঝাড়গ্রাম, ঝাড়খণ্ডের মতো এলাকাতেও বুকিং হচ্ছে। সব মিলিয়ে যাত্রার মরসুম জমে উঠেছে।”
‘পরিবর্তনে’র বাজারে পরিবর্তন হয়েছে যাত্রার আঙ্গিকেরও। পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক পালার চাহিদা কমে গিয়েছে। বদলে সমকালীন ঘটনাবলী নিয়ে তৈরি যাত্রাপালা দেখতেই লোকের আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নামেই তৈরি হয়েছে একাধিক যাত্রাপালা। অঞ্জলি অপেরার ‘বাংলার মসনদে মমতা’, কলকাতা অপেরার ‘মাটির ঘরে মমতা’, নয়নদ্বীপ অপেরার ‘আমিই গ্রামবাংলার মমতা’ প্রভৃতি যাত্রাপালা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। রাজনৈতিক ঘটনাবহুল জায়গাগুলিরও নাম উঠে এসেছে যাত্রাপালায়। যেমন, তপস্যা সংস্থার এ বারের একটি যাত্রাপালা ‘লালগড়ের ছেলে, নন্দীগ্রামের মেয়ে’। দুশ্চিন্তার মেঘ কেটে যাওয়ায় স্বস্তির ছাপ যাত্রাশিল্পীদের চোখে-মুখে। পূর্ব মেদিনীপুরের একটি নামী যাত্রাদলে অভিনয় করেন নন্দীগ্রামের যাদুবাড়িচকের দম্পতি পলাশ ও কাবেরী শিট। তাঁরা বলেন, “নন্দীগ্রামে যা পরিবেশ ছিল, তাতে গত কয়েকবছরে যাত্রাপালা তো কমেছিলই। মাঝেমধ্যে বাড়িও ফিরতে পারতাম না আমরা। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এ বার নন্দীগ্রামেও প্রচুর যাত্রাপালা হচ্ছে। এটা খুবই আশার কথা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.