খানাকুলের পর এ বার কেশপুর।
শাসক তৃণমূলের নেতা-কর্মীর একাংশের ‘অত্যাচারের শিকার’ হলেন দলেরই সমর্থক এক মহিলা। দলের কিছু নেতার ‘জুলুমে’র প্রতিবাদ করে আগেই সপরিবার একঘরে হয়েছিলেন। তার উপরে ক’দিন আগে স্বামীকে কান ধরে বাজারে ঘোরানো হয়। সেই অপমানে কেশপুরের আনন্দপুরের হেটলাপাড়ার পিউ রায় (৩৬) নামে ওই বধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর স্বামী পার্থ রায়ের অভিযোগ। রবিবার রাতে এই মর্মে তিনি আনন্দপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পিউদেবীর আত্মহত্যার ঘটনাকে তাঁরা ‘পারিবারিক বিবাদ’ হিসেবেই দেখছেন।
তবে পার্থবাবুদের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় নেতাদের হাতে লাঞ্ছনার প্রতিকার চাইতে দু’দিন আগে পিউদেবী নিজে মেদিনীপুরে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের সঙ্গে দেখা করতেও এসেছিলেন। কিন্তু দলীয় অফিসে সে সময়ে দীনেনবাবু ছিলেন না। অন্যদের কাছেই অভিযোগ জানিয়ে যান। তার পরেও নানা ভাবে গঞ্জনা, কুরুচিকর মন্তব্য চলছিল বলে অভিযোগ। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে পার্থবাবু দেখেন, ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন স্ত্রী। মুখ থেকে গাঁজলা বেরোচ্ছে। পার্থবাবু বলেন, “কী হয়েছে জানতে চাওয়ায় ও বলল, ‘আর সহ্য হচ্ছে না। বিষ খেয়েছি, চললাম’।” সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। কিন্তু পিউদেবীকে আর বাঁচানো যায়নি। দীনেনবাবুর দাবি, “আমি এই ঘটনা বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে পারিবারিক বিবাদের জেরেই ওই মহিলা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে শুনছি।” |
খানাকুলে সালিশিতে ডেকে দলের মহিলা সংগঠনের এক নেত্রীকে ‘বিবস্ত্র করে’ মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই মহিলা হাসপাতালে ভর্তি। আর পালাবদলের পরেও কেশপুর যে রয়েছে সেই জুলুম-সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হয়েই, পিউদেবীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ফের তা সামনে এল। পেশায় পুরোহিত পার্থবাবুর অভিযোগ, “আমরা তৃণমূলেরই সমর্থক। সেই ২০০০ সালের সন্ত্রাসের সময়ে সিপিএমের অত্যাচারে গ্রামছাড়া হয়েছিলাম। এ বার দলেরই কিছু লোকজনের অত্যাচারে স্ত্রীকে হারালাম!”
পৌরোহিত্যের পাশাপাশি সাইকেলে চা-ও ফেরি করেন পার্থবাবু। গরিব পরিবার। ছেলে শুভদীপ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে, মেয়ে দীপশিখা পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। কষ্ট করেই সংসার চলে। পার্থবাবুর বক্তব্য, “দলেরই কিছু লোক যে ভাবে এলাকায় গরিব মানুষের উপরে জোর-জুলুম করছে, তা মেনে নিতে পারছিলাম না। প্রতিবাদ করেছিলাম। গত ৩০ জুলাই দলের লোকজন বাড়ি বয়ে এসে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে মারধর করে। সামাজিক ভাবে বয়কটের ডাক দেয়। মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছিলাম বলে চাপ আরও বাড়ে। ক’দিন আগে আনন্দপুর বাজারে কান ধরে ঘোরানো হয় আমাকে।” একে তো বয়কটের জেরে সংসার চালানো আরও কষ্টকর হয়ে উঠছিল, তার উপরে স্বামীকে কান ধরে বাজারে ঘোরানোর ঘটনায় পিউদেবী মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে পরিজনদের দাবি। তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি চিত্ত গড়াইয়ের অবশ্য বক্তব্য, “পারিবারিক বিবাদের জেরেই এ ঘটনা। শুধু শুধু রাজনীতির রং চড়ানো হচ্ছে।” |