দলের বিদেশি ফিজিও-র কাছে একা একা অনুশীলন করতে করতে জিভ বের করে ফেললেন ওডাফা ওকোলি। তার পর সটান শুয়ে পড়লেন মাটিতে! মাথায় জল ঢালতে ঢালতে ‘উফ’ ‘উফ’ করতে লাগলেন দেশের সবথেকে দামি ফুটবলার। প্রথম ম্যাচে বিরতির পর দাঁড়িয়ে পড়ার জন্যই হয়তো তাঁকে ফিজিওর কাছে পাঠানো হয়েছিল।
আজ সোমবার ফেড কাপের লাজং এফ সি-র বিরুদ্ধে মোহনবাগানের প্রথম একাদশেই নেই জাতীয় দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী! ওয়াহিংডো ম্যাচে গোল নষ্টের ‘শাস্তি’? তাঁর জায়গায় ওডাফার সঙ্গে শুরু করবেন অসীম বিশ্বাস।
লাল কার্ড দেখা প্রদীপের বদলে মাঝমাঠের প্লে মেকার মণীশ মৈথানির জায়গা হয়ে গেল প্রথম দলে। জুয়েল রাজাকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে সুরকুমারের উপর নির্ভর করছেন কোচ।
ফেড কাপে বিসর্জনের বাজনা জোরালো হওয়া আটকাতে চৌম্বকে আপাতত এটাই স্টিভ ডার্বির ফর্মুলা। নিজের ‘ভুলভুলাইয়া’ ফর্মেশন অবশ্য মোহন কোচ বদলাতে চাইছেন না। বিশ্বকর্মা পুজোর বিকেলে মিনিট পঁয়তাল্লিশের অনুশীলনে কিন্তু দেখা গেল, দুই সাইড ব্যাক কাম মিডিও সুরকুমার আর রহিম নবিকে তিনি ইশারায় অন্তত তিন বার বেশি উঠতে বারণ করলেন। পরে ব্যাখ্যা দিলেন, “রাতারাতি ফর্মেশন বদল করা যায় না। আপনি ডান হাতে খান, কাল থেকে বাঁ হাতে খেতে বললে পারবেন? আমার স্ট্র্যাটেজিটা আসলে কখনও ৫-৩-২, কখনও ৩-৪-১-২। অনেকে সেটা ধরতেই পারছে না। ফুটবলারদের যেটা বলে দিচ্ছি, সেটা করতে পারলেই সমস্যা হবে না।”
মোহনবাগান-লাজং ম্যাচটা দুটি দলের কাছেই সোমবার ডু অর ডাই ম্যাচ। হয় জেতো নয় বিদায় নাও। পুণে এফ সি-র মাঠে অনুশীলনের পর ওডাফা-সহ বেশির ভাগ ফুটবলারই যখন দ্রুত টিম-বাসে উঠছেন, তখন বুক চিতিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন শুধু ‘মুশকিল আসান’ হোসে ব্যারেটো। “আপনি পরিসংখ্যান দেখুন। যে ফেড কাপে আমরা সফল হয়েছি প্রত্যেকটাতেই প্রথম ম্যাচে ধাক্কা খেয়েছে টিম। আমার আশা কাল আমরা জিতব এবং টুর্নামেন্টে টিকে থাকব। তবে গোল চাই। প্রথম ম্যাচে সেটা হলেই দেখতেন সব কিছু বদলে যেত।” টিম অধিনায়ক যখন নিজেদের তাতাতে এ কথা বলছেন, তখন অস্থায়ী কাঠের গ্যালারিতে বসে ডার্বিকে দেখা গেল তিন ডিফেন্ডার সাইমন স্টোরি, রাকেশ মাসি আর আনোয়ারকে পাখি পড়া করে তাঁদের ভুলগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বারবার বলছেন, “এক জনের একবার ভুল হতে পারে। পরপর তিন বার হবে কেন?”
কার্লটন চ্যাপম্যানের ওয়াহিংডোর মতোই প্রদ্যুম রেড্ডির লাজংয়ের ভাল খেলার রসায়ন একই-- পাহাড়ি ছেলেদের দৌড়, ফিটনেস আর দায়বদ্ধতা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে এক সময় যুক্ত থাকা প্রদ্যুমের দলের প্লাস পয়েন্ট কলকাতা লিগে প্রচুর গোল করে যাওয়া স্ট্রাইকার ক্রিস্টোফার। শনিবার হেরে যাওয়ার পরও গ্যলারিতে বসে সালগাওকর-লাজং ম্যাচ দেখেছেন ডার্বি। তাঁর উপলব্ধি, “শুরুতে না গোল করতে পারলে আবার সমস্যা হবে। শুরুতেই গোল চাই।” খাদের কিনারায় চলে গেলেও খেলোয়াড়দের সমালোচনার রাস্তায় যাননি মোহন-কোচ। বলে দিলেন, “কেউ বাচ্চা ছেলে নয় যে গালাগাল, রাগারাগি করে তাদের তাতাতে হবে।” অনুশীলনে আসার আগে ফুটবলারদের একটা ঘরে ডেকে উস্কোখুস্কো চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলে দিয়েছেন, “আগের ম্যাচের কথা ভুলে যাও। নতুন করে নিজের মতো করে তৈরি হও।” খোঁজ করছেন শনিবারের ওয়াহিংডো ম্যাচের সিডির। কিন্তু কে জোগাড় করে দেবেন সেটা? দলের এই দুঃসময়ে কোনও কর্তাই তো ‘নিজের কাজ ছেড়ে’ আসেননি দলের সঙ্গে। এক জন ডাক্তার ম্যানেজার হয়ে এসে মাঠের পাশে বল কুড়োবেন, টিম বাস ঠিক করবেন, না সিডি জোগাড়ের জন্য দৌড়োদৌড়ি করবেন?
মাঠ, টিম বাস, সিডিবলে বলে ক্লান্ত ডার্বি এ দিনও বললেন, “সেট পিসে আমার টিম কিছু করতে পারছে না। কিন্তু কী করব। মাঠের কর্নারের জায়গাগুলোতে তো বড় বড় ঘাস।” কিন্তু কে শুনবে তাঁর কথা। তিনি বুঝে গিয়েছেন, টিম হারলে তাঁর চেয়ার নিয়ে টানাটানি শুরু হবে। সব তির তাঁকে লক্ষ করেই ছোড়া হবে। আপাতত তাই যে করেই হোক ম্যাচটা জিততে চানসে জন্য কাউকে রেয়াত করতে রাজি নন ডার্বি। তা সে সুনীল ছেত্রীই হোন বা ওডাফা ওকোলি। |