তরুণ বসু থাকেন এখন দমদম পার্কে। রবিবার ভরদুপুরে শান্ত গলা তরুণের, “সুব্রত পালই সর্বকালের সেরা ভারতীয় গোলকিপার। সিদ্ধান্ত বদলানোর কারণ তো দেখিনি। সুব্রত টোটালিটি মিলে চমৎকার। মাথা জিওমেট্রিকালি পরিষ্কার। দুটো পায়ে শট, ডিসট্রিবিউশন দারুণ। ওই সবার সেরা।’’
ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় আবার থাকেন দমদম ক্যান্টনমেন্টে। সামান্য পরেই তাঁর সঙ্গে কথা। ‘‘তরুণদা একটু বাড়াবাড়ি করেছে। সর্বকালের সেরা ভারতীয় গোলকিপার তরুণ বসুই। তবে তরুণদার পরে যাদের দেখেছি, সুব্রতই সেরা। সুব্রতর সেরা গুণ হল সাহস ও ফিটনেস।’’
আর ইদানীং যুবভারতীর ধারেকাছে যান না তরুণ। ভাস্করের কিন্তু সোমবার যাওয়ার ইচ্ছে। কাকে দেখতে? ভাস্করের দ্রুত জবাব, ‘‘ইস্টবেঙ্গলকে দেখতে। সুব্রতকেও।’’
চট করে মনে পড়ে গেল, রবিবার সকালে ইস্টবেঙ্গলের প্র্যাক্টিসে এক ক্লাব কর্তার কথা। পুণে এফ সি দল তো আপনাদের তুলনায় কিছুই না, শুনেই যিনি আর্তনাদের ঢঙে বলেছিলেন, ‘‘আরে, ওদের সুব্রত আছে না!’’ এত দিন শোনা যেত, ওদের ভাইচুং আছে না! বা ওডাফা, র্যান্টি! এখন সেই জায়গায় এক গোলকিপারের নাম! ব্রত-কথাও কখনও কখনও আতঙ্কের হয়ে যায়!
অলিভার কান প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পরে সুব্রত পালের প্রিয়তম কিপার আপাতত লিভারপুলের পেপে রায়না, বার্সেলোনার বার্থেজ। রায়নাও প্রতিপক্ষের কারও কাছে এমন সার্টিফিকেট পাবেন না, ‘‘ওদের রায়না আছে না?’’
ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো চরিত্রও যে কারণে মানছেন, সোমবারের ‘ড্র করলেই বিদায়’ ম্যাচটা অনেকটাই সুব্রত পাল বনাম ইস্টবেঙ্গল। মর্গ্যানের প্র্যাক্টিস শেষে বেরিয়ে আসার সময় মেহতাব, ওপারা, টোলগের মুখে সুব্রত-কথা। তার মাঝে ওপারার মুখে সবচেয়ে চটকদার উদ্ধৃতি, ‘‘আমি ঈশ্বর নই যে বলব, জিতবই। তবে প্রথম ম্যাচে মনে হয়েছিল, ম্যাচটা কঠিন হবে। এ বার যেমন মন থেকে মনে হচ্ছে, জিতবই।’’ তার পরে একটু থেমে, ‘‘নিজেদের শহর, মাঠে না জিতলে লজ্জা। তবে আমি তো নিজে গিয়ে গোলে বল ঢোকাতে পারব না।’’
চৌরঙ্গি অঞ্চলের যে হোটেলে সোদপুরের সুব্রতরা আছেন, সেখানে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে বোঝা যায়, দেশের সেরা কিপারের রক্ষণ কতটা দুর্ভেদ্য ও জমাট। মিনিট পনেরো প্রশ্নোত্তরের পরে সাংবাদিককে আবিষ্কার করতে হয়, কিছুই লেখার নেই।
অনেকেই বলছেন, সোমবার সুব্রত বনাম ইস্টবেঙ্গল।
বাজে কথা। ফুটবল হল টিম গেম। ব্যক্তিগত লড়াই নয়। গোলকিপার কি দলকে জেতাতে পারে?
ভারতে আপনার দেখা সবচেয়ে বিপজ্জনক স্ট্রাইকার কে?
আমার বিরুদ্ধে যারা খেলে, সবাইকে সমান গুরুত্ব দিই। ভারতের কেউ খেললেও যেমন সমীহ করব, রোনাল্ডো খেললেও তাই।
পুরনো দলের বিরুদ্ধে পুরনো শহর, পুরনো মাঠে খেলা বলে বাড়তি টেনশন আছে?
পাড়ার ক্লাব খেললেও যেমন সিরিয়াস থাকি, অন্য ক্লাব খেললেও সমান সিরিয়াস। সব দলকে সমান গুরুত্ব দিতে চাই।
টোলগে কতটা ভয়ঙ্কর?
আমি সব স্ট্রাইকারকে সমান চোখে দেখি। কোচ যা বলে দেবেন, সেই অনুযায়ী খেলতে হবে।
কারা এ বার সেরা দল?
অনেকেই। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, সালগাওকর, চার্চিল, ডেম্পো।
আগের দিনের ডেম্পো ম্যাচটাই কি সেরা ক্লাব ম্যাচ আপনার?
ও সব ভাবি না। ভাবব, খেলা ছাড়ার একেবারে পরে। সেরা বলা যাবে তার পরে।
এমন জমাট সুব্রতর রক্ষণ ভেঙে একবারই হেডিং হওয়ার মতো উদ্ধৃতি উঠে এল। ‘‘অন্য দল যতই ভাল হোক না, ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলই এখনও শেষ কথা। এ বারও সেরা দল বলতে হবে ওদের।”
মর্গ্যান, ওপারা বা মেহতাবদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, তাঁরা প্রথম ম্যাচের তিন দুর্বলতা দূরীকরণের চেষ্টায়।
ক) দুই নতুন সাইডব্যাক ওভারল্যাপে যেতে পারেননি। খ) মাঝমাঠ মহমেডান রক্ষণ ভাঙতে না পেরে প্রতিপক্ষকে নিজেদের অর্ধে তুলে আনতে ব্যর্থ। গ) ফরোয়ার্ডরা মাঝমাঠ থেকে বলই পাননি।
এগুলোর ওষুধ কী? ইস্টবেঙ্গল কোচ মর্গ্যান হাত ধরছেন পরিবর্তনের। অভিষেকের বদলে নওবা ফিরছেনই। রবার্টের বদলে সৌমিক দে ঢুকবেন কি না, স্পষ্ট নয়। ক্লাবে অনেকেই হালকা করে কোচের সমালোচনা ভাসাচ্ছেন। কেন বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করতে গিয়ে দুই নতুন সাইডব্যাক নামিয়ে দেওয়া হল?
শুধু সুব্রত পাল নন, এই পুণে এফ সি দলে সমীহ করার আরও চরিত্র। বেঙ্কটেশ না হয় বৃ্দ্ধ, মিজোরামের জেজে লালপেখলুয়াকে ভুলবেন কী করে? ভাইচুং-সুনীলের পরে দেশের সেরা স্ট্রাইকার জেজে। ওপারার সঙ্গে ‘নতুন ভাইচুং’ এর লড়াইটা চটকদারি হওয়া উচিত! আর এক জনের নাম তুললেন অ্যালভিটো ডি’কুনহা। পুণে কোচ ডেরিক পেরিরা। “আর্মান্দো কোলাসোর খুব কাছাকাছি থাকবে ডেরিক। ওর ট্রেনিং পদ্ধতি দারুণ। আর্মান্দোর থেকে কড়া। কিন্তু ভাল ম্যাচ রিডিং।” মর্গ্যানের মুখে আবার পুণে স্টপার চিকা-র নাম।
যুদ্ধটা শুধুই পরিবর্তিত ইস্টবেঙ্গল বনাম সুব্রত-কথা নয়! |