|
|
|
|
বন্যার জেরে খানাকুলে কদর বাড়ছে জগদ্ধাত্রীর |
পীযূষ নন্দী • খানাকুল |
দুর্গাপুজোর তোড়জোড় এখনও শুরুই করতে পারেনি খানাকুল ২ ব্লকের ক্লাবগুলি। পারিবারিক বা গ্রামকমিটির পুজোর প্রস্তুতিও চলছে ঢিমেতালে। এ বছর দু’দফায় ইতিমধ্যেই বন্যা হয়ে গিয়েছে। আরও এক দফা বন্যার আশঙ্কায় ভুগছেন এই এলাকার ৬৮টি গ্রামের মানুষ। গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টিতে এবং বর্ধমান-সহ আরামবাগ মহকুমার খালগুলি বেয়ে ‘গড়ান’ জলে ইতিমধ্যেই মাড়োখানা, রাজহাটি, পলাশপাই, নতিবপুর, চিংড়া প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ জায়গায় এখন একহাঁটু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। জনজীবন ফের সংকটে।
পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সংশয়ে আছে সব মহল। বিভিন্ন ক্লাব কমিটি জানিয়েছে, এখনও তারা পুজোর জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অনুমতিও নেয়নি। দুর্গাপুজো যে এ বছর জাঁকজমক করে করা যাবে না, তা এক রকম ধরেই নিয়েছেন ক্লাব কর্তারা। জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেই ঘাটতি পূরণ করা যাবে বলে মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তাঁরা।
২০০৭ এবং ২০০৯ সালেও বন্যায় অনেক ক্লাব ঘটা করে দুর্গাপুজো করতে না পেরে জগদ্ধাত্রী পুজোতেই গা ঘামিয়েছিলেন। অনেক ক্লাবে এই বছরগুলিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনাও হয়েছিল। প্রতি বছর বন্যায় তিতিবিরক্ত এই সব এলাকার পুজো কমিটিগুলি দুর্গাপুজোয় ক্রমশ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কায় থাকেন আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। রাজহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান সীতারাম দলুই, পলাশপাই ১ পঞ্চায়েতের প্রধান রবিন টঙ, নতিবপুরের প্রধান অনিল মণ্ডল, রাজহাটি ২-এর প্রধান অপর্ণা বেরারা জানালেন, এখনও কোনও পুজো কমিটিই অনুমতির জন্য আসেনি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলেই ক্লাবকর্তারা সংশয়ে ভুগছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, খানাকুল ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের গ্রামগুলিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি দুর্গাপুজো হয়। এগুলির মধ্যে বৈধ অনুমতিপ্রাপ্ত পুজোর সংখ্যা ১২-২০টি। এ বছর এখনও পর্যন্ত মাত্র ৪টি পুজো কমিটি অনুমতি নিতে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। সংখ্যাটা খুব একটা বাড়বে বলেও তাঁরা আশাবাদী নন।
পলাশপাই গ্রামের বারোয়ারি পুজোগুলির অন্যতম ‘তরুণ দল’ ক্লাবের সম্পাদক প্রসেনজিৎ কারক, নতিবপুরের ‘বাজার পল্লি সেবা সমিতি’র কর্মকর্তা উজ্জ্বল পাল, মধ্যারঙ্গ গ্রামের ক্লাবের ভানুদেব দলুই প্রমুখের বক্তব্য, পুজো উপলক্ষে বস্ত্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বাস্থ্য শিবির প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকার বন্যাপীড়িত মানুষের পাশে থাকার দায় থাকে আমাদের। প্রকৃতির বিরূপ পরিস্থিতি আমরা পুজোর উৎসব নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। সে রকম হলে জগদ্ধাত্রী পুজোয় আনন্দ-উৎসব করা যাবে বলে চিন্তা-ভাবনা আছে। খানাকুল ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় আগে জগদ্ধাত্রী পুজো ছিল হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। প্রশাসন ও স্থানীয় হিসেব মতো, গত কয়েক বছরে এই সংখ্যটা বেড়ে ২০টিতে দাঁড়িয়েছে।
এ বছর পুজোর অনুমতি নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় উষ্মা আছে ক্লাবগুলির। দমকল, পুলিশ, মাইক ব্যবহার প্রভৃতি ক্ষেত্রে ‘কড়াকড়ি’ পছন্দ নয় তাঁদের। অনুমতি পেতে হলে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “একই ছাদের নীচে যাতে অনুমতিগুলি মেলে তার বন্দোবস্ত ইতিমধ্যেই পুর এলাকার ক্ষেত্রে করা হয়েছে। ব্লকগুলির ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
মহকুমাশাসক জানান, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মতো, এ বছর নতুন কোনও পুজো কমিটিকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় বা জোর করে চাঁদা আদায় নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মাইক্রোফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|