ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ মহম্মদ আজহারউদ্দিনের তরুণ পুত্র আয়াজুদ্দিন পাঁচ দিন ধরিয়া মৃত্যুর সহিত লড়াই করার পর হারিয়া গেলেন। উনিশ বছরের এই তরতাজা তরুণ নিজেও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন। কয়েক দিন আগে ঈদের সময় পিতার উপহার দেওয়া ১০০০ সিসি-র একটি মোটরসাইকেল তীব্র গতিতে চালাইবার সময় তাঁহার দুর্ঘটনা ঘটে। পিছনে বসিয়াছিলেন খুড়তুতো ভাই আজমল, যিনি কিছু ক্ষণের মধ্যেই মারা যান। মর্মান্তিক একটি ঘটনা। অনুরূপ একটি ঘটনায় কলিকাতার এক উড়াল পুলে এক কিশোর পড়ুয়া সুপ্রিয়ও সম্প্রতি নিহত হয়। বেপরোয়া বাইক চালানোর ভ্রুক্ষেপহীনতা এমন ভাবে এ যুগের তারুণ্যকে গ্রাস করিয়াছে যে, ইহা যে কালান্তক হইতে পারে, নিজের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাইতে পারে, সে সম্পর্কে তাহারা সম্পূর্ণ উদাসীন। মনস্তাত্ত্বিকরা এই বেপরোয়া মনোভাবের পিছনে মোটরসাইকেলের গতিময়তাকে শনাক্ত করিয়াছেন। চার চাকার গাড়ির আচ্ছাদিত নিরাপত্তার মধ্যে সেই গতির দোলা ও ঝুঁকি লওয়ার দুঃসাহস থাকে না। তরুণরা দ্বিচক্রযানের খোলা, উন্মুক্ত, বিপজ্জনক গতিময়তাই পছন্দ করেন। নিশুতি রাত্রে কলিকাতা ও শহরতলির অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তাগুলিতে বিদ্যুৎ গতিতে যাতায়াতকারী এই বাইক-আরোহীদের নিত্য দেখা যায়। হলিউড ও বলিউডের তারকাদের বাইক-অ্যাডভেঞ্চারের দৃশ্যবলিও তাহাদের প্রভাবিত করে। এই বাইক-সংস্কৃতির হাত ধরিয়াই ক্রমশ পাঙ্ক, রক সঙ্গীত এবং গাঁজা-হেরোইনের অবসংস্কৃতিও তারুণ্যের চেতনাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিতে পারে। অনেকেই আবার এত কিছু সচেতন ভাবে না-জানিয়া বা না-ভাবিয়াই কেবল গতির আনন্দ, শিহরন ও বিপজ্জনকতা আনখশির অনুভব করিবার জন্যই দ্রুতগতির মোটরসাইকেলে ঝড় তুলিতে চাহে। এই অবিবেচনা কালান্তক হইতে পারে, যেমন মাঝে মাঝেই হয়।
সমাজ এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই অনিয়ন্ত্রণের অভ্যাস প্রতিহত করা। তাহার জন্য চাই যথাযথ আইন ও তাহার সুব্যবহার। নিহত আয়াজুদ্দিনের বাইকটির কোনও রেজিস্ট্রেশন ছিল না। তাঁহার এমনকী লাইসেন্সও ছিল না, যেমন ছিল না সুপ্রিয়েরও। মোটরসাইকেলের জন্য নিষিদ্ধ একটি রাস্তায় আয়াজুদ্দিন ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি ছুটাইতেছিলেন। আইনরক্ষকরা কী করিতেছিলেন? ১০০০ সিসি-র মোটরবাইকের যে গতি, ভারতে সেই গতিতে গাড়ি চালাইবার মতো সড়ক নাই। তবে কেন এ দেশে বিক্রয় করার কিংবা সওয়ার হওয়ার অনুমতি দেওয়া হইবে? বিদেশে পুলিশ, পূর্ত বিভাগ, সড়ক কর্তৃপক্ষ, যান নিয়ন্ত্রণ আধিকারিক সকলেই নিষ্ঠার সহিত নিজেদের কাজটুকু করেন। এখানে কেহই আপন দায়িত্ব পালন করিবে না, অথচ বিদেশি বাইক আমদানি করার ছাড়পত্র মিলিয়া যাইবে? আয়াজুদ্দিনের পিতা কেমন করিয়া তাঁহার ১৯ বছরের পুত্রকে একটি হাজার সিসি-র বাইক উপহার দিলেন, যাহার বাইক চালাইবার লাইসেন্স পর্যন্ত নাই? দেশবাসী এই জনপ্রিয় ক্রিকেট-তারকার বেদনার শরিক, কিন্তু চোখের জলে দায়িত্ব মুছিয়া যায় না। |