শতায়ু হওয়ার চাবিকাঠি কী?
মাইলের পল মাইল হাঁটা, পাথর ভাঙা আর সুপুরি চিবোনো। ব্যস ! আর কী চাই ! এর জোরেই, চার নাতি -নাতনি, উনিশ জন পুতি, আর সত্তর জন তস্য পুতির গুষ্টিকে সাক্ষী রেখে সিংহাসনে চাপলেন ১১১ বছরের বৃদ্ধা কিয়েমসিমা খারমাওলং। একশো বছরে পা দেওয়ার দিনটি তেমন ভাবে উদ্যাপিত হয়নি। কিন্তু ১১১ বছরে পা দেওয়ার দিনটিতে এই প্রবীণাই ‘টক অফ দ্য টাউন’। কাল, শিলং -এর লাবানে রীতিমতো ধুমধাম করে পালিত হল কিয়েমসিমাদেবীর জন্মদিন । সৌজন্য আসন্ন শারদোৎসব।
লাবানের স্থানীয় বিধায়ক সানবর সুলে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের পুজোয় উপহার দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো, লাবানে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলির তালিকা বানানোর কাজ শুরু হয়। তখনই ‘এপিক কার্ড’ থেকে সমীক্ষাকারী স্বেচ্ছাসেবকরা জানতে পারেন, ওই পাড়াতেই থাকেন ‘গ্রেট গ্র্যান্ড গ্র্যানি’ কিয়েমসিমা। সানবর বলেন, “যখন জানতে পারলাম কিয়েমসিমাদেবীর জন্মদিন শনিবার, তখন সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম, ওই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করার। খবর দেওয়া হল বৃদ্ধার পুরো পরিবারকে। বিধায়কদের দাতব্য তহবিল থেকে এই অতিপ্রবীণাকে মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।”
মুখে অজস্র বলিরেখা। কালের বহু ওঠাপড়া দেখা কিয়েমসিমা স্বপ্নেও ভাবেননি, তাঁর জন্মদিন নিয়ে এমন মাতামাতি হতে পারে। বয়সকালে, তিনি আর চারপাঁচজন স্থানীয় দরিদ্র মহিলার মতোই পাহাড়ি রাস্তায় পাথর বওয়া, ধস সারানোর কাজ করতেন। তিলে তিলে সংসার সামলে বিরাট পরিবার গড়ে তুলেছেন। তিনিই এখনও পরিবারের মাথা হয়ে ‘বনস্পতির’ ছায়া বিতরণ করেন। এতদিনে, রাস্তা বানানো ঠিকা কর্মী, সমাজপতিদের সমান আসনে আসীন হলেন। সম্মান পেতে কেটে গেল প্রায় নয় দশক।
|
কিয়েমসিমা দেবীকে সংবর্ধনা। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
কাল, লাবানের সেন্ট জন্স প্যারিস হলে শতাধিক পরিবার সদস্য ও সম সংখ্যক অভ্যাগত একত্রে হাততালি দিয়ে, ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ গেয়ে কিয়েমসিমা দেবীর জন্মদিন পালন করলেন। যে যেমন পেরেছেন নগদ অর্থ বা উপহার এনেছেন ‘মেই -ইয়েইদি’র (খাসি ভাষায় ঠাকুমা) জন্য। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তাঁর মেয়ে, নাতি -পুতি ও তারও পরের পুরুষ মিলিয়ে ৯৪ জনের পরিবার। বিধায়কের ঘোষণা অনুযায়ী, যতদিন বাঁচবেন, মাসে হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন কিয়েমসিমা। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গোটা বছরের জন্য একসঙ্গে ১২ হাজার টাকা তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিন পাওয়া নগদ অর্থের বেশির ভাগটাই স্থানীয় বন্যাপীড়িত পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেন মেই -ইয়েইদি’।
অনুষ্ঠানে কথা বলতে উঠে, কিয়েমসিমাদেবী আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন। উত্তরপুরুষদের উদ্দেশে বুড়িমার বাণী, ‘‘সত্যের পথে চলবে, পরিশ্রমে পিছপা হবে না, অন্যকে মন্দ কথা বলবে না।” বাড়তে থাকা জিনিসের দাম ও সমাজে বেড়ে চলা অপরাধের কথা ভেবে বেজায় চিন্তিত তিনি।
এই বয়সেও সচল, সক্ষম থাকার টোটকা জানার চেষ্টা হয়েছিল অনেক। কিন্তু, তেমন কোনও কঠোর খাদ্যবিধি মানেন না কিয়েমসিমা দেবী। আমিষ -নিরামিষ সব সমানতালেই খান। তবে, নেশা বলতে সর্বক্ষণ ‘কোয়াই’ বা সুপুরি চোষা। পাড়ার পুরোনো বাসিন্দাদের স্মৃতিচারণে বারবার ফিরে এসেছে পাহাড়ি পথে কিয়েমসিমাদেবীর মাইলের পর মাইল হাঁটা আর কঠোর পরিশ্রমের কথা। বৃদ্ধার মুখেও একই কথা, “সততা ও পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। লড়ে যাও। একদিন স্বীকৃতি মিলবেই।” |