অনশনের পাল্টা অনশন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে অনশনে বসে নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের বাইরে সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাতে চাইছেন, তখন তাতে কাঁটা দিতে নেমে পড়েছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। রসদ জোগাচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। তা যতটা রাজ্য রাজনীতির কারণে, ততটাই সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, আগামী বছর গুজরাত ভোটে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি -কে কিছুটা ধাক্কা দেওয়া গেলে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি -র মনোবলে তা প্রভাব ফেলবে। লোকসভা ভোটের আগে তাতে সুবিধা হতে পারে কংগ্রেসের। আর সেই কারণেই এখন মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে সাবরমতী আশ্রমের সামনের ফুটপাথে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শঙ্করসিন বাঘেলার নেতৃত্বে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব।
গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে আগামী বছর নভেম্বরে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার ১৪ মাস আগেই বাঘেলাকে নির্বাচনী প্রচার কমিটির সভাপতি ঘোষণা করে দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। গোধরা মামলা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও তার পর মোদীর অনশন ঘোষণা করার আগেই তা করেছেন সনিয়া।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তড়িঘড়ি তা কেন করতে গেলেন কংগ্রেস সভানেত্রী?
দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, গুজরাতের মানুষের অনেকের মধ্যেই পরিবর্তনের ভাবনা এসেছে। এটা ঠিকই যে নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের উন্নয়ন ত্বরাণ্বিত করেছেন। কিন্তু এটাও ঠিক যে কৃতিত্ব শুধু তাঁর একার নয়। গুজরাতের মানুষ সামগ্রিক ভাবেই উন্নয়নকামী। তা ছাড়া কংগ্রেসও উন্নয়নের প্রশ্নে বরাবর গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির অভিযোগও উঠছে। ন্যানো কারখানা পত্তন -সহ একাধিক ঘটনায় দুর্নীতি হয়েছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টও প্রকাশ হচ্ছে। সম্প্রতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর নির্বাচন কেন্দ্র গাঁধীনগরের পুরভোটে জিতে বোর্ড গঠন করেছে কংগ্রেস। তা ছাড়া যুব কংগ্রেসের সদস্য বাড়ানোর জন্য রাহুল গাঁধীর অভিযানেও যথেষ্ট সাড়া মিলেছে। এই সব বিক্ষিপ্ত ঘটনা কংগ্রেসকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে।
এই অবস্থায় কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, এখন থেকেই প্রচারে নেমে যদি বিধানসভা ভোটে মোদীকে কিছুটা ধাক্কা দেওয়া যায় এবং আগের তুলনায় কংগ্রেসের আসন বাড়ানো সম্ভব হয়, জাতীয় রাজনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে কারণে লোকায়ুক্ত নিয়োগের ঘটনা থেকে শুরু করে অনশন পর্যন্ত কোনও বিষয়েই এখন মোদীকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস।
মোদী যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে অনশনে বসেছেন, তখন আজও সবরমতী আশ্রমের ফুটপাথে বসে কপালের ঘাম মুছেছেন বাঘেলা। প্রশ্ন তুলেছেন, “মোদীর অনশনের জন্য রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে কেন ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে? তিনি নিজের বাড়িতে অনশনে বসলেন না কেন?” কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, “বাঘেলার অনশন মোদীর মতো ‘পাঁচতারা’ দেখনদারি বা বিপণনের অনশন নয়। এই অনশন সাধারণ মানুষের স্বার্থে, মহাত্মা গাঁধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত।” মল্লিকা সারাভাইরা যে ভাবে মোদীর অনশনের বিরোধিতায় মুখ খুলেছেন তা -ও কংগ্রেসের পক্ষে সুবিধার হচ্ছে। |
অনশন মঞ্চ থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে
হাত নাড়ছেন নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। ছবি: রয়টার্স |
বাঘেলা এর আগে বিজেপিরই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। দলের অন্যতম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক থাকার পাশাপাশি দলের রাজ্য সভাপতিও ছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদের অভিজ্ঞতাও তাঁর রয়েছে। আর এই মুহূর্তে রাজ্য কংগ্রেসের মধ্যে বাঘেলাই একমাত্র নেতা, গোটা রাজ্যে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বাঘেলাকে সামনে রেখে তাই রাজ্য কংগ্রেসের বিবদমান গোষ্ঠীগুলিও একজোট হয়েছে। বাঘেলার সঙ্গেই অনশনে বসেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অর্জুন মোড়ওয়াড়িয়া। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শক্তিসিন গোহিলও বাঘেলার মঞ্চে যোগ দিয়েছেন।
অন্য দিকে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে মোদীর অনশন নিয়ে চড়া সুরে সমালোচনা করেছেন একমাত্র দিগ্বিজয় সিংহ ও কংগ্রেস মুখপাত্ররা। কৌশলগত ভাবেই কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের দিয়েই মূলত মোদীকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ ভোটের এত আগে থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শক্তি খরচ করতে চায় না। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে ভোটের পরেই গুজরাত নিয়ে সক্রিয় হবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। |