বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে নেমে এলাম রাস্তায়
রিশেপসনে বসে টিভি দেখছিলাম।
হঠাৎ মনে হল চেয়ারে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনও বন্ধু ইচ্ছা করে পিছন থেকে চেয়ারটা ঠেলছে। পরক্ষণেই দেখলাম সামনের তাকে রাখা কাচের বাসনপত্রগুলো দুমদাম করে পড়তে শুরু করল। টিভিটাও দুলছে। গতিক ভাল ঠেকল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলো নিভে গেল। নিকষ অন্ধকারে কোনও রকমে হাতড়ে হাতড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। বাকি সহকর্মীরাও চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছেন।
ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি, ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছে। গোটা রিশেপসন তো বটেই, পাশের ঘরগুলোর দেওয়াল ভেঙেছে। তবে ভাগ্য ভাল, হোটেলে এই সময় কোনও পর্যটক ছিলেন না। না হলে যে কী হত জানি না! কারণ আমাদের কারও পক্ষেই উপরে ওঠা সম্ভব ছিল না। সিঁড়ির মুখটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উপরে কোনও পর্যটক থাকলে তাঁরা নামতে পারতেন না।
হোটেলের সব কর্মীরা মিলে হোটেল ছেড়ে বাইরে চলে এলাম। পাশের তিন তলা বাড়িটাও দেখলাম ভাঙছে। চারপাশে আরও বাড়ি ভাঙার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।
কিন্তু অন্ধকারে আর মানুষজনের চেঁচামেচিতে বিশেষ বোঝা যাচ্ছিল না। পিল পিল করে লোক যে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে, সেটা অবশ্য টের পাচ্ছি তখন। বাচ্চাদের কান্নাও কানে আসছে।
গ্যাংটক শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উপরে তিন মাইল এলাকায় আমাদের পাঁচ তলা হোটেল। মালিক ছিলেন না। আমরা ১৬ জন কর্মচারী সেখানে ছিলাম। পকেট থেকে মোবাইল বার করে বাড়িতে খবর দিতে গিয়ে বুঝলামও নেটওয়ার্কও নেই। অনেক বার রিডায়াল করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ল্যান্ডলাইনও বসে গিয়েছে। খাওয়াদাওয়ার কথা আর আমাদের মাথাতেই ছিল না। আশপাশের সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওষুধের দোকান পর্যন্ত বন্ধ। জামাকাপড়, জিনিসপত্র সব হোটেলের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। কিছুই নেওয়ার উপায় নেই। এর মধ্যে শুরু হল ছিঁচকাঁদুনে বৃষ্টি। ধীরে ধীরে জোর বাড়তে লাগল। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লোকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ছাতা পাবে কোথায়? কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না! অনেকে গাড়ির ভিতরে বসে রইলেন।
এ ভাবেই কেটে গেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মোবাইলে নেটওয়ার্ক পেলাম। প্রথমেই ভাগ্নেকে ফোন করি। বাড়ির লোকেরা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ভাগ্নের কাছ থেকে সবাই খবর পেয়েছেন। রাত ১২টার পরে কোনও রকমে ঝুঁকি নিয়েই হোটেলের রিশেপসনে ঢুকে পড়লাম। মোবাইলের আলোয় দেখলাম সব লন্ডভন্ড। হোটেলের রান্নাঘরে ঢোকারও উপায় নেই। এখানে এসে অন্তত বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচলাম।
তবে বিপত্তি যে বাড়বে, তা ভালই বুঝতে পারছি। কারণ মোবাইলের ব্যাটারির দম ফুরিয়ে আসছে। চার্জার কোথায় কে জানে।
অবশ্য থাকলেই বা কী লাভ হত? বিদ্যুৎই তো নেই!

লেখক: গ্যাংটকের হোটেলকর্মী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.