বৃষ্টিতে বিঘ্নিত কাজ, চিন্তিত শিল্পীরা |
বৃষ্টিই যেন অসুর হয়ে উঠেছে কুমোরটুলির শিল্পী মহল্লায়।
বুধবার নাগপুরের ছেলেরা ঠাকুর নিতে আসবে। চিন্তা তাই কুরে কুরে খাচ্ছে নিমাই পালকে। বললেন, “চার দশক ধরে প্রতিমা গড়ছি। এ বার যেন বেশি সমস্যায় পড়েছি। শ্রমিকের অভাব, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এ সব তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিরূপ প্রকৃতি।” ২৪টি দুর্গাপ্রতিমার বরাত নিয়েছেন নিমাইবাবু। দু’টো ফ্যান চালিয়ে প্রতিমার ভেজা মাটি শুকোনোর চেষ্টা করছেন ওঁরা। বললেন, “প্রতিমার শুকনো অংশে ছাতা পড়ে যাচ্ছে। রং করতে পারছি না বাকি অংশ ভেজা থাকায়।”
ক’দিন ধরে বিশ্বকর্মার মূর্তি গড়ার পরে রবিবার কুমোরটুলির শ্রমিকরা অনেকে ছুটি নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও সন্ধ্যায় প্রতিটি শিল্পীঘরে কাজ চলছিল পুরোদমে। শিল্পী কাঞ্চি পাল বলেন, “এ বার ১২৫টা বিশ্বকর্মার মূর্তি আমি করেছি। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গত বারের চেয়ে দুর্গার বরাতও পেয়েছি বেশি। ৩৭টা প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে এ বার। কিন্তু বৃষ্টি বড় চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।” দিদি অপর্ণা, মা অর্চনা, দাদা মলয় সবাই মিলে কাজে হাত লাগিয়েছেন। বৃষ্টির জন্য চিন্তায় পড়েছেন কাকলি পালও। এ বার তাঁর দায়িত্বে রয়েছে ১৮টি দুর্গাপ্রতিমা। |
ত্রিপলের আড়ালেই চলছে কাজ। রবিবার। রাজীব বসু |
অপূর্ব পাল এ বার গড়ছেন ৪২টি প্রতিমা। সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করা ভাবাচ্ছে তাঁকেও। সামনের রবিবার থেকে শুরু হবে উদ্যোক্তাদের প্রতিমা বিলির কাজ। তার মধ্যে সব শেষ হবে তো? নিয়ম করে প্রতি বেলায় আবহাওয়ার খবর শুনছেন টিভিতে। আবহাওয়া ভাল না থাকলে কাজ যে আরও পিছিয়ে যাবে!
কুমোরটুলি থেকে ৩৫ জনের দল নিয়ে সল্টলেকে প্রতিমা গড়তে গিয়েছেন মিন্টু পাল। ৫২ ফুট উঁচু দুর্গা, ৩০ ফুটের লক্ষ্মী-সরস্বতী আর ২৫ ফুটের কার্তিক-গণেশ। কাজ শুরু হয়েছিল মাস দুই আগে। প্রায় দু’লক্ষ টাকার ফাইবার গ্লাসের প্রতিমা। কুমোরটুলির ‘কারখানাতেও’ তৈরি করতে হচ্ছে বেশ ক’টি প্রতিমা। রোদ্দুরের অনুগ্রহ কম মেলায় চিন্তা ওঁর মুখেও।
প্রবীণ শিল্পীদের হিসেবে, প্রতিমা তৈরির তিন রকম বাঁশের দাম ছিল যথাক্রমে ৩৩ টাকা, ৬০ টাকা ও ৯০ টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৬০ টাকা, ৯০ টাকা ও ১৫০ টাকা। ১৪ তাল মাটির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২৬০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি ছিল মাথাপিছু ৫০০ ও ৮০০ টাকা। এ বার তা দাঁড়িয়েছে ১০০০ ও ১২০০ টাকায়। শিল্পীরা বলেন, “এখানে কাজ শিখে একটা বড় অংশ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন প্রতিমা তৈরির বরাত নিয়ে। তার ফলে দক্ষ শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হচ্ছে।
বৃষ্টি ভাবাচ্ছে পুজোর উদ্যোক্তাদেরও। সন্তোষপুরের এক দুর্গোৎসব কমিটির কর্তা পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “বৃষ্টিতে চারদিক কাদায় ভরে যাচ্ছে। শুকোতে না শুকোতেই ফের বৃষ্টি হচ্ছে।” একই সমস্যা উঠে এল দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবের কর্তা তথা বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসের কথাতেও। তিনি বলেন, “আমাদেরও কাজ শেষ করা নিয়ে চিন্তা। বৃষ্টির জন্য মাঝে মাঝেই বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এতে খরচও বেড়ে যাবে।” মণ্ডপশিল্পীদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার তিনটি বড় পুজোর মণ্ডপ সাজানোর দায়িত্বে অমর সরকার। বললেন, “বাইরের কাজ মার খাচ্ছে বৃষ্টির জন্য। চিন্তা তো হবেই।” আর এক শিল্পী ভবতোষ সুতারের কথায়, “এখনও পর্যন্ত কোনওক্রমে সামাল দিয়েছি। ভয় হচ্ছে আগামী দিনগুলো নিয়ে। পুজোয় নাকি নিম্নচাপ হতে পারে! দেখা যাক!” |