পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসে ধৃত ৪
মাদক খাইয়ে লুঠ রুখতে ট্রেনে নজর ক্যামেরার
তর্ক নজর রাখছে গোপন ক্যামেরা। জানতে দেওয়া হয়নি দুষ্কৃতীদের।
আর তাতেই কেল্লা ফতে। দূর পাল্লার ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় যারা মাদক খাইয়ে যাত্রীদের মালপত্র ছিনতাই করে, ভিডিও-ছবি দেখে রবিবার ধরা হয়েছে তাদেরই একটি দলকে। এবং খাস কলকাতাতেই।
দূরের ট্রেনে মাদক খাইয়ে যাত্রীদের মালপত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরেই। মাদকের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ায় মারাও গিয়েছেন বেশ কয়েক জন যাত্রী। রেল বোর্ড সূত্রের খবর, তথ্য ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে বিহারে অর্থাৎ পূর্ব-মধ্য রেলের মোগলসরাই, দানাপুর, পটনা, গোমো ও গয়া এলাকায়। যাত্রীদের সচেতন করতে পথনাটিকা, বিজ্ঞাপন, স্টেশনে স্টেশনে ঘোষণার পাশাপাশি ট্রেনের কামরায় ছবি সেঁটে প্রচার করেছে রেল। তা সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। ধরা যাচ্ছিল না দুষ্কৃতীদের।
কলকাতা স্টেশনে ধৃত চার জন। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
অবশেষে দুষ্কৃতীদের হদিস পেতে গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার পরেই দূরের ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় যাত্রীদের ভিডিও-ছবি তুলে রাখার কাজ পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করে দেয় রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ)।
গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে কী ভাবে?
আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত দু’ভাবে এই কাজটা করা হচ্ছে।
• প্ল্যাটফর্মে রাখা সিসিটিভি-র ক্যামেরার বর্তমান অবস্থান কিছুটা অদলবদল করে ট্রেনের বিভিন্ন কামরার দরজা দিয়ে ওঠানামা করা যাত্রীদের ছবি ধরে রাখা হচ্ছে।
• সিসিটিভি-র আওতার বাইরে থাকা ট্রেনের বিভিন্ন কামরা যাত্রীদের ছবিও গোপনে তোলা হচ্ছে ছোট ভিডিও ক্যামেরায়।
রেল সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য শ’খানেক ছোট ক্যামেরা আনা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আরপিএফ-কেও। ওই বাহিনীর জওয়ানেরা অসংরক্ষিত কামরায় ওঠার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ছবি এমন ভাবে তুলছেন যে, যাত্রীরা টেরও পাচ্ছেন না। এক রেলকর্তা বলেন, “অনেক সময় আরপিএফের জওয়ানেরা যাত্রী সেজে ব্যাগের মধ্যেই ক্যামেরা লুকিয়ে রাখছেন। ব্যাগটি এমন ভাবে রাখা হচ্ছে, ট্রেনে ওঠার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেক যাত্রীর ছবিই ক্যামেরায় ধরা পড়ছে।”
প্রথম সাফল্য এল কী ভাবে?
১২ সেপ্টেম্বর কলকাতা স্টেশনে এই ধরনেরই একটি গোপন ক্যামেরায় পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসের অসংরক্ষিত কামরার যাত্রীদের ছবি তোলা হয়েছিল। সেই রাতেই ওই ট্রেনের এক যাত্রীকে মাদক খাইয়ে তাঁর জিনিসপত্র লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। ১৩ সেপ্টেম্বর ছাপরায় ওই যাত্রীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে রেল পুলিশ। তার পরে ভিডিও ফুটেজ ছাপরায় নিয়ে গিয়ে ওই যাত্রীকে দেখানো হয়। তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়, সে-দিন যাত্রীদের মধ্যে কারা তাঁর সঙ্গে ভাব জমিয়ে খাবার খাইয়েছিল। ওই যাত্রী ছবি থেকে কয়েক জনকে চিহ্নিত করেন।
১৫ সেপ্টেম্বর ওই ট্রেনে ফের একই ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়া যাত্রীকে সে-দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। রেল পুলিশ জানতে পারে, দু’টি ক্ষেত্রেই একই দল দুষ্কর্ম করেছে। দলে ৪-৫ জন ছিল। যাত্রীদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তারা দুই যাত্রীকেই বিস্কুট খেতে দেয়। তার পরেই যাত্রী সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
কী ভাবে ধরা হল অভিযুক্তদের? রেল পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সকালে পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেস ছাড়ার আগে অসংরক্ষিত কামরার গেটের সামনে লম্বা লাইন পড়ে। সেই লাইনে গণ্ডগোল হচ্ছে শুনে আরপিএফ সেখানে গিয়ে দেখে, যাত্রীদের লাইনে ওই দুষ্কৃতীরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের চার জনকে ধরা হয়। ধৃতদের নাম যোগীন্দর শাহ, মোহন শাহ, সুরেন্দর শাহ ও সুরেশ শাহ। বয়স ৩৪-৩৮। যোগীন্দরের বাড়ি বিহারের মোতিহারি এলাকার সোনাওয়াল গ্রামে। মোহন, সুরেশ ও সুরেন্দরের বাড়ি বিহারেরই বেতিয়ার মাচারাগাওয়া গ্রামে। জেরার মুখে ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে, দলের পাণ্ডার নাম সাধন। এ দিন ওই স্টেশনে সাধনও ছিল। পুলিশ সঙ্গীদের ধরছে দেখেই সে চম্পট দেয় বলে ধৃতেরা পুলিশকে জানিয়েছে। শিয়ালদহ আরপিএফের সিনিয়র ডিভিশন সিকিওরিটি কমিশনার মুনাওয়ার খুরশিদ বলেন, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা বিস্কুটের মধ্যে মাদক পাওয়া গিয়েছে। বিস্কুটগুলিতে ক্রিম মাখানো ছিল। আরপিএফ জানিয়েছে, ওই ক্রিমের সঙ্গেই মাদক মিশিয়ে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। শুধু বিস্কুট নয়, যাত্রীদের বোতলে জল ভরে তাতেও ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দিত দুষ্কৃতীরা। ধৃতদের কাছে ৫৩ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল এবং একটি ঘড়ি পাওয়া গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.