আচমকা দুলে উঠল পায়ের তলার মাটি, ত্রস্ত ছুটির শহর
স্মরণকালের মধ্যে এমন সন্ধ্যা দেখেনি কলকাতা। এ যেন এক অচেনা আবহ।
রবিবারের সন্ধ্যাবেলা শপিং মল ও দোকানগুলোয় চলছিল পুজোর কেনাকাটা। ছুটির সন্ধ্যায় অনেকেই আবার ঘরে বসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। এই সব কিছুকে উল্টোপাল্টা করে দিল কয়েকটা মুহূর্তের দুলুনি ও আতঙ্ক। এই আতঙ্ক গ্রাস করল গোটা কলকাতাকে। স্মরণকালের মধ্যে টের পাওয়ার মতো ভূমিকম্প কলকাতায় হয়নি।
কোনও পাড়ায় শঙ্খধ্বনি শোনা গিয়েছে। কেউ আবার রাস্তায় নেমে উলু দিতে শুরু করেছেন। কলকাতার বহুতল আবাসনগুলির বাসিন্দারা অনেকেই বাইরে নেমে আসেন। শপিং মলগুলো দ্রুত ফাঁকা হতে শুরু করে। রাস্তাঘাটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সব মিলিয়ে কলকাতার চেনা রবিবার একেবারে পাল্টে যায়।
দক্ষিণ কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মল লাগোয়া একটি বহুতলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ফাটল ধরেছে দেওয়ালে। উল্টোডাঙার পুলিশ আবাসনে। রবিবার, ভূমিকম্পের পরে। অর্কপ্রভ ঘোষ
ওই বহুতলের বাসিন্দারা জানান, নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের বলেন, ফের ভূমিকম্প হতে পারে। তাঁরা যেন নীচে নেমে আসেন। এই আতঙ্কেই ওই বহুতলের বাসিন্দারা সবাই নীচে নামতে থাকেন। ওই বহুতলের ২০ তলার এক বাসিন্দা বলেন, “সন্ধ্যাবেলা সবে চা খেয়ে টিভি দেখতে বসেছি। চেয়ারটা কেমন কেঁপে উঠল। বুঝলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। ভয়ে নামতে গিয়ে দেখি লিফ্ট পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ অনেকেই পড়িমড়ি করে লিফ্টে নীচে নামছে। দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসি।”
এ দিকে উল্টোডাঙা পুলিশ আবাসনে ভূমিকম্পের জেরে ফাটল ধরেছে বলে জানান আবাসিকরা। ওই বাসিন্দারা জানান অনেকেরই খাট দুলে ওঠে। কারও চেয়ার নড়ে যায়। অনেকেই বাইরে নেমে আসেন। আসে দমকল বাহিনী। আবাসনের একটি ফ্ল্যাটের সিঁড়ির প্লাস্টার খসে পড়ে আছে দেখা যায়। ফের ভূমিকম্পের আশঙ্কায় অনেকেই ঘরে ঢুকতে চাইছিলেন না। ঢাকুরিয়ার এক ওয়েব ডিজাইনার শ্রীময়ী ঘোষ কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখি চেয়ারটা নড়ছে। মাথা টলে যায়। প্রথমে ভূমিকম্প হয়েছে বুঝতে পারিনি। পরে ছুটে বাইরে চলে আসি।” বালির বাসিন্দা মধুরিমা রায় বলেন, “খাটটা যেন দুলে উঠল। বাইরে চিৎকারে বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। শাঁখ বাজানোর আওয়াজও পেলাম।” সল্টলেকের একটি শপিং মলের রেস্তোরাঁয় খেতে আসা এক মহিলা বলেন, “ছুটির দিন পরিবারকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে এসেছিলাম। হঠাৎ দেখলাম টেবিলে কাচের প্লেটটা নড়ে উঠল। চিৎকার চেঁচামেচিতে বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হয়েছে।”
আমার হিয়া কাঁপে

সুপ্রিয়া চৌধুরী

তিলোত্তমা মজুমদার
বারান্দায় বসে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ চারদিক বেশ কেঁপে উঠল। কী হচ্ছে বোঝার আগেই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। মনে পড়ে, ছোটবেলায় যখন বার্মায় থাকতাম, সেখানে প্রায়ই এমন ভূমিকম্প টের পেতাম। তবে সেখানে ঘনঘনই এমন হত বলে আতঙ্কটা খানিক গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় তো বেশি ভূমিকম্প হয় না। তবে আজকেরটা বেশ টের পেয়েছি। চায়ের জল চাপিয়ে দেখি বার্নারে আগুনটা হঠাৎ বেশি হলুদ হয়ে গেল। তার পরেই দেখি সসপ্যানের জলে অদ্ভূত ভাবে ঢেউ খেলছে। তাতেই বুঝলাম যে ভূমিকম্প হচ্ছে। বইয়ে পড়েছিলাম, ভূমিকম্পের সময়ে জলে এমনটা হয়। ছোটবেলায় উত্তরবঙ্গে অনেক বার ভূমিকম্প পেয়েছি। সেখানে ঘর-বাড়ি সব দুলত। বাবা-মা আমাদের কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতেন সে সময়ে।


সব্যসাচী চক্রবর্তী

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
আজকেরটা টেরই পাইনি। স্ত্রী মিঠু যখন বলল, তখন শেষ হয়ে গিয়েছে। কলকাতায় আগে কয়েক বার ভূমিকম্প টের পেলেও সব চেয়ে ভয়ের স্মৃতি দিল্লিতে। সপরিবার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। হঠাৎ চার দিক এত কেঁপে উঠল যে, সবাই নীচে নেমে এলাম। ভূমিকম্প হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। তার তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, দিল্লিতে বসেও টের পাই। চেয়ারে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি, দুলছি। ভাবলাম, দোলাচ্ছে কে? পাশ থেকে স্ত্রী বললেন, তাঁর চেয়ারও দুলছে। বুঝলাম ভূমিকম্প। কলকাতায় তো এ রকম বড় একটা হয় না। ছেলেবেলায় দু’এক বার শহরে ভূমিকম্প পেয়েছি। আর পেয়েছিলাম দিল্লিতে, বছর দশেক আগে। সে বার হোটেল থেকে রাস্তায় নেমে এসেছিলাম সকলে। এ বার তেমন কিছু হয়নি।


সুব্রত পাল
পুণে এফসি দলের সঙ্গে কলকাতায় খেলতে এসে উঠেছি চৌরঙ্গির হোটেলে। টিভিতে খেলা দেখছিলাম।
হঠাৎ মেঝে, টিভি, জানলা সব কেঁপে উঠল। আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসি। দেখি, দলের সব
ফুটবলারই বেরিয়ে এসেছে। জীবনে এই প্রথম ভূমিকম্প টের পেলাম। একেবারে অন্য রকম অনুভূতি।

সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তির বহুতল অফিসের কর্মীরাও অনেকেই পড়িমড়ি করে বাইরে চলে আসেন। এক কর্মী বলেন, “আমি কিন্তু প্রথমে বুঝতে পারিনি। তবে আমার সহকর্মীরা ভূমিকম্প হচ্ছে বলে চিৎকার করে ছোটাছুটি শুরু করতেই আমিও বাইরে বেরিয়ে আসি।” ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরেও আতঙ্কিত মানুষজন ঘরে ঢুকতে চাননি। শপিং মলগুলোও আর সে ভাবে জমেনি। অনেককেই দেখা যায় রাত হওয়ার পরও রাস্তায় বা বাড়ির সামনে মাঠে জটলা করে বসে রয়েছেন। কলকাতার হাসপাতালগুলোতেও বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু হাসপাতালে রোগীরাও আতঙ্কিত হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে আসেন। চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানান, খাঁচার পাখিরা ডাকাডাকি শুরু করে। ডানা ঝাপ্টানোর আওয়াজ পাওয়া যায়। ভবানীপুরের একটি আসবাবপত্রের দোকানে গিয়ে ভূমিকম্প টের পান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি ভবানীপুরে ছ’তলা একটি আসবাবের দোকানে ছিলাম। হঠাৎ টের পাই ঘরের আলোগুলো কেমন যেন কাঁপছে। বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। এর পরেই আমি বিভিন্ন জায়গায় খবর নিতে শুরু করি। এখনও পর্যন্ত কলকাতায় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.