প্রথম তিনি তৈরি করেন গণেশ। সেটি ঠিকঠাক হলে তবেই অন্য দেবদেবী। এ বারও সেই সংস্কার মেনেই বর্ধমান শহরের টিকরহাটে তিনি তৈরি করছেন প্রতিমা। উপকরণ আসল টাকার প্রতিলিপি! শিল্পী দিলীপকুমার বসাক।
তাঁর স্টুডিওতে তৈরি হচ্ছে ২০ বর্গফুটের দুর্গা, ৬ বর্গফুটের কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী যা এ বার শহরের টিকরহাট সর্বজনীন মণ্ডপের আকর্ষণ হতে চলেছে। সাবেকি আর বর্তমানের এক থেকে পাঁচশো টাকার নোটের প্রতিলিপি করাতেই খরচ হয়েছে দশ হাজার টাকা। সপরিবার দেবীর শরীরে কোনও আলাদা রং নেই। যেখানে যেমন দরকার, সেখানে সেই ধরনের টাকার রঙিন অংশ বসিয়ে এই প্রতিমা গড়ছেন দিলীপবাবু। |
শিল্পীর প্রতিমা তৈরির বিশেষত্ব, উপকরণে নতুন চমক। কখনও টিনের ফেলে দেওয়া জিনিস, পাইপ দিয়ে তো কখনও ডিমের খোলা দিয়ে তৈরি করেন প্রতিমা। কখনওই তাঁকে রঙের ব্যবহার করতে দেখা যায় না। দিলীপবাবু বললেন, “ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে এক দিন বাক্স খুলে দেখি, তাতে প্রচুর পুরনো ও নতুন আমলের টাকা পড়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে তার পরিমাণ সাড়ে চারশোটি। তখনই মাথায় আসে এই টাকার প্রতিলিপি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরির খেয়াল।” দিলীপবাবুর বউদি, অঞ্জলিদেবী স্থানীয় কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনের প্রাক্তন ছাত্রী। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই দিলীপবাবু কাজ শুরু করেছেন।
সকাল থেকেই তাঁর দেখা মিলবে বাড়ির ছাদের স্টুডিওতে। চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে প্লাইয়ের বোর্ড, থার্মোকল, জরি, পরচুলা। মেঝেতে ছড়ানো টাকার বিভিন্ন রঙের প্রতিলিপি। তাঁর কথায়, “প্রতি বছর নতুন কিছু দিয়ে প্রতিমা তৈরি করি। কখনও কখনও মিলে যায় পুরস্কারও।”
যদিও গত দু’বছর একটিও প্রতিমা তৈরি করতে পারেননি তিনি। কিছু পারিবারিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। এ বার সে সব মিটতেই আবার শুরু। টানা এক বছর শনি, রবিবার তিনি মূর্তি গড়েছেন। মাঝে এক বার নিজের ক্ষুদ্র সেচ দফতর থেকে তিন মাসের ছুটিও নেন। এখন টানা ১৬ দিন ছুটি নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন তিনি।
কাজ প্রায় শেষের মুখে। তার পরেই দর্শকদের মন মাতাতে মণ্ডপে যাবে টাকার প্রতিমা। |