পুজো মানেই নতুনের ছোঁয়া। ফ্যাশনের ছড়াছড়ি। মাস দু’য়েক আগে থেকেই পুজোর বাজারের ছোঁয়া লেগে গিয়েছে কাটোয়া শহরে। ব্যবসায়ীরাও এক কথায় স্বীকার করেছেন, দাম বাড়লেও বিক্রির হার বেশ ভাল এ বছর।
এত তাড়াতাড়ি পুজোর বাজার শুরু হওয়ার কারণ কী? ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্যান্য বছরে পুজোর দিন ১৫-২০ আগে বাজার ‘টপে’ ওঠে। সে সময় ভিড়ের চোটে পছন্দসই দোকানে বাজার করতে পারেন না ক্রেতাদের একাংশ। জিন্স থেকে শাড়ি কোনও কিছুরই স্টক দেখার সুযোগ হয় না। সে জন্য এ বার ঈদের বাজারের সঙ্গেই পুজোর বাজার শুরু করে দেন তাঁরা। কারণ, স্টক ফুরনোর আগেই সারতে হবে পুজোর বাজার। |
চিরাচরিত তাঁতের শাড়ি, ঢাকাই জামদানি, এ সব তো আছেই। তার সঙ্গে এ বার যোগ হয়েছে খাদি সিল্ক, নিমজুড়ি ও লাচা শাড়ি। লাচা শাড়ির অভিনবত্ব, এর কুঁচি করাই থাকে। দোকানের কর্মীরা জানালেন, ক্রেতারা এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকটাই। গত বছর যেখানে শাড়ি বিক্রির গড় দাম ছিল ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। এ বছর সেখানে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দু’হাজার টাকার আশেপাশে। দোকানের কর্মী সাধনকুমার ঘোষ, অশোক দেবনাথেরা বলেন, “দামটা এ বছর কোনও বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। দরকার শুধু ভাল শাড়ির। ভাল শাড়ি পেলেই কিনে নিচ্ছেন তাঁরা।” কাটোয়া শহরের গাঁধী মার্কেটে একটি বস্ত্রবিপণির মালিক গোপাল গুপ্ত তো বলেই ফেললেন, “এ বার পুজোর আগে সাড়ে তিন হাজার টাকার উপরেও শাড়ি বিক্রি করেছি।”
শিশু থেকে টিন এজার, সবার মধ্যেই এ বার ‘পাগলু’র চাহিদা ব্যাপক। ব্যবসায়ীরা জানালেন, টুপি দেওয়া টি শার্ট এবং সুপার নেট লাগানো চুড়িদারের জন্য কিশোর-কিশোরী নাকি পাগল। চাহিদা রয়েছে তসর সিল্ক চুড়িদারেরও। এ সবের সঙ্গে চাহিদায় উপরের দিকে উঠে এসেছে জিন্স ও টি-শার্ট। কাছারি রোডের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী সমীর দেবনাথ বলছিলেন, “মহিলাদের জিন্স এত বিক্রি হয়েছে, স্টক শেষ হয়ে যায়। ফের আনাতে হয়েছে। জিন্সের চাহিদা এত বাড়বে আগে বোঝা যায়নি।” টি-শার্টের রঙ ও ডিজাইনের এত বৈচিত্রও আগে কখনও চোখে পড়েনি। বিক্রেতাদের দাবি, নামী কোম্পানির অর্থাৎ ব্র্যান্ডেড পোশাক কেনার আগ্রহ বেড়েছে এলাকায়। বাজার করে বেশ খুশি শহরের পঞ্চাননতলার বাসিন্দা মিনতি মোদক। বললেন, “মেয়ের জন্য জিন্স, টপ আর কামিজ কিনেছি তিনটে। হাজার পাঁচেক খরচ হয়েছে।”
শুধু মহিলা নয়। কাটোয়ায় এ বার পুরুষেরাও বেশ ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠেছেন। টি-শার্ট, জিন্স তো রয়েইছে, তার সঙ্গে দেদার বিকোচ্ছে ‘ফুলস্লিভ জামা’। বিক্রেতাদের দাবি, নবীন প্রজন্মের ছেলেদের উজ্জ্বল রঙের দিকেই বেশি ঝোঁক। শহরের গোয়েঙ্কা মোড়ের কাছে একটি বস্ত্রবিপণির মালিক লাল্টু শেখের কথায়, “নামী ব্র্যান্ডের চাহিদা এত বেড়েছে যে বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীরা নামী ব্র্যান্ড রাখছেন।” নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ী বিজয় সাহা যেমন বলছিলেন, “ক্রেতা ধরে রাখতে গেলে নজরকাড়া ব্র্যান্ডের পোশাক রাখতেই হবে।”
এ বছর শহরের সব বিক্রেতা এক মত। গত বছরের চেয়ে এ বছর পুজোর বাজার অনেক বেশি জমজমাট। তবে তাঁদের আক্ষেপ, ধানের দাম থাকলে গ্রামের মানুষেরও বাজার জমে উঠতে পারত। |