দাম বেড়েছে মাটি থেকে পাটের, সমস্যায় শিল্পীরা
|
রাজশেখর মুখোপাধ্যায় • দুর্গাপুর |
জিনিস-পত্রের দাম বাড়ছে বছর-বছর। সেই হারে বাড়ে না প্রতিমার দাম। সাহায্যও মেলে না কোনও তরফে। তাই পরের প্রজন্ম তাঁদের পেশায় আসবে কি না, সে ব্যাপারে সন্দিহান দুর্গাপুরের গ্যারাজ মোড়, আমরাই, স্টেশন রোড, বেনাচিতি, ভিড়িঙ্গির মৃৎশিল্পীরা।
শিল্পীরা জানান, প্রতিমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব কাঁচা মালেরই এ বার দাম বেড়েছে। ট্রাক্টর প্রতি মাটির দাম ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০০ টাকা। প্রতি বোঝা খড় ৩৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা। বাঁকা বাঁশ ৬৫ টাকা থেকে ৮৫ টাকা ও সোজা বাঁশ ৮০ টাকা থেকে প্রায় ১১০ টাকা হয়েছে এ বার। কেজি প্রতি সুতো ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫-৭০ টাকা। ডাকের সাজ সেট পিছু বেড়েছে প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। কাপড় থান পিছু বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ২৫ টাকা। পাটের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৫ টাকা। এর উপরে রয়েছে শ্রমিকের খরচা। এ বার দৈনিক শ্রমিক পিছু প্রায় ২০০ টাকা খরচ বেড়েছে বলে দাবি মৃৎশিল্পীদের।
তবে উপকরণের দাম এত বাড়লেও সেই অনুযায়ী বাড়েনি প্রতিমার দাম। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কাঁচা মালের দাম এ বার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ গত বার যে প্রতিমার দাম ছিল ২৫ হাজার টাকা, এ বার তা খুব বেশি হলে ৩-৫ হাজার টাকা বেড়েছে। প্রবীণ মৃৎশিল্পী বলরাম পাল জানান, “আগে বাজারে দাম বাড়লে ঠাকুরের দামও বাড়ত। এখন আর তা হচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “পুরসভার তরফে আমাদের অবস্থার দিকে কোনও দিন নজর দেওয়া হয় না। কেউ কোনও খবরই রাখে না।” একই আক্ষেপ গ্যারাজ মোড়ের ভূপেন দে, রকি পালের। দুর্গাপুরের এক সময়ের নামী মৃৎশিল্পী আশুতোষ পালের নাতি রকিবাবু জানান, পরিবারের পরম্পরা বজায় রাখতে অন্য চাকরি ছেড়ে এই পেশায় এসেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “এই শিল্পের জন্য সরকার বা পুরসভা, কেউ ভাবে না। তাই এই পেশাও ছাড়ার কথা ভাবছি।” জেলার বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজোর জন্য প্রতিমা তৈরি করেন অরুন পাল। তাঁর কথায়, “যথেষ্ট খরচ ও পরিশ্রম করেও ফল পাচ্ছি না।” বলরামবাবু, রকিবাবুরা জানান, তাঁদের জন্য কোনও বিমা বা ঋণের ব্যবস্থা নেই। কাজ করার জন্য ভাল জায়গাও নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলে পথে বসার পরিস্থিতি হয়।
পুরসভার ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান জানান, অতীতে বেশ কয়েক জনকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। পরে আর কেউ এ জন্য তাঁদের কাছে আসেননি। তাঁর আশ্বাস, “শিল্পীরা নিজেদের অসুবিধার দিকগুলি জানালে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে।” |