পাট চাষিদের বিক্ষোভে সোমবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার জলঘর এলাকা। বেলা বাড়তেই ফড়েরা পাটের দাম কমিয়ে দিলে এ দিন স্থানীয় হাটে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কয়োকশো পাট চাষি। রাস্তায় পাট ফেলে ক্ষুব্ধ চাষিরা ফড়ে ও আড়তদারদের দোকানে হানা দেয়। গ্রিলের তালা ভেঙে মজুত পাট বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুহুর্তের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা জলঘর এলাকা। এক আড়তদারের ট্রাক বোঝাই পাট নামিয়ে পোড়ান হয়। ভাঙচুর চলে ফড়েদের দোকানে। পুলিশের সামনে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। তাতে কয়েকজন সামান্য জখম হন। ঘটনার পরে চাষিরা প্রায় ৩ ঘন্টা পথ অবরোধ করে। বালুরঘাট ও তপনের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বালুঘাটের বিডিও পঙ্কজ তামাং ঘটনাস্থলে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করার পরে দুপুর আড়াইটা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ এক চাষিকে আটক করে। |
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক নারায়ণ সরকার এদিনের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে যা বলার মহকুমাশাসক বলবেন।” বালুরঘাটের মহকুমাশাসক দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পাটের দাম তো ঠিক ছিল। কেন এমন হল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেসিআই এবং অন্য সংস্থাগুলি পাট কিনতে নেমেছে কিনা সেটাও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিন ঘটনার শুরু সকাল ১১টা নাগাদ। বালুরঘাট ও তপন ব্লকের চাষিরা ভুটভুটি, ঠেলা, গরুর গাড়িতে বোঝাই করে পাট নিয়ে জলঘর হাটে ভিড় করে। তপন ব্লকের পাট চাষি কিষাণ হেমব্রম, বালুরঘাটের বোয়ালদার বিজয় পাহান জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত ফড়েরা প্রতি ক্যুইন্টাল পাট ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় কিনেছে। সকাল ১০টার পরে পাটের দাম ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় নেমে যায়। ওই ঘটনার পরে চাষিরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে।
চাষিরা প্রথমে ফড়েদের কাছে অনুরোধ করে যে দাম শুরুতে ছিল সেই দামেই যেন পাট কেনা হয়। এক ধাক্কায় ক্যুইন্টাল প্রতি দাম ৫০০ টাকা কমানো হলে পাটের উৎপাদন খরচ উঠবে না। অভিযোগ, ফড়েরা তাঁদের অনুরোধ গুরুত্ব দেয়নি। এর পরেই গোলমাল শুরু হয়ে যায়। বালুরঘাট থানা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে জলঘর এলাকায় আইসি শান্তনু কোঁয়ার ১ জন সাব ইন্সপেক্টার এবং ৪ জন কনস্টেবল নিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ পৌছে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কয়েকশো চাষির বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফড়েরা হাট ছেড়ে পালিয়ে যায়। এর পরে দুটি বড় ভ্যান ভর্তি সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান বালুরঘাটের বিডিও। যদিও তার আগেই ক্ষুব্ধ চাষিরা তালা ভেঙে দোকান থেকে ফড়েদের পাট রাস্তায় ফেলে পুড়িয়ে দেয়। আড়তদার জ্যোতিষ অধিকারী বলেন, “আগের দামে পাট কিনে ট্রাকে তুলেছিলাম। সেই সময়ে বিক্ষোভকারীরা ট্রাক থেকে প্রায় ৪ ক্যুইন্টাল পাট নামিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তপনের বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, “দোকান ভেঙে প্রায় ১ ক্যুইন্টাল পাট পুলিশের সামনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” এ দিনের ঘটনার জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। জেলা কিসান কংগ্রেস জেলা সম্পাদক রঘুনাথ রায় এবং সংযুক্ত কিষাণ সভার নেতা ক্ষিতীশ সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে পাটের দাম নিয়ে সমস্যা চলছে। প্রশাসনের কর্তাদের ওই সমস্যার কথা অনেক আগে জানানো হয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে জলঘর হাটের ঘটনা হত না।” |