চিকিৎসকের অভাব। অভ্যন্তরীণ বিভাগে রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন মুরারই গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা।
মুরারই ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তথা মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএমওএইচ প্রবীর মাড্ডি বলেন, “শনিবার ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য-আধিকারিক-সহ জেলাশাসককে এ ব্যাপারে ফ্যাক্স মারফৎ জানানো হয়েছে। তাঁদের তরফ থেকে সমস্যার সুরাহার ব্যাপারে কোনও সদুত্তর মেলেনি। ফের তাঁদেরকে হাসপাতালের অবস্থা এই অবস্থা সম্পর্কে জানানো হবে।”
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিকের দাবি, “পরিষেবা দেওয়ার জন্য ওই হাসপাতালে যথেষ্ট ডাক্তার আছেন।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই হাসপাতালে সাত জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন তিন জন। তাঁদের মধ্যে এক জন গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর ফলে দু’জন চিকিৎসককে সকাল ৭টা থেকে ১২ ঘণ্টা করে রাত দিন কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে রোজ গড়ে ৫০-৬০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এই অবস্থায় জরুরি বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগ দু’জন চিকিৎসকের পক্ষে চালানো সম্ভব নয় বলে প্রবীরবাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি নিজেই মুরারই ১ ব্লকের অধীন চাতরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। সেখানে আমাকে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া, বিএমওএইচ হওয়ার জন্য আরও অনেক কাজ করতে হয়। এ সব সামলে মাঝে মধ্যে আমাকেও মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে রাতেও থাকতে হয়।”
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মূল প্রবেশদ্বারে, জরুরি বিভাগ-সহ হাসপাতাল চত্বরের দেওয়ালে এবং ব্লক অফিসেও ওই বিজ্ঞপ্তির কথা ছাপা অক্ষরে সাঁটানো রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিভাগে রোগী ভর্তি না করার আবেদন জানানো হলেও জরুরি বিভাগে পরিষেবা চালু রয়েছে। প্রবীরবাবু জানান, রাজগ্রাম হাসপাতালে ২ জন, চাতরা হাসপাতালে ১ জন এবং মুরারই হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসক, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও অভাব আছে। বর্তমানে মুরারই হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ৪০ জন রোগী ভর্তি আছেন। দু’জন চিকিৎসক সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মুরারই-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের প্রদীপ ভকত বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে দীর্ঘ দিন ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এসেছি। এলাকার বিধায়ককেও জানানো হয়েছে।” মুরারই-১ বিডিও কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মাস তিনেক ধরে ওই হাসপাতালে চিকিৎসক সংক্রান্ত সমস্যা চলছে। শুক্রবার বিএমওএইচ সমস্যার কথা জানান। আমি মহকুমাশাসক মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।”
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মল্লিক বলেন, “আমি কোনও নির্দেশ বা আদেশ দিইনি। বিএমওএইচ এরকম কোনও বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন না। তাঁকে শো-কজকরা হবে।” এ দিকে, সোমবার এই বিজ্ঞপ্তি দেখে কিছু রোগী ফিরে গিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিএমের মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি বিপ্লব শর্মা বলেন, “এ চলতে থাকলে হাসপাতাল টিকবে কী করে?” রামপুরহাট মহকুমাশাসক বৈভব শ্রীবাস্তব বলেন, “বিএমওএইচ-এর কাছে এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।” |