আট বছরেও ছবিটা বদলায়নি।
এই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবিতে একাধিকবার অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে। হয়েছে পথ অবরোধও। স্বাস্থ্যকর্তারা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ছবিটা একই থেকে গিয়েছে বোরো থানার জামতোড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
সোমবার সেখানে গিয়ে সেই ছবিই চোখে পড়েছে। ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে হাজির হাজারখানেক গ্রামবাসী। ভিতরে আটকে রাখা হয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে বোরো, জামতোড়িয়া, বুড়িবাঁধ এবং কুইলাপালএই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন নির্ভরশীল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখানে চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র তিন দিন আসেন। এলেও দু’ঘণ্টা পরে চলে যান। একই অভিযোগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্টের বিরুদ্ধেও।
উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবিতে গ্রামবাসীরা ‘জনকল্যাণ মুক্ত মঞ্চ’ নামে একটি অরাজনৈতিক মঞ্চও গড়েছেন। এ দিন সকাল থেকে ওই মঞ্চের উদ্যোগেই সকাল থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে। ভিতরে আটকে থাকা চিকিৎসক বিধান মণ্ডল বলেন, “আমার বাড়ি বাঁকুড়ায়। ওখান থেকেই যাতায়াত করি। |
এখানে চিকিৎসকের থাকার জন্য কোয়ার্টার নেই। আমি এর আগে এখানকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরে আবেদনও জানিয়েছি।” তবে ফার্মাসিস্ট সোমনাথ মণ্ডল নাম, নার্স কালিদাসী টুডুর দাবি, তাঁরা নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। যদিও মঞ্চের পক্ষে বিশ্বজিৎ পতি, পরমেশ্বর সরেন, চন্দন মোদকদের দাবি, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সামান্য জ্বর, পেটে ব্যথার ওষুধও মেলে না। এলাকাবাসী কৌশিক সিংহ মহাপাত্র, শীতল চার বলেন, “ইতিপূর্বে বহুবার এই কেন্দ্রের পরিষেবার মান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। স্বাস্থ্যকর্তারা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”
জামতোড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এলাকাটি পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সীমানায়। এখানে প্রতিদিন গড়ে দু’শো থেকে আড়াইশো রোগী ভিড় করেন। বাসিন্দাদের দাবি, এখানে অন্তর্বিভাগ চালু করতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্স, জীবনদায়ী ওষুধ প্রভৃতির জোগানও দিতে হবে।
চিকিৎসক বিধানবাবু জানান, তাঁদের আটকে রাখা হলেও জল বা খাবারের বন্দোবস্ত করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বস্তুত সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ভিতরে আটকে থাকায় বিধানবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। বিকেলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন হয়। এমনকী এ দিন সন্ধ্যা নাগাদ মানবাজার ২ ব্লকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক মধুসূদন হেমব্রম ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও আটকে রাখেন বিক্ষোভকারীরা। রাত পর্যন্ত ঘেরাও-বিক্ষোভ চলে। আটকে থাকেন মধুসূদনবাবু, ফার্মাসিস্ট, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা।
পুরুলিয়ার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, “এই মুহূর্তে জেলায় চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বেহাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পর্ষদকে প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, অবিলম্বে কাজ শুরু হবে।” তবে এখনই জামতোড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতিরিক্ত চিকিৎসক দেওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, জেলায় নতুন চিকিৎসকেরা নিয়োগ হওয়ার পরে ওখানে আরও কাউকে পাঠানো হবে। |