রক্তের অভাবে এক প্রসূতির মৃত্যুর জেরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ‘তৃণমূল নেতা’ তথা পুরকর্মী-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ‘তৃণমূল নেতা’র নাম আশিস দে। সোমবার দুপুরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আজ, মঙ্গলবার তাঁকে সিউড়ি আদালতে তোলা হবে। আশিসবাবুর আগে ওই ঘটনায় রবিবার মৃত প্রসূতির দুই আত্মীয়-সহ তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ দিন তাঁদের সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন জনকেই ১৫ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পেশায় সিউড়ি পুরসভার কর্মী এবং নিজেকে জেলা তৃণমূলের সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দেওয়া আশিস দে-র গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় এ দিন বলেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আশিসবাবুকে অনেক দিন আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবু তিনি এখনও দলের নাম ভাঙাচ্ছেন। কেন ও কী ভাবে, তা বলতে পারব না। তাঁর কৃতকর্মের দায়ও দল নেবে না।”
পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা নাগাদ সিউড়ি সদর হাসপাতালে মারা যান আসরোফা বিবি (২০)। দুবরাজপুর ব্লকের সগড় গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। মৃত্যুর আগে তিনি একটি মৃত সন্তানের জন্মও দিয়েছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, আসরোফার জন্য হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে বারবার অনুরোধ করেও রক্ত পাওয়া যায়নি। তাই, চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে রাতে হাসপাতালের একটি অফিস ঘরে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে ক্ষুদ্ধ লোকজন। চিকিৎসক নিগ্রহের অভিযোগও ওঠে।
ভাঙচুর ও নিগ্রহের প্রতিবাদে এ দিন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি সংগঠনের সদস্যেরা প্রতিবাদ মিছিল করেন সিউড়ি শহরে। যদিও সিউড়ির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সদর হাসপাতালে সে দিনের ঘটনায় আশিসবাবু কোনও ভাবেই জড়িত ছিলেন না। তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় যারা প্রকৃত দোষী, পুলিশ তাদের ধরে শাস্তি দিক।” তাঁর আরও দাবি, হাসপাতালের সুপার যে অভিযোগ করেছিলেন, তাতে কোনও নাম ছিল না বলে তাঁরা জেনেছেন। তবু পুলিশ আশিসবাবুকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, সুপারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে আশিসবাবুর নাম পাওয়া গিয়েছে। তাই তাঁকে ধরা হয়েছে।
আশিসবাবুর ধরা পড়ার ঘটনাকে ঘিরেও জেলা তৃণমূলের মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। আশিসবাবু জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে খোদ সাংসদ শতাব্দী রায় জানালেও পুরপ্রধান বলেন, “আমাদের এমন কোনও খবর জানা নেই। আশিসবাবু পুরসভার কর্মী এবং পুর-কর্মচারী তৃণমূল ফেডারেশনের নেতাও।” অনুব্রতবাবুর সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। |