মা অভাবি তিস্তা পারের ঘরে
উঁচু বাঁধের গা ঘেষে থাকা বিরাট কয়া নদী মজে ফসলের মাঠ হয়েছে। উধাও জোতদারদের পুরনো সবুজ আম-কাঁঠালের বাগান। ধন সম্পদের আভিজাত্য। তিস্তা পাড়ের সাবেক জোরপাকড়ি বন্দরে দেবী উমা যেন অভাবি ঘরের কন্যা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দেবীবরণের তোড়জোড়।
কে বলবে আজকের জোরপাকড়ি প্রাচীনকালে প্রসিদ্ধ বাণিজ্য বন্দর ছিল! বলেন না কেউ। এমনকী নতুন প্রজন্ম জানে না জনপদের অতীত গরিমা। শুধুমাত্র গুটিকয়েক প্রবীণ বাসিন্দার মুখে ঘুরে বেড়ায় হারানো স্মৃতিকথা। তাঁদের বিবরণে, ভুটানের অধীনে থাকার সময় জোরপাকড়ি ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’। ভুটান ও তিব্বতের বণিকরা টাট্টু ঘোড়ায় পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে ওই জনপদে পৌছতেন। বাংলার বণিকরা এখন থেকে পছন্দের রেশম, মশলা, হিং, কম্বলের মতো গরম বস্ত্র, ঘোড়া কিনে রংপুরে নিয়ে যেতেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়নাথ রায় জানান, ভুটিয়াদের হাত থেকে এক সময় ডুয়ার্সের পাশাপাশি জোরপাকড়ি বন্দর ছিনিয়ে নেয় বৃটিশ প্রশাসন। এর পরে শিক্ষা সংস্কৃতি ও খেলাধূলাতেও সাফল্য খুঁজে পায় তিস্তা পাড়ের ওই জনপদ। আত্মপ্রতিষ্ঠার টানে পূর্ববঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন সেখানে। মূলত তাঁদের উদ্যোগে দেবী আরাধনা শুরু হয়।
ঠিক কবে নাগাদ ওই প্রাচীন জনপদে দেবী আরাধনার সূত্রপাত হয়েছিল আপাতত তা জানার উপায় নেই। বর্তমান পুজো আয়োজকদের কয়েকজনের দাবি, ১৯৩৫ সালে এখানে পুজো শুরু হয়। উদ্যোক্তা ছিলেন স্থানীয় জোতদার ও বিদ্বজনেরা। উমার বাপের বাড়ি তখন ধন সম্পদে সমৃদ্ধ। জাঁকজমকে ভরপুর পুজো তিস্তা পাড়ের উৎসবে পরিনত হতে খুব একটা সময় নেয়নি। তখন উৎসবের দিনগুলিতে বাড়িতে রান্নার হ্যাপা থাকত না। উদ্যোক্তারা মণ্ডপে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। গোড়ার দিকে পুজো হত হাই স্কুল মাঠে। ১৯৪৫ সালে স্থান পরিবর্তন হয়। পুজো চলে যায় বাজারে বটতলায়। কিন্তু জোতদার ও বিদ্বজনরা একটি পুজো আয়োজনের মধ্যে নিজেদের বেশিদিন আবদ্ধ রাখতে পারেননি। আর্থিক কৌলিন্যের প্রতিযোগিতার মেতে কয়েকজন জোরদিঘি মোড়ে নতুন করে পুজো শুরু করেন। দীর্ঘদিন ওই দুটি পুজো ছিল জোরপাকড়ির শারদ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। পরে ফের বিভাজন ঘটে। পুরনো আয়োজকদের কয়েক জন টাওয়ার মোড় এলাকায় পুজো শুরু করেন। ওই তিনটি পুজোর আয়োজন হয়েছে তিস্তা পাড়ের গ্রামে।
কিন্তু পুজোর আয়োজন হলেও খুশি অনেকটাই ম্লান। জোরপাকড়ির আদলের মতো পাল্টে গিয়েছে উৎসবের মেজাজ। কয়েক দশক আগে জোতদারদের দালান ও দোতলা বাড়িকে ঘিরে সমাজ জীবন আবর্তিত হত জোরপাড়িতে। এখন গোড়ালি ডোবা ধূলোয় ভরা মেঠো পথ নেই। সাবেক জোতদারদের বৈভব ছাপিয়ে পিচ রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে কংক্রিটের উঁচু উঁচু বাড়ি মাথা তুলেছে। তবু কোথায় যেন ছন্দপতনের যন্ত্রণা। কোলাহল মুখর বানিজ্য বন্দর কৌলিন্য হারিয়ে এখন যে নিছকই গ্রাম। পুরনো বাজার-হাটে দোকানপাটের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু বাড়েনি ব্যবসার সুযোগ। নিরুপায় নতুন প্রজন্ম রুজিরুটির ভাবনায় দিশেহারা। সমাজ জীবনকে ঘিরে থাকা অভাবের তির্যক ছায়া পড়েছে পুজোতেও। স্থানীয় বাসিন্দা সুজন লাহিড়ি বলেন, “অনেক কষ্টে পুজোর আয়োজন করতে হচ্ছে। মানুষ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু প্রাণখোলা আনন্দ বলতে যা বোঝায় সেটা এখন আর অনুভব করি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.