জেলার কৃষি দফতরের ভাড়ার শূন্য। কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের ৬টি বড় প্রকল্প চলে জলপাইগুড়ি জেলায়। অথচ চলতি আর্থিক বছরে ওই সমস্ত প্রকল্পের কোনটাতেই গত ৬ মাস ধরে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না। এমনকী গত বছরের বরাদ্দ করা অর্থের অর্ধেক টাকাও আসেনি অনেক ক্ষেত্রে। শুধু কেন্দ্রের নয় রাজ্যের প্রকল্পেরও একই হাল। তাতে উত্তরবঙ্গের অন্যতম কৃষি প্রধান এই জেলায় ধান, ডাল-সহ অনান্য শস্য চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। জেলায় চলছে রাজ্য সরকারের এমন একটি প্রকল্পে আখ-সহ নানা অর্থকরী ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। সেই প্রকল্পেও গত বছর থেকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। কৃষি দফতরের আশঙ্কা, প্রতি বছর গড়পরতা যে পরিমাণ শস্য উৎপাদন হয় চলতি বছরে তার পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। তাতে জেলার শস্য ভান্ডারে টান পড়বে। স্থানীয় বাজারে কৃষি পণ্যের মূল্য একলাফে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি হিসেবে জেলার কৃষি পণ্যের উৎপাদন ত্রিশ শতাংশ কমে যেতে পারে। জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক আনোয়ার হুসেন বলেন, “বিষয়টি রাজ্য সরকারের। সে কারণে আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।” রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা কেন্দ্রীয় সরকারের। এই প্রকল্পে মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া থেকে বীজ সরবরাহ, উন্নত চাষের সরঞ্জাম ব্যবহার করে ফলন বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি রয়েছে। গত বছর জেলায় ১৮টি বড় প্রকল্পে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। যার মধ্যে মাত্র ৯৮ লক্ষ টাকা জেলায় এসেছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোনও বরাদ্দই জেলায় মঞ্জুর হয়নি। পূর্বভারতের জন্য বর্ধিত সবুজ বিপ্লব প্রকল্পে কৃষকদের ধান, গম-সহ অর্থকরী শস্য চাষে উৎসাহিত করে, উন্নত চাষ ও প্রযুক্তির সাহায্যে ফলন বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। এই প্রকল্পে চলতি বছরে বরাদ্দ হয়নি। গত বছরের ২৪টি স্কিমের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। গত বছর এই প্রকল্পে প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও শিলিগুড়ি খড়িবাড়ি-ফাঁসিদেওয়া এলাকায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ধান চাষের প্রকল্প ছাড়া অন্য প্রকল্পের কাজ হয়নি। বরাদ্দ জুটেছে মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকা।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনেও ধান, গম ও ডাল চাষে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের সরকারি সাহায্য করা হয়। চলতি বছরে জেলায় এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে রয়েছে।. অন্য তিনটি প্রকল্পে তৈল বীজ, ডাল, মশলা চাষের জন্য কৃষকদের সরকারি বিনিয়োগ করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্পে জলপাইগুড়ি জেলা এবছর কোনও বরাদ্দ মেলেনি। আখ-সহ অনান্য মুনাফাদায়ক শস্য চাষের রাজ্য সরকারি প্রকল্প গত বছর থেকেই টাকা আসা বন্ধ হয়ে রয়েছে জেলায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার কৃষি দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “খুবই প্রতিকূল পরিস্থিতে কাজ করতে হচ্ছে.। যে প্রকল্পগুলিকে নিয়ে জেলায় কৃষি দফতর কাজ করে তার কোওটিতেই চলতি বছরে বরাদ্দ মেলেনি। সবিস্তার রাজ্য সরকারকে তা জানানো হয়েছে।” জলপাইগুড়ির জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা সরকারি সাহায্য না পেয়ে আমাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাঁরা শুধু বঞ্চিত হচ্ছেন না, জেলায় কৃষির ফলন ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলব।” |