শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) নতুন বোর্ডে জায়গা পেলেন না শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ওই বোর্ডে স্থান পাননি জলপাইগুড়ির পুর চেয়ারম্যান এবং দুই সভাধিপতিও। ঘটনাচক্রে ওঁরা সকলেই কংগ্রেসের।
সোমবার এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য নতুন বোর্ডের ১২ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। তাতে রুদ্রবাবু-সহ ৫ জনই তৃণমূলের নেতা কিংবা নেত্রী।
বস্তুত, এসজেডিএ গঠনের পর থেকেই শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, দুই শহরের পুর প্রধান, দুই জেলার গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে দু’জন সভাধিপতিকে রাখা হয়। গোড়া থেকেই এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন পুরমন্ত্রী সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য। সেইসময়ে এসজেডিএ-র বোর্ডে শিলিগুড়ি পুরসভার সিপিএমের মেয়র প্রয়াত বিকাশ ঘোষকে রাখা হয়েছিল। তাঁরা দু’জনেই শাসক সিপিএমের ছিলেন। বোর্ডে শিলিগুড়ির মেয়রকে রাখতেই হবে এমন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু এটা রীতি বা প্রথা। এ বার সেই প্রথার ‘পরিবর্তন’ হওয়ায় শাসক জোটের দুই শরিকের মধ্যে ‘বিভাজন’ তৈরির সুযোগ নিতে ছাড়েননি সিপিএম নেতৃত্ব। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর বক্তব্য, “তৃণমূল নেত্রী আমাদের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ করতেন। কিন্তু এসজেডিএ-র বোর্ড গঠনের নামে যা হল তা দলতন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। এখন যা হল তাতে দুই শহর ও জেলার মানুষেরা অপমানিত বোধ করবেন।” এসজেডিএর প্রাক্তন সদস্যা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মিনতি সেনও বলেন, “চেয়ারম্যান, বিধায়কদের তো কমিটিতে থাকার কথা ছিল। জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ির জনপ্রতিনিধিরা এসজেডিএতে থাকবেন, তবেই তো উন্নয়ন হবে। এটা দলতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র নাকি গণতন্ত্র, মানুষই তা বুঝে নেবেন।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক গোবিন্দ রায় বলেন, “যা চলছে তা শুধু দলতন্ত্র নয়, নির্লজ্জ দলতন্ত্র।”
কংগ্রেসের প্রতিনিধি বলতে এসজেডিএ-তে জায়গা পেয়েছেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। এ ছাড়াও নান্টু সাহা বলে একজনকে সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। তবে নান্টু সাহার ঠিকানা রাত পর্যন্ত এসজেডিএ-র কর্তারা জোগাড় করতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান কংগ্রেসের নান্টু পালের পদবি ‘ভুলবশত’ সাহা বলে উল্লেখ করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও এসজেডিএ-র অন্দরে জল্পনা চলছে। এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বোর্ডে নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব অথবা তাঁর কোনও প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির দুই জেলাশাসক, এবং এসজেডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকও রয়েছেন। রয়েছেন শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, তৃণমূলের জলপাইগুড়ির জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দন ভৌমিক ও শিলিগুড়ির তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবালও।
এই ঘটনায় কংগ্রেসের অন্দরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেছেন, “আমার কিছু বলার নেই।” তবে জলপাইগুড়ির কংগ্রেস নেতারা প্রকাশ্যেই শরিক দল তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন। কারণ, নতুন কমিটিতে স্থান পাননি জলপাইগুড়ি পুরসভার কংগ্রেসের চেয়ারম্যান মোহন বসু ও জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মাও।
জলপাইগুড়ির পুর চেয়ারম্যান বলেন, “এমন হলে জলপাইগুড়িই বঞ্চিত হবে। আমরা অনেক আগেই জলপাইগুড়ির জন্য আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার দাবি করেছি। এ বার তা নিয়ে ফের আন্দোলন শুরু হবে।” সুখবিলাসবাবুর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “কী বলব! যাদের কমিটিতে নিলে ভাল কাজ হবে বলে সরকার মনে করছে, তাদেরই হয়তো নিয়েছে।”
তবে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু ‘দলতন্ত্রের’ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতর থেকে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নিশ্চয়ই সব দিক খতিয়ে দেখেই তা করা হয়েছে। এখানে দলতন্ত্রের অভিযোগ উঠছে কেন? পুজোর আগেই নয়া বোর্ডের প্রথম সভা করা হবে। যাতে উন্নয়নের কাজে আরও গতি আনা সম্ভব হয়।” রাজ্যের পুরও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে বিষয়টি নিয়ে পুরমন্ত্রী খোঁজ নেবেন।
কমিটিতে নতুন স্থান পাওয়া জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের মহাসচিব চন্দনবাবু বলেন, “এতদিন এসজেডিএতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়েছে। পরিকল্পিত উন্নয়নের দিশায় আলোকপাত করার চেষ্টা করব। এর মধ্যে দলতন্ত্রের অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। ” রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বরবাবুও বলেন, “সকলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করব।” |