ভাড়া নিয়ে গোলমালে সোমবার দুপুরে কান্দি বাসস্ট্যান্ড চত্বরে গণ্ডগোলে ছাত্র পরিষদের তিন সদস্য জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তপন ঘোষ ও আসাদুর জামান নামে দু’জনকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কবিরুল ইসলাম নামে আর এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কান্দি বাস সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিন দুপুরে কান্দি থেকে খড়গ্রামে যাওয়ার জন্য দশ জন ছাত্র কান্দি বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে টিকিট কাটার সময় তাঁরা ছাত্রদের জন্য ‘ছাড়’ দাবি করেন। কিন্তু টিকিট কাউন্টার থেকে জানানো হয়, বাসে আসন সংরক্ষণ করতে গেলে ছাত্রদের টিকিটের অর্ধেক দাম দিতে হবে। ছাত্রদের দাবি ছিল, টিকিটের এক তৃতীয়াংশ ভাড়া দেবেন তাঁরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। তারপরে ছাত্রেরা টিকিট না কেটেই খড়গ্রামে যাওয়ার বাসে উঠে পড়েন। কিন্তু এরপরে আবার গণ্ডগোল শুরু হয় মাঝ পথে। কন্ডাক্টর ছাত্রদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া দাবি করেন, ছাত্রেরা পাল্টা দাবি করেন, এক তৃতীয়াংশ ভাড়া দিয়েই তাঁরা যাবেন। গণ্ডগোল এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছয় যে, বাসটি প্রায় পাঁচ-ছ কিলোমিটার যাওয়ার পরে ফের কান্দি বাসস্ট্যান্ডে ফিরে আসে। তারপরে শুরু হয় ফের বচসা। সেখান থেকে ধস্তাধস্তি।
খবর চলে যায় শহরের ছাত্র পরিষদ নেতৃত্বের কাছেও। ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা কান্দি-বহরমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। বন্ধ হয়ে যায় দু’পাশে গাড়ি চলাচল। বিরাট যানজট তৈরি হয়। ইতিমধ্যে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি বাসের গায়ে লাঠি দিয়ে মারা হয়। তা দেখে বাসকর্মীরা পাল্টা মারধর করেন ছাত্রদের। শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ছাত্রেরা কিছু ক্ষণ বাদে রণে ভঙ্গ দিয়ে পালান। ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশও। পুলিশের চেষ্টাতেই আধ ঘণ্টা পরে অবরোধও ওঠে। তবে ছাত্রদের দাবি, তাঁদের উপরে অকারণে হামলা করেছেন বাসকর্মীরা। কান্দিতে ওই বাসকর্মীদের দাবি, ছাত্রেরা বাস ভাঙচুর করতে পারে ভেবেই তাদের তাড়া করা হয়।
কান্দি বাস সিন্ডিকেটের সহ সভাপতি ফুলু মিঁয়া বলেন, “ছাত্রদের জন্য আমরা মূল ভাড়ার থেকে ৫০ শতাংশেরও বেশি ছাড় দিয়ে থাকি। সামাজিক কারণেই সেটা করা হয়। তারপরেও ছাত্রেরা বাসকর্মীদের সাহায্য না করে সব সময় গোলমাল করে।” ছাত্রদের পাল্টা দাবি, প্রশাসন, পুলিশ ও বাস মালিকেরা এক সঙ্গে বসে যে ভাড়া ঠিক করেছেন, সেই ভাড়াই তাঁরা দেন। কিন্তু বাসকর্মীরাই অশান্তি তৈরি করে। ছাত্র পরিষদের মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ সম্পাদক জয়দেব ঘটক বলেন, “ভাড়া নিয়ে মাঝে মধ্যেই গণ্ডগোল হয়। এই দিন ছাত্র সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করছিলাম। এমন সময় বাসকর্মীরা আচমকা আমাদের উপরে হামলা করে। তাতেই তিন জন জখম হয়েছেন।”
এরপরে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্র পরিষদ। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আন্নাপ্পা ই বলেন, “ভাড়া নিয়ে বাসকর্মী ও ছাত্রদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” |