দুর্গাপুজোর আগেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করার ব্যাপারেও শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে।
রবিবার রাতে বহরমপুর সার্কিট হাউসে রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৈঠকে কলকাতার দমদম থেকে উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত ৪৩৮.৩ কিমি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শেষ করার ব্যাপারে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি-র পদস্থ কর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন।
পরে প্রণববাবু বলেন, “জাতীয় সড়ক সংস্কার করা সবচেয়ে জরুরি। জাতীয় সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় চলাচল করার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। দ্রুত ওই কাজ শেষ করার জন্য ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
জেলার বিভিন্ন দলের বিধায়ক ও জেলাপ্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে দীর্ঘক্ষণ ওই বৈঠক চলে। জাতীয় সড়ক সংস্কারের বিষয়ে বেশ কয়েক জন বিধায়ক তাঁদের নিজের এলাকার রাস্তা খারাপের প্রসঙ্গ তোলেন। প্রণববাবু থামিয়ে দিয়ে বলেন, “কোনও বিশেষ এলাকার রাস্তা খারাপ তা নয়। আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখছি, জাতীয় সড়কের প্রায় পুরোটাই বেহাল হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে তা সারাতে হবে।” এর পরেই ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির কর্তাদের বলেন, “দ্রুত ওই রাস্তা সংস্কার করতে কোনও সহায়তা বা সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমাদের জানান।”
দমদম থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৪৩৮.৩ কিমি বিস্তৃত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে কৃষ্ণনগর ডিভিশনের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৬২ কিমি এবং মালদহ ডিভিশনের অধীনে রয়েছে প্রায় ২৫৯ কিমি। ওই বৈঠকে ন্যাশন্যাল হাইওয়ে অথরিটির চিফ জেনারেল ম্যানেজার (রিজিওন্যাল অফিসার) অজয় অহলুওয়ালিয়া-সহ কৃষ্ণনগর ও মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। কৃষ্ণনগর ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিক গৌতম দত্ত বলেন, “জাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। এ দিনের বৈঠকে তা দ্রুত শেষ করার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব ওই রাস্তার কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।” মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিক এম সাইফুল্লা বলেন, “দুর্গাপুজোর আগেই দাতীয় সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করে ফেলা হবে।”
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি বহরমপুর থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ফোর লেন তৈরির কাজও চলছে। ফোর লেন করতে বহরমপুর থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৯৬৪ হেক্টর জমির প্রয়োজন। সাইফুল্লাবাবু বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির নিজস্ব জমিতে ফোর লেনের কাজ চলছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যা থাকায় এখনও কোনও জমি আমরা হাতে পাইনি।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয়কুমার ঘোষ বলেন, “জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কোনও সমস্যা আমাদের জেলায় নেই। কিন্তু জমির মূল্য বাবদ যে অর্থ জমিদাতাদের দেওয়ার কথা, তা এখনও ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি আমাদের দেয়নি। বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।” গৌতমবাবু অবশ্য বলেন, “জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে সমস্যা থাকায় ওই অর্থ প্রদান করা যায়নি।”
জাতীয় সড়ক ছাড়াও ওই সন্ধ্যায় জেলার উন্নয়ন নিয়েও বৈঠক করেন প্রণববাবু। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি জেলায় গ্রাম উন্নয়ন তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গ্রাম উন্নয়নমূলক কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি ঠিক মত কার্যকরী করা হচ্ছে কিনা এবং ওই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রণববাবুর উপস্থিতিতে জেলার উন্নয়ন নিয়ে বৈঠক চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে রাস্তা তৈরির পরের ৫ বছর সংস্কারের কথা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি সংস্থার দায়িত্ব থাকলেও তা করা হয় না বলে বহরমপুরের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন। অন্য দিকে বেলডাঙার বিধায়ক শেখ শফিউজ্জামানের অভিযোগ, “১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের কাজ নিয়ে গ্রামবাসীদের অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনের তরফে তদন্তের কাজ সেভাবে এগোয়নি।’’ এ ব্যাপারে প্রণববাবু বিধায়কদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরির কথা বলেন। ওই কমিটি গোটা বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করবে, যা নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। |