পকেটে গুয়াংঝৌ এশিয়াডের সোনা থাকা সত্ত্বেও গত চার রাত মাঝেমধ্যেই ঘুম ভেঙে গেছে তাঁর। ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড গুনে অপেক্ষায় থেকেছেন কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণপাওয়া যাবে মেয়েদের তিন হাজার মিটার স্টিপলচেজে অলিম্পিক যাওয়ার টিকিট। কিন্তু সোমবার জাতীয় ওপেন মিটের ট্র্যাকে নেমে রায়বেরিলির সুধা সিংহ দেখলেন, উল্টো দিকে কিরণ তিওয়ারি ছাড়া তাঁর আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই আসেননি। বাকি সবাই নাম তুলে নিয়েছেন। নিট ফল ইভেন্টটাই বাতিল! |
“অলিম্পিকের যা যোগ্যতামান (৯.৪৮ মিনিট) সেটা কন্ডিশনিং ক্যাম্পে করেই এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কলকাতা থেকে পরের বছরের লন্ডন অলিম্পিকের টিকিট নিয়ে ফিরব। সেই কবে, ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এসেছি। প্রতিদিন সকাল-বিকেল প্র্যাক্টিস করেছি। কিন্তু ফিরে যাচ্ছি শূন্য হাতে। ট্র্যাকে নেমে ব্যর্থ হলে না হয় মেনে নিতাম। কিন্তু নামতেই তো পারলাম না! নিয়মে দু’জন মাত্র প্রতিযোগীর মধ্যে ট্রায়াল হয় না। মনে হচ্ছে সব কিছু যেন অন্ধকার হয়ে গেল,” বলার সময় ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের অন্যতম সোনার মেয়ের চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। তিন বছর আগে বিয়ে করেছেন নিজের কর্মস্থল রেলেরই এক অ্যাথলিটকে। স্বামীও পুরুষদের ৪০০ মিটারে দৌড়ে নেমেছিলেন। সেটা দৌড়টা দেখার ইচ্ছে থাকলেও সেটা অবদমন করে যুবভারতী থেকে অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন সাইতে, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর তাগিদে। স্বামী পদক পাননি। তিনি নামতেই পারলেন না! স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে অবশ্য ট্র্যাকের জেদ ফিরে এল গলায়, “ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফেডারেশন আমাকে নিশ্চয়ই বিদেশে পাঠাবে আর্ন্তজাতিক মিটে লড়তে। সেখানেই আমি যোগ্যতামান অর্জন করব। অলিম্পিকে যাবই।”
সুধাকে নিয়ে বিকেলের নাটক রাত ন’টায় মহানাটকীয় হয়ে উঠল পুরুষদের হাইজাম্প ইভেন্ট ঘিরে। টেকনিক্যাল কমিটির লোকজনকে সভায় বসতে হল জলপাইগুড়ির ছেলে রেলের হরিশঙ্কর রায় না তামিলনাড়ুর নিখিল চিত্রাসুকাকে দেওয়া হবে সোনার পদক তা ঠিক করতে। শেষ পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পেরে দু’জনকেই যুগ্মবিজয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হল। নাটকের শুরু হরি এবং নিখিল দু’জনেই ২.১৬ মিটার পোল টপকে যাওয়ার পর। দু’জনেই এর পর বিচারকদের কাছে নিজেদের পরের টার্গেট জানান ২.১৯ মিটার। কিন্তু দু’জনেই ব্যর্থ হন। রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থা সূত্রের খবর, এর পর হরি প্রতিদ্বন্দ্বীর টেকনিক্যাল ভুলের কথা তুলে দাবি করেন তাঁকে সোনার পদক দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ভিকট্রি স্ট্যান্ডে একা দাঁড়ানোর সুযোগ না পেলেও সোনা হাতছাড়া হয়নি হরিশঙ্করের। মিটের তৃতীয় দিনে প্রত্যাশামতো মেয়েেদের ট্রিপল জাম্পে সোনা জিতলেন ময়ূখা জনি। জোড়া সোনা জেতার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমার অফিস ওএনজিসিকে আরও একটা সোনা দেওয়ার জন্যই নেমেছিলাম। তবে তাতেই যে নিজের মিট রেকর্ড উন্নত করতে পেরেছি সেটা ভেবে ভাল লাগছে।” সোনা জিতে উচ্ছ্বাসহীন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল আর এক তারকা অ্যাথলিট শটপাটার ওমপ্রকাশ সিংহের কাছ থেকে। অলিম্পিকে নামার দুর্লভ সুযোগ হাতের মুঠোয়। বলেও ফেললেন, “এখানে যা প্রচণ্ড গরম তাতে বেশি পরিশ্রম করিনি।” বাংলা শিবিরে আবার উচ্ছ্বাস হেপ্টাথলনে ব্রোঞ্জ পাওয়া আন্তনা খাতুন আর ২০০ মিটারে সোনা জেতার পথে পা বাড়ানো আশা রায়কে ঘিরে। সুস্মিতা সিংহ রায়ের অনুপস্থিতিতে বীরভূমের হেডুকা গ্রামের মেয়ে আন্তনা পদক পেয়ে গেলেন। সেই সঙ্গে রেলের চাকরির প্রস্তাবও। আর হিটে আশা যা সময় করলেন তাতে দু’শো মিটারে পদক জয় নিশ্চিত। |