দেশ জুড়ে প্রার্থনার মধ্যেও মহম্মদ আইয়াজউদ্দিনের অবস্থার সোমবারেও কোনও উন্নতি হয়নি। হায়দরাবাদের অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজহার-পুত্রের অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। তাঁর একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করছে না। তাঁকে এখনও কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে রাখা হয়েছে।
রবিবার হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের কাছাকাছি পুপ্পলগুড়া নামে একটি জায়গায় মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হন আজহার-নৌরীনের ছোট ছেলে আইয়াজ। তাঁদের আত্মীয় ১৬ বছরের আজমল-উর-রহমান হাসপাতালে আনার এক ঘণ্টার মধ্যে মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় আইয়াজকে। হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন ডাক্তারেরা তাঁর নাড়ি পাচ্ছিলেন না। হৃদযন্ত্রও কাজ করছিল না। হাসপাতাল সূত্রে এ দিন বলা হয়েছে, “আইয়াজের পরিস্থিতি এখনও গভীর সঙ্কটজনক। চিকিৎসার ফলাফল নিয়ে আমরা এখনই কিছু জানাতে পারছি না যে হেতু চোটের গভীরতা সাংঘাতিক।”
খবর পাওয়ামাত্র গত কালই লন্ডন থেকে ফিরতি বিমান ধরা আজহার সোমবার ভোরে হায়দরাবাদ পৌঁছন। তার পর থেকে তিনি হাসপাতালেই রয়েছেন তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে। গত কালই হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন আইয়াজের মা নৌরীন এবং আজহারের দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গীতা বিজলানি। তাঁরাও সেখানে রয়েছেন। একাধিক ক্রিকেটারও হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন আইয়াজের খোঁজ নিতে। ভিভিএস লক্ষ্মণ গিয়েছেন। ইউসুফ পাঠান গিয়েছেন। হায়দরাবাদের হয়ে অনূর্ধ্ব উনিশ ক্রিকেটে খেলেছেন আইয়াজ। খবর পেয়ে রাজ্য স্তরের অনেক ক্রিকেটারও হাসপাতালে ছুটে যান। উদ্বিগ্ন বাবা এবং পরিবারবর্গের জন্য যদিও খুব উৎসাহব্যঞ্জক কোনও কথা ডাক্তারেরা এখনও বলতে পারেননি। তবে আশার কথা হচ্ছে, চরম দুঃসংবাদও তাঁরা শোনাননি। বরং ডাক্তারদের মরিয়া চেষ্টা দেখে কেউ কেউ অলৌকিক কিছু ঘটার আশা একেবারে ছেড়ে দেননি। |
হায়দরাবাদ বিমানবন্দরে আজহার। ছবি: পিটিআই। |
বলিউড থেকে ক্রিকেটমহল সর্বত্র অবশ্য আইয়াজের জন্য প্রার্থনা চলছে। গত কাল সানিয়া মির্জা এবং যুবরাজ সিংহ আইয়াজের আরোগ্য কামনা করেছিলেন। এ দিন বোমান ইরানি টুইট করেছেন, ‘আমাদের সকলের মিলিত প্রার্থনার শক্তি যেন আইয়াজউদ্দিনকে সুস্থ করে তুলতে পারে। প্রার্থনা করা ছাড়া এখন আমরা আর কী-ই বা করতে পারি!’
ভয়াবহ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক অবহেলার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। যে জায়গায় আইয়াজের মোটরবাইক দুর্ঘটনা ঘটে সেই আউটার রিং রোডে ট্র্যাফিক সিগন্যাল বা টহলদারির ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ, সেখানে প্রায়ই গভীর রাত বা ভোরের দিকে বেসরকারি মোটরবাইক রেস চলে তরুণদের মধ্যে। গত ক’মাসে রিং রোডে দুর্ঘটনায় দশ জন মারা গিয়েছেন বলে খবর। গত বছর জুনে ঠিক একই রকম একটি দুর্ঘটনায় মারা যান অভিনেতা কোটা শ্রীনিবাস রাওয়ের ছেলে কোটা প্রসাদ। আইয়াজের মতোই প্রসাদও ১০০০ সিসি-র স্পোর্টস মোটরবাইক নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ছুটছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ট্রাকে গিয়ে ধাক্কা মারেন তিনি।
বরাবর স্পোর্টস মোটরবাইকের খুব শখ আইয়াজের। শোনা যাচ্ছে, আইয়াজ যে মোটরবাইক নিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন সেটা ঈদ উপলক্ষে তাঁর বাবারই উপহার দেওয়া। আইয়াজ নাকি তাঁর কাকা বালিগুদ্দিনকে রবিবার সকালে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মোটরবাইক নিয়ে আজ ‘উড়তে’ বেরোচ্ছেন। পরিবারের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, উনিশ বছরের ভাইপোকে কাকা অনেক বার বারণ করেছিলেন। কিন্তু রিং রোডের মাদকতা আর গতির নেশায় সেই বারণ চাপা পড়ে যায়। |