সফরের শেষে এসে মহাবিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। লন্ডনে হাজির থেকেও নজিরবিহীন ভাবে আইসিসি-র পুরস্কার বিতরণী সভায় এলেন না তাঁরা। আইসিসি-র ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার পেয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু ভারত অধিনায়কও সেই পুরস্কার নিতে অনুষ্ঠানে যাননি। সব মিলিয়ে সফরের শেষ দিকে এসে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল টিম ইন্ডিয়া।
কেন এ ভাবে ক্রিকেটের সব চেয়ে হেভিওয়েট অনুষ্ঠান থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেন ধোনিরা? ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁদের সময় মতো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ দিন বিকাল চারটে নাগাদ তাঁদের এ কথা জানানো হয়। আইসিসি-র তরফে আবার বলা হচ্ছে, দু’মাস আগেই ভারতীয় বোর্ড-সহ সব দেশের কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। |
ভারতীয় ক্রিকেটাররা যে অনুষ্ঠানে আসবেন না, সেটা প্রথমে টের পাওয়া যায় এ দিন বিকালে। হোটেলে গিয়ে বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলার সময়ই পরিষ্কার হয়ে যায়, নাটকীয় একটা কিছু ঘটতে চলেছে। তখনই কয়েক জন ক্রিকেটার বলে দেন, আমরা কোনও আমন্ত্রণ পাইনি আইসিসি-র কাছ থেকে। তাই যাওয়া হবে না।
এর পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরে দেখা যায় বান্ধবী-সহ একে একে ঢুকছেন অ্যালিস্টার কুক, ইয়ান বেলরা। কিন্তু কোথায় ভারতীয় ক্রিকেটাররা? সঙ্গে সঙ্গে ফোনে ধরা গেল টিম ইন্ডিয়ার ম্যানেজার শিবলাল যাদবকে। শিবলাল বলেন, “আমরা আগে জানতাম না আমাদের এই অনুষ্ঠানে যেতে হবে। বিকেলে জানতে পারি। তখন ক্রিকেটারদের সবাইকে একত্রিত করতে পারিনি। তাই আসতে পারিনি।” কিন্তু আইসিসি তো বলছে দু’মাস আগেই বোর্ডকে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছিল। আর আপনি নিজে বোর্ডের এক জন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তা হলে কেন জানবেন না? শিবলালের জবাব, “বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে তো আর সব দিকে নজর দিতে পারব না। এখানে আমি টিম ইন্ডিয়ার কাজেই ব্যস্ত ছিলাম। আমার পক্ষে সব কিছু দেখা সম্ভব হয়নি।”
কেন ধোনিরা অনুষ্ঠানে গেলেন না? এই নিয়ে এখানে নানা জল্পনা উড়তে শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে যে রকম আচরণ করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন সব ক্রিকেটার এবং এখানকার প্রচারমাধ্যম সেটা হজম করতে পারেননি ধোনিরা। কখনও নাসের হুসেন তাঁদের ‘গাধা’ বলেছেন, কখনও জিওফ্রে বয়কট ঠাট্টা করেছেন, ব্রিটিশ প্রচারমাধ্যমও একের পর এক বিদ্রুপ করে চলেছে। যেটা ভারতীয় ক্রিকেটারদের আঁতে প্রচণ্ড ঘা দিয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় ভারতীয় বোর্ডের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় বোর্ডের কাছে আইসিসি-র আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি, এটা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বলে মনে হচ্ছে না। তা ছাড়া গত কালই লর্ডসে বসে ম্যাচ দেখে গিয়েছেন বোর্ডের অন্যতম কর্তা রাজীব শুক্ল। বোর্ডকর্তাদের সঙ্গে ধোনিদের সব সময় যোগাযোগ আছে। সব চেয়ে তাৎপর্যের, আইসিসি প্রেসিডেন্টের নাম শরদ পওয়ার। তা সত্ত্বেও যদি আমন্ত্রণপত্র ভারতীয় বোর্ডের কাছে না পৌঁছয়, তার চেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার আর কী হতে পারে? ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে পওয়ারের সম্পর্কের জেরে এমন হল কি না, এ রকম প্রশ্নও উঠছে। আবার আর একটা মত হল, ধোনিরা হয়তো ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেই অনুষ্ঠান ‘বয়কট’ করলেন। কারণ যা-ই হোক না কেন, আবার একটা বিরাট বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল ভারতীয় ক্রিকেট। |