নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালে মাত্র ৫টা গেম নিতে পেরে সেরেনা উইলিয়ামসের হেরে যাওয়া? নাকি ৩১ বছর পর প্রথম কোনও অস্ট্রেলীয় মেয়ে হিসেবে সামান্থা স্তোজার-এর গ্র্যান্ডস্লাম চ্যাম্পিয়ন হওয়া? কোনটা বেশি অভাবিত? অপ্রত্যাশিত?
শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজে এগিয়ে থাকাটা যদি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের পুনরাবির্ভাব হিসেবে গণ্য হয়, তা হলে স্তোজারের র্যাকেট অস্ট্রেলীয় টেনিসকে কবর থেকে টেনে তুলল! লেভার-এমার্সন-রোজওয়াল-নিউকোম্ব-রোচ-মার্গারেট কোর্ট-গুলাগং-হিউইট-প্যাট ক্যাশের দেশ বিশ্ব টেনিস মানচিত্র থেকে কার্যত মুছে গিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বার ডেভিস কাপ জেতা দেশের কোনও পুুরুষ বা মেয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে প্রথম পঞ্চাশের মধ্যে নেই। একমাত্র ব্যতিক্রম ব্রিসবেনে জন্মানো, অ্যাডিলেডবাসী স্তোজার। বছর সাতাশের মেয়ে জীবনের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জেতার সৌজন্যে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সোমবারই ৭ নম্বরে উঠে এসেছেন। কিন্তু আদতে তিনি ডাবলস বিশেষজ্ঞ! বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর। লিজা রেমন্ডকে নিয়ে ২০০৫ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন এবং ২০০৬ উইম্বলডন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এ বছরও সাবিন লিসিক্কি-কে জুটি করে উইম্বলডন ফাইনাল খেলেছেন। সেখানে ২০১১-এ প্রথম তিন গ্র্যান্ডস্লাম সিঙ্গলসে স্তোজারের সেরা পারফম্যান্স ছিল রোলাঁ গারোয় তৃতীয় রাউন্ডে ওঠা। ফ্লাশিং মেডোয় শনিবার গভীর রাতে সেরেনাকে এক ঘণ্টা ১৩ মিনিটে ৬-২, ৬-৩ উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে স্তোজারের সেরা প্রদর্শন ছিল গত বছর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। |
কী করে এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড ঘটল? শেষ অস্ট্রেলীয় মেয়ে হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জেতার নজির ইভন গুলাগং-এর ১৯৮০ উইম্বলডনে। তারও ৭ বছর আগে কোনও অস্ট্রেলীয় মেয়ের শেষ বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়১৯৭৩-এ মার্গারেট কোর্ট। মেয়েদের সার্কিটে সক্রিয় প্লেয়ারদের মধ্যে সর্বাধিক (১৩) গ্র্যান্ডস্লাম যাঁর ঝুলিতে, তিন বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন সেই সেরেনাকে ফাইনালে হারিয়ে স্তোজার বলেছেন, “আমার টেনিসজীবনের সেরা দিনগুলোর মধ্য দিয়ে এখন চলেছি। আমি ভাগ্যবান যে, ঠিক এই সময় আমি এখানে খেললাম। যে দিন থেকে টেনিস খেলা শুরু করেছি, আমার স্বপ্ন ছিল এই জায়গাটায় পৌঁছনো। উত্তেজনায় হৃৎপিণ্ডটা মনে হচ্ছে বুক চিরে বেরিয়ে আসবে!” ম্যাচ শেষে স্তোজারকে সেরেনা জিজ্ঞেস করেন, “কেমন অনুভূতি হচ্ছে? রোমাঞ্চ হচ্ছে না?”
স্তোজার তাঁর মার্কিন মেগাপ্রতিপক্ষকে ‘‘অসাধারণ প্লেয়ারের মতোই অসাধারণ মানুষ’’ বলে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেও সেরেনা কিন্তু ফ্লাশিং মেডোয় ফের মাথা গরম করে বিতর্কে জড়ান গত রাতে। ২০০৯ সেমিফাইনালে কিম ক্লিস্টার্সের কাছে হারার সময় একটি ‘ফুট-ফল্ট’ নিয়ে লাইনজাজকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ সেরেনা বলেছিলেন, “তোমার গলার মধ্যে টেনিস বল ঢুকিয়ে মেরে ফেলব।” এ বার অবশ্য অতটা বাড়াবাড়ি করেননি। দ্বিতীয় সেটে ০-১ পিছিয়ে থাকার সময় স্তোজারের একটি স্ট্রোকের সামনে ‘ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টি করা’র অভিযোগে চেয়ার আম্পায়ার সেরেনার বিরুদ্ধে পেনাল্টি পয়েন্ট দেন। গেমটিও দেওয়া হয় স্তোজারকে। সেরেনা কোর্টেই ‘কামঅন’ বলে প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠে চেয়ার আম্পায়ারকে বলেন, “তুমিই কি সেই মেয়েটা, যে এখানেই বছর দুয়েক আগে আমার সর্বনাশ করে দিয়েছিল?” |
এ বার অবশ্য পরের গেমেই স্তোজারের সার্ভিস ভেঙে লড়াইয়ে ফেরেন সেরেনা। নিজের পরের সার্ভে জিতে ২-২-ও করেন। কিন্তু তার পর আর একটার বেশি গেম নিতে পারেননি বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর। অস্ট্রেলীয় বাবা, পোলিশ মা-কে ‘কাফে’ চালাতে গিয়ে প্রায় সারা দিন বাড়ির বাইরে কাটাতে হত বলে আট বছরের মেয়ে স্তোজারকে ক্রিসমাসে টেনিস র্যাকেট কিনে দিয়েছিলেন। অবসর সময় কাটানোর জন্য। শখের টেনিস খেলতে খেলতে ১৪ বছর বয়সে কুইন্সল্যান্ড স্পোর্টস অ্যাকাডেমি এবং ১৬ বছরে অস্ট্রেলীয় ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টসে আধুনিক তালিম পেয়ে স্তোজারের টেনিস প্লেয়ার হয়ে ওঠা। কোনও দিনই সে ভাবে নির্দিষ্ট কোনও কোচ নেই তাঁর। পুরোপুরি অ্যাকাডেমির ফসল। যিনি কি না পুরুষ-মেয়ে মিলিয়ে ১০ বছর বাদে অস্ট্রেলিয়ায় কোনও গ্র্যান্ডস্লাম খেতাব নিয়ে যাচ্ছেন। অজিদের শেষ সাফল্য ছিল লেটন হিউইটের ২০০১ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন খেতাব। সেরেনাকে অতীতে দু’বার হারালেও এত বড় মঞ্চে কখনও জেতেননি। যে মহামঞ্চ থেকে স্তোজারের র্যাকেটে অস্ট্রেলীয় টেনিসেরই পুনর্জন্ম ঘটল! |