ফের শিরোনামে রেলশহরের ত্রাস বাসব রামবাবু। তিন গাড়ির কনভয় নিয়ে সোমবার মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর ফেরার পথে মোহনপুর সেতুর কাছে গুলি চলল তাঁর কনভয় লক্ষ করে। স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য অনুযায়ী, রামবাবুর গাড়ি থেকেও পাল্টা গুলি চলেছে। সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রামবাবু। এলোপাথাড়ি গুলির মধ্যে পড়ে জখম হয়েছেন এক পথচারী। রামবাবুর এক সঙ্গীও গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
সোমবার মেদিনীপুর আদালতে খড়্গপুরের ব্যবসায়ী উদয় মাইতি হত্যা মামলার শুনানি ছিল। অন্য অনেক মামলার মতো এটিতেও অভিযুক্ত রামবাবু। এ দিন মোট তিনটি গাড়িতে রামবাবু ও তাঁর দলবল আদালতে আসে। সামনে ছিল একটি মোটরবাইক। বেলা ১২টা নাগাদ আদালতের কাজ সেরে ফেরার পথে চলে গুলির লড়াই। মোহনপুর সেতু পেরিয়ে মাতকাতপুর মোড়ে রামবাবুর কনভয়ে হামলা হয়। জায়গাটি খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, রামবাবু ফেরার সময়ে একটি গাড়ি আচমকাই ঢুকে আসে তাঁর কনভয়ে। সেই গাড়ি থেকেই ধেয়ে আসে এলোপাথাড়ি গুলি। মোটর সাইকেলে থাকা রামবাবুর ঘনিষ্ঠ সিএইচ ভেঙ্কট রাও-ও গুলিবিদ্ধ হন। এলোপাথাড়ি গুলিতে আহত হন পথচারী কৃষ্ণকান্ত রায়। তাঁর পেটে গুলি লাগে। দু’জনকেই ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে শুয়ে ভেঙ্কট রাও বলেন, “আমি ভাইয়ার (রামবাবু) বাড়ি দেখভাল করি। সেখানেই থাকি। ভাইয়ার সঙ্গে কোর্টে এসেছিলাম। ফেরার সময় কারা যেন গুলি চালাল।” |
রামবাবুকে সন্ধ্যায় ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, “আমার জন্য কিছু লোকের খড়্গপুরে ‘তোলা’ তুলতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই আমাকে মারার চেষ্টা। রাস্তায় হামলা হওয়ায় আমি খড়্গপুরে বাড়ি না ফিরে চলে গিয়েছিলাম, নারায়ণগড়ের দিকে। সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি বাড়িতে।” তাঁর অভিযোগ, এই হামলার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। কিন্তু রামবাবু নিজে এখন সরাসরি কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘকাল তিনি জেলে থাকার সময়ে গড়ে ওঠে নতুন দল। উঠে আসে শ্রীনু নাইডু, বাগ্গা রাও, শিবাজি রাও-এর নাম। এরা এখন রামবাবুর শত্রু। পুলিশ সূত্রে খবর, রামবাবু নারায়ণগড়ে চলে যাওয়ায় তাঁকে ফোন করে নারায়ণগড় থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে কিছু সূত্র পেয়েছি। সেই মতো তদন্ত চলবে।” ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার রাতে বংশীকৃষ্ণা রাও নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের বাড়ি খড়্গপুরের নিমপুরায়। পুলিশ সুপার জানান, বংশী রেল-মাফিয়া শ্রীনু নাইডুর দলের লোক।
এ দিনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ কৃষ্ণকান্তবাবুর বাড়ি ঝাড়গ্রামের খেজুরগেড়িয়ায়। মাতকাতপুরে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন তিনি। এ দিন ছেলেকে নিয়ে পথে বেরিয়ে গুলির মুখে পড়েন। কৃষ্ণকান্তবাবুর শ্যালক গৌর রায় বলেন, “আমিও কাছাকাছি ছিলাম। এত জোরে জোরে শব্দ হচ্ছিল, প্রথমে ভেবেছিলাম বাসের টায়ার ফাটল। পরে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জন পড়ে রয়েছে।” মাতকাতপুরের অদূরেই খড়্গপুর শহর। নব্বই-এর দশক ধরে রামবাবু নামটাই ছিল খড়্গপুরবাসীর কাছে ত্রাস। রেলের ঠিকাদারি ও লোহালক্কড়ের নিলাম ঘিরে রেলশহরের মাফিয়ারাজের একাধিপত্য ছিল রামবাবুর হাতে। অভিযোগ, দিতে হত ‘গুন্ডা-ট্যাক্স’-ও। সে সময় মাফিয়াদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ, দিনেদুপুরে গুলি-যুদ্ধ হয়ে উঠেছিল রোজকার ঘটনা। ১৯৯৯-এর ২৭ জুন খুন হন সিপিআই নেতা নারায়ণ চৌবের ছেলে মানস। ২০০১-এ ১১ সেপ্টেম্বর নারায়ণবাবুর আর এক ছেলে গৌতমও খুন হন। গৌতম ছিলেন কংগ্রেস নেতা। দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্ত ছিলেন রামবাবু। গৌতম চৌবে খুনের ঘটনায় হায়দরাবাদ থেকে রামবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৩ সালে ওই মামলায় রামবাবু-সহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশও দেয় আদালত। বেশ কয়েক বছর জেল খাটার পরে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান রামবাবু। তারপর থেকেই খড়্গপুরেই রয়েছেন। |