অধিগ্রহণ নয়, আইন করে সিঙ্গুরের জমির মালিকানা স্বত্ব ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছিল রাজ্য সরকার। সোমবার রাজ্যের ওই দাবিকে বিভ্রান্তিমূলক বলে আদালতে সওয়াল করলেন টাটা মোটরস-এর আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণই করেছে। আর অধিগ্রহণ করেছে বলেই, সিঙ্গুর আইনে আগ বাড়িয়ে টাটা মোটরস-কে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গত ২১ জুন ‘সিঙ্গুর জমি পুর্নবাসন ও উন্নয়ন আইন’ প্রণয়ন করে সিঙ্গুরের জমির দখল নেয় রাজ্য সরকার। তার পরেই ওই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে টাটা মোটরস। সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, রাজ্য সরকার তাদের সঙ্গে লিজ চুক্তি বাতিল না করেই, নয়া আইনের জোরে জমি অধিগ্রহণ করে তাদের উৎখাত করেছে। এমনকী, কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তা-ও ওই আইনে নির্দিষ্ট করে বলা নেই। রাজ্য সরকার টাটা মোটরস-এর করা ওই অভিযোগেরই জবাব দেওয়ার পরে, এ দিন থেকে ফের সংস্থার পক্ষ থেকে তার পাল্টা উত্তর দেওয়া শুরু হয়েছে।
সমরাদিত্যবাবু এ দিন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়কে বলেন, অধিগ্রহণ যদি না-ই হয়ে থাকে, তা হলে রাজ্য সরকার জনগণের টাকায় টাটা মোটরস-কে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইছে কেন! সংবিধান অনুযায়ী অধিগ্রহণ না করলে তো সরকারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও দায়িত্বই থাকে না। অথচ রাজ্য সরকার বলছে তারা খুব উদার, তাই সিঙ্গুর আইনে ‘যা খুশি’ ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ব্যবস্থা রাখা আছে। সমরাদিত্যবাবু এ দিন আদালতের কাছে প্রশ্ন করেন, কোনও বাড়িওয়ালা কি ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে যায়? রাজ্যের ওই ‘ফিরিয়ে নেওয়ার’ যুক্তি অর্থহীন বলেই তিনি দাবি করেন। সমরাদিত্যবাবু বলেন, সিঙ্গুরের জমি যে খাস করে নেওয়া হচ্ছে, তা রাজ্যের আইনেই স্পষ্ট করে বলা আছে। তাঁর মতে, আইনের নানা ব্যাখ্যা দেখলে দেখা যাবে, ‘অধিগ্রহণ’ এবং ‘ফিরিয়ে নেওয়া’-র অর্থ কোথাও কোথাও একই। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার বারবারই আদালতে দাবি করেছে, যে গাড়ি-প্রকল্পের জন্য সিঙ্গুরের জমি চাষিদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে টাটা মোটরস-কে দেওয়া হয়েছিল, সংস্থা কর্তৃপক্ষ সেই প্রকল্প করতে পারেননি। নানা অজুহাত দেখিয়ে সিঙ্গুর থেকে কারখানা গুটিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছেন। এই কারণেই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রেখে সিঙ্গুরের জমির মালিকানা স্বত্ব ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ সিঙ্গুরের জমির মালিক নয় টাটা মোটরস নয়, রাজ্য সরকার।
আদালতে সমরাদিত্যবাবু জানান, সিঙ্গুরের জমির লিজ চুক্তি হয়েছিল টাটা মোটরস-এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের। সে ক্ষেত্রে লিজ চুক্তি বাতিল করার অধিকার রয়েছে কেবল নিগম কর্তৃপক্ষের। কিন্তু রাজ্য সরকার মাঝখান থেকে আইন প্রণয়ন করে জমি অধিগ্রহণ করে নিয়ে তাঁর মক্কেলকে বঞ্চিত করেছে। |