সম্পাদকীয় ২...
উন্নয়নই সমাধান
প্রতি সাতটির ভিতরে একটি বিবাহের পাত্রী নাবালিকা। স্থান কলিকাতা। কাল ২০১১। এই তথ্যটি সম্প্রতি বাহির হইয়াছে যদিও, কিন্তু বাস্তবের অভিজ্ঞতায় ইহা অভিনব কিছু নহে। রাজ্যের মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এই বাস্তবটিকে স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। মন্ত্রিমহোদয়ার পর্যবেক্ষণ, নিছক আইন করিয়া এই সমস্যার সমাধান করা যাইবে না। কারণ, আইন আছে বিস্তর। বৈধ বিবাহের জন্য ন্যূনতম বয়ঃক্রমটি কী, তাহা আইনমাফিক স্থির করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সেই বিধি ভঙ্গ করিলে কী হইতে পারে, সেই সব কানুনি বিধানও খুব স্পষ্ট। অথচ, এখনও খাস মহানগরীতে, আইনরক্ষা এবং প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্রে, প্রতি সাতটির ভিতরে একটি বিবাহ অবৈধ। ইহা মূলত সচেতনতার প্রশ্ন। এই ধরনের বিবাহের কুফল কী, কেন ইহা পরিত্যাজ্য, সেই মর্মে বিবিধ প্রচার চলিয়াছে। এখনও পর্যন্ত ফল যে বিশেষ মিলিয়াছে, এমন নহে। অথচ, এই জাতীয় প্রচারকর্মটি অপরিহার্যও বটে। এই পর্যন্ত কোনও সমস্যা নাই, কিন্তু এই প্রচারের বিষয়ে আসিয়াই সংকটের সূচনা। কারণ, এই ধরনের বিবাহ বন্ধ করিবার লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যক্রম এই পর্যন্ত পৌঁছাইবার পরেই কার্যত শেষ হইয়া যায়। সমস্যার প্রকৃত সমাধানটির বিষয়ে কথাই হয় না।
সেই সমাধানের নাম উন্নয়ন। ইহা নিছকই তাত্ত্বিক দাবি নহে, বাস্তবের সত্য। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মেয়েদের বিবাহের বয়স বাড়িতেছে। লক্ষণীয়, মেয়েরাই বিবাহে অনাগ্রহী। তাঁহারা কর্মে নিযুক্ত, অর্থ উপার্জন করিতেছেন, স্বাবলম্বনের স্বাদ পাইয়াছেন, ফলে স্বামীর হাত না ধরিলে জীবনে দাঁড়াইতে পারিবেন না, এমন নহে। অন্য দিকে, তাঁহারা পরিবারের নিকট সেই ধরনের কোনও বোঝাও নহেন, যাঁহাকে দারিদ্রগ্রস্ত পরিবার কোনওক্রমে বিদায় করিতে পারিলে স্বস্তি পাইবে। বরং, তাঁহাদের উপার্জনের মাধ্যমেই সংসারে বহুবিধ কাজ হইতেছে। সুতরাং, বিরাট কোনও সমাজবিপ্লব করিতে হয় নাই। কার্যত, আপনা হইতেই একটি সামাজিক রূপান্তর ঘটিয়া গিয়াছে। এই রূপান্তরটিকে স্মরণে রাখা জরুরি। কলিকাতায় যে সকল নাবালিকা বিবাহ করিতে বাধ্য হন, তাঁহাদের অধিকাংশের পরিবারেই একটি বিপুল নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। সেই নিরাপত্তাহীনতা হইতেই নাবালিকারা নিতান্তই দায় হিসাবে পরিগণিত। উন্নয়নের স্পর্শ আসিলে এই মৌলিক ব্যাধিটিরই চিকিৎসা সম্ভব হইবে। পাশাপাশি, মেয়েদের একটি নিজস্ব স্বরও প্রকাশিত হইবার সুযোগ পাইবে।
সমস্যা হইল, অনুন্নয়ন এবং তজ্জনিত দারিদ্র এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছে যে, নাবালিকাদের স্বর, তাঁহাদের পড়াশোনা করিবার বাসনা এবং জীবনের অন্য নানাবিধ চাহিদা হয় প্রকাশিত হইতেছে না, অন্যথায় প্রকাশিত হইলেও তাহা আদপেই গুরুত্ব পাইতেছে না। ফলে, এক ধরনের বলপূর্বক বিবাহের নিরানন্দ আসরেই সেই নাবালিকাদের কণ্ঠরুদ্ধ হইতেছে নিয়মিত। এই জাতীয় বিবাহ বন্ধ করিবার লক্ষ্যে প্রচার চলিতেই পারে, সমাজমানসের কাঙ্খিত পরিবর্তনে তাহা একটি ইতিবাচক ভূমিকাও গ্রহণ করিতে পারে, কিন্তু উন্নয়নের দাওয়াইটি না-আসিলে কাজের কাজ হওয়া কঠিন। নাবালিকা-বিবাহ এমনই একটি সংঘটনা যাহা একটি বিশেষ মানসিকতা-প্রসূত তো বটেই, কিন্তু ইহার সহিত আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সম্পর্ক নিবিড়। শুধুই প্রচারে সেই বাস্তবতার বদল ঘটিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.