‘কঠোর হাতে’ দুর্নীতিদমনের প্রতিশ্রুতি তো রয়েছেই। পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলোয় অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন মনমোহন-রাহুল। পূর্ব প্রতিশ্রুতিমতো গত সপ্তাহে সংসদে জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপন বিল পেশ হয়েছে। মাওবাদী-অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়নে বিশেষ প্যাকেজ বা নীতি ঘোষিত হতে পারে। এ জন্য কাল মাওবাদ কবলিত ৬০টি জেলার জেলাশাসকদের দিল্লিতে বৈঠকে ডেকেছেন গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
সুসংহত কর্মসূচি (ইন্টিগ্রেডেড অ্যাকশন প্ল্যান)-এর আওতায় এই ৬০টি জেলায় পরিকাঠামো উন্নয়নে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে কেন্দ্র। মাওবাদী প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হতে পারে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা তার সুবিধা পাবে। এখন রাজ্যের শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ওই যোজনার আওতায়।
গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই রমেশ জানিয়েছিলেন, তাঁর মন্ত্রককে কাজে লাগিয়ে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে অনুন্নয়নের বঞ্চনা দূর করাই হবে তাঁর অগ্রাধিকার। তার পরে গত দু’মাসে বিহার-ছত্তীসগঢ়-অন্ধ্র-ওড়িশার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এলাকা তিনি ঘুরে দেখেছেন। কথা বলেছেন সেখানকার জেলাশাসকদের সঙ্গে। সেই প্রক্রিয়ারই পরবর্তী পর্যায়ে কাল দিল্লিতে বসছে ওই বৈঠক। সেখানে কী হবে?
মন্ত্রক সূত্রের খবর: মাওবাদী-সমস্যা কবলিত জেলাগুলোর ডিএম-দের মতামতের ভিত্তিতে কালকের বৈঠকে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে। যেমন, আদিবাসী অঞ্চলে জমির অধিকার সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি করা। এ ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষকে আইনি মদত জোগাবে। কারণ কেন্দ্রের মতে, আদিবাসীদের মূল সমস্যা বনাঞ্চল তথা তাঁদের জমির অধিকারকে ঘিরে। এবং তাঁদের সেই আবেগকেই মাওবাদীরা উস্কে দিচ্ছে। উপরন্তু অনগ্রসর ওই সব জায়গায় মাওবাদীরা অনেক রাস্তাই খুঁড়ে ফেলছে। কোথাও মাইনও পাতছে। এটা রুখতে ওখানে কংক্রিটের রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাইরের সরকারি কর্মীরা ওখানে কাজ করতে চান না বলে বেশি করে স্থানীয়দের নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে স্থানীয় ঠিকাদার নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত হতে পারে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সরকারের তরফে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার বার্তা গেলে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।” রমেশের কথায়, “পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি স্বরোজগার প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করাও মন্ত্রকের অন্যতম উদ্দেশ্য।”
তবে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একাংশের মতে, এই তৎপরতার নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। মনমোহন সিংহ ও রাহুল গাঁধী-সহ সরকার তথা কংগ্রেসের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা মনে করছেন, দুর্নীতি-প্রশ্নে সরকারের ভাবমূর্তিতে যে ছোপ পড়েছে, সামাজিক প্রকল্পের রূপায়ণেই তা মোছা সম্ভব। দু’দিন আগেই কংগ্রেসের এক বৈঠকে রাহুল বলেছেন, “এই ধরনের প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণই দীর্ঘমেয়াদে অনুঘটকের কাজ করবে। ঠিক যে ভাবে ইউপিএ-র প্রথম জমানায় একশো দিনের কাজের গ্যারান্টি ও কৃষি-ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত কংগ্রেস সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।” রাহুল-জয়রামের ঘনিষ্ঠতা কংগ্রেস মহলে সুবিদিত। মাওবাদী এলাকার উন্নয়নে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সক্রিতার নেপথ্যে এই সমীকরণটা গুরুত্ব পাচ্ছে। |