আডবাণী-অণ্ণা-রামদেব সবারই অস্ত্র দুর্নীতি দমন
যাত্রায় জমজমাট দেশের রাজনীতি
বার যাত্রার হিড়িক উৎসবের মরসুমে । চিৎপুর নয়, রাজধানী সরগরম এ বার রাজনীতির যাত্রাপালায়।
এক দিকে রথে চেপে লালকৃষ্ণ আডবাণী, তো অন্য দিকে অণ্ণা হজারে ও তাঁর ‘টিম’। যাত্রার লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন যোগগুরু রামদেবও। তবে সকলেই আছেন নিজ-নিজ ছন্দে। সকলেই পৌঁছে যেতে চান আম-জনতার দোরগোড়ায়। এবং সকলেরই অস্ত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন।
পুজোর পরেই গুজরাত থেকে ‘স্বঘোষিত’ রথযাত্রা শুরু করতে চান লালকৃষ্ণ আডবাণী। সম্ভবত, ১১ অক্টোবর জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মতিথিতে সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মস্থল গুজরাতের আনন্দ জেলায় করমসাদ গ্রাম থেকে শুরু হতে পারে এই রথযাত্রা। যদিও দলের অনেক নেতা চাইছেন, যাত্রা শুরু হোক পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্মদিন ২৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৯০ সালে এই দিনেই সোমনাথ থেকে রামরথযাত্রা শুরু করেছিলেন আডবাণী। যাত্রা শুরুর প্রস্তাব রয়েছে ২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীতে, পোরবন্দর থেকেও। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর-পূর্বের রাজ্য হয়ে উত্তর ভারত দিয়ে দিল্লি ফিরতে চান আডবাণী। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অণ্ণা হজারের আন্দোলন দেশ জুড়ে যে ভাবে সাড়া ফেলেছে, রাজনৈতিক দলগুলির কাছে সেটি অশনি-সঙ্কেত। বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি-র কাছে সেটি ব্যর্থতার দিকও বটে। কারণ, অণ্ণার মতো অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আসলে রাজনৈতিক পরিসরই দখল করে নিচ্ছেন। ফলে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আডবাণী এখন সেই জমিরই দখল ফিরে পেতে চান। ফলে গোটা বিজেপি নেত্ত্বও এখন ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ এই রথযাত্রাকে সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কিন্তু আডবাণীর রথযাত্রার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অণ্ণা ও রামদেবের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও আর চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন। অণ্ণাও দেশ জুড়ে দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে সাংসদরা তাঁর জন- লোকপাল বিলের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে অণ্ণা ও তাঁর ‘টিম’-এর সদস্যরা গিয়ে প্রচার করবেন। কিন্তু আডবাণীর রথযাত্রা ঘিরে এ বার বিবাদ শুরু হয়েছে ‘টিম-অণ্ণা’-র মধ্যে। ক’দিন আগেই আডবাণীর প্রশস্তিতে পঞ্চমুখ হয়েছিলেন ‘টিম-অণ্ণা’-র অন্যতম সদস্য কিরণ বেদী। আডবাণীর রথযাত্রাকেও তিনি সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন। ‘টিম’-এর আর এক সদস্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল কিন্তু কিরণের সঙ্গে একমত নন। অরবিন্দের মতে, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানাতে পারি না।”
অন্য দিকে দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে উৎখাত হওয়ার পর যোগগুর রামদেবও এ মাসেরই ২০ তারিখ থেকে এক যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করেছেন। তবে এ বারে আর দিল্লি নয়, উত্তরপ্রদেশ থেকে যাত্রা শুরু করতে চান তিনি। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব হয়ে মূলত উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতেই তিনি সফর করতে চান। উদ্দেশ্য, কালো টাকা উদ্ধারের দাবিতে যাত্রা করে প্রায় দশ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া।
আডবাণীর যাত্রার সময়ই কেন বাকিদের আলাদা করে যাত্রায় বেরোতে হল? জবাবে বিজেপির শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “এই প্রশ্নের জবাব আমার পক্ষে কী করে দেওয়া সম্ভব? প্রত্যেকেই নিজের-নিজের যাত্রার পরিকল্পনা করেছেন। কোনও সমন্বয় করে এটা করা হয়নি।”
কিন্তু সরকারের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের রাশ এ বারে আডবাণী নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সরগরম হয়ে উঠছে রাজনীতির মঞ্চও। যে ভাবে অনন্ত কুমারের মতো বিজেপি-র শীর্ষ নেতা আডবাণীর রথের সারথি হচ্ছেন, তাতে নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্বও। আডবাণীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “আরও একটি রথযাত্রার রাজনীতির সাক্ষী হতে চলেছে দেশ। কিন্তু তার আগে আডবাণী কি দয়া করে জানাবেন যে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি লোকপাল বিল নিয়ে এক বারও সরব হয়েছিলেন কি না? কালো টাকা উদ্ধারে এনডিএ জমানায় ক’টি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল? কোনও টাস্ক ফোর্স কি গড়া হয়েছিল? রথযাত্রা কী করে দুর্নীতি দমন করবে সেটাই বোধগম্য নয়। বদলে আডবাণী যদি বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে দুর্নীতি দমনে কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতেন তা হলে সেটা কিছুটা অর্থবহ হতে পারত।”
বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে যাঁদের বিরুদ্ধে, এমন সব বিজেপি নেতার নাম রথযাত্রার সঙ্গে জুড়ে দিতে এ দিন সিঙ্ঘভির কটাক্ষ, “আডবাণীর রথে সারথি হবেন ইয়েদুরাপ্পা, পদাতিক সৈনিক নিশঙ্ক পোখরিয়াল। আর রথে তাঁর দু পাশে বসবেন বঙ্গারু লক্ষণ, দিলীপ সিংহ জুদেও আর রেড্ডি ভাইরা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.