|
|
|
|
দাঙ্গা-মামলা নিম্ন আদালতে পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট |
মোদীর ‘জয়’ দাবি করছে বিজেপি, ভিন্নমত কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গুজরাত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ফের তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি।
লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে রবিশঙ্কর প্রসাদ বা প্রকাশ জাভড়েকর গোটা বিজেপি নেতৃত্ব শীর্ষ আদালতের আজকের রায়কে নরেন্দ্র মোদীর ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরে গুজরাত দাঙ্গার কলঙ্ক দাগ মুছে ফেলতে চাইছেন। অন্য দিকে কংগ্রেস ও বাম নেতাদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট নরেন্দ্র মোদীকে মোটেই ‘ক্লিনচিট’ দেয়নি। বরং তারা যাবতীয় তথ্য নিম্ন আদালতের বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা যা তদন্ত হয়েছে, এমনকী সর্বোচ্চ আদালত নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) রিপোর্টও ম্যাজিস্ট্রেটের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলে একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়ে পিঠ চাপড়ানো বন্ধ করুক বিজেপি।
সর্বোচ্চ আদালতের কোন রায়ে আজ সরগরম হল রাজধানীর রাজনীতি? |
|
২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময়ে গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যায় নিহত হন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি। ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে গুজরাত-দাঙ্গার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। ‘সিট’-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে আজ কোনও রায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি ডি কে জৈনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আমদাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ‘সিট’ তাদের চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট আমদাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জমা দেবে। একই সঙ্গে বিচারপতিদের নির্দেশ, নিম্ন আদালত যদি মামলা গুটিয়ে ফেলতে চায়, তা হলে তাদের আবেদনকারী জাকিয়া জাফরির সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং ‘সিট’-এর তদন্ত রিপোর্ট ও সাক্ষীদের বয়ানের প্রতিলিপি তাঁকে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গেই সুপ্রিম কোর্ট এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, দাঙ্গা মামলাগুলির ব্যাপারে তারা আর নজরদারি করবে না।
সর্বোচ্চ আদালত নিম্ন আদালতকে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দিলেও বিজেপি নেতৃত্ব একেই হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদীকে ‘কলঙ্ক-মুক্ত’ করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। আডবাণী-জেটলিদের বক্তব্য, গুজরাত দাঙ্গায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে মোদীর বিরুদ্ধে এত দিন যে প্রচার হত, আজ তা খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী যে দাঙ্গার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত ছিলেন না, আজ তা-ও প্রমাণ হয়ে গেল। এটাও প্রমাণ হল, রাজনৈতিক অপপ্রচার কখনওই আদালতে তথ্য-প্রমাণ বলে গৃহীত হয় না। বিজেপি শীর্ষ নেতাদের দাবি, গত প্রায় দশ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করা হলেও আজ সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে প্রমাণিত, সেই ‘প্ররোচনা’র কোনও প্রমাণই নেই। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে স্বস্তির শ্বাস ফেলে নরেন্দ্র মোদী টুইট করে জানিয়েছেন, “ঈশ্বর মহান!” সুষমা স্বরাজ টুইট করেছেন, “নরেন্দ্রভাই অগ্নিপরীক্ষায় বিজয়ী হলেন। সত্যমেব জয়তে।” বিজেপি শিবির আজকের দিনটি বিজয় উৎসবে পরিণত করলেও প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদী কি সত্যিই ‘মুক্তি’ পেলেন?
কংগ্রেস-সিপিএম-সহ বিরোধীদের বক্তব্য, না। মোদী-বিরোধী বলে পরিচিত সমাজকর্মী তিস্তা শেতলওয়াড় বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়কে ভুল ভাবে প্রচার করে লাভ নেই। সর্বোচ্চ আদালত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে আদৌ ছাড়পত্র দেননি। শুধু মাত্র যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নিম্ন আদালতে। তারাই এখন সব কিছুর বিচার করবে। মোদীকে ক্লিনচিটের প্রসঙ্গ আসছে কোথা থেকে?” একই মত কংগ্রেসেরও। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “সর্বোচ্চ আদালত কোনও ভাবেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ছাড়পত্র দেয়নি। দশ পৃষ্ঠার রায়ে কোথাও সে কথা বলা হয়নি। অথচ বিজেপি স্বভাবগত ভাবে সত্যের অপলাপ করে নিজেরাই নিজেদের অভিনন্দন জানিয়ে চলেছে! প্রকৃত ঘটনা হল, সর্বোচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের বিবেচনার জন্য সব তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছে। তারাই এগুলি বিবেচনা করে দেখবে।” সরব হয়েছে বামেরাও। সিপিএমের পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতের রায় কোনও ভাবেই মোদীকে ছাড়পত্র দেওয়া নয়। নিম্ন আদালতের উচিত, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা। যাতে অভিযোগকারীরা দ্রুত বিচার পান।
|
গুলবার্গ হত্যা |
|
আমদাবাদের চমনপুরা এলাকায় গুলবার্গ সোসাইটি আবাসনের বাসিন্দা ছিলেন মূলত মুসলিমরা। ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার সময়ে সেখানে হামলা হয়। কুপিয়ে, পুড়িয়ে খুন করা হয় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি-সহ ৬৯ জনকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জাফরি মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ অফিসারদের ফোন করে সাহায্য চাইলেও পাননি। |
|
|
ঈশ্বর মহান
নরেন্দ্র মোদী |
|
|
|
|
অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ
নরেন্দ্রভাই।
সত্যমেব জয়তে। সুষমা স্বরাজ |
মোটেই ছাড় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।
মোদীর বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না,
নিম্ন আদালত ঠিক করবে।
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি |
|
|
|
|
জয় নয়। কারণ মামলাটি
চার্জশিট
দেওয়ার পর্বে গেল। তিস্তা শেতলওয়াড় |
আশা ছড়িনি।
দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য তৈরি।
জাকিয়া জাফরি |
|
|
সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ের দিকে তাকিয়ে ছিলেন জাকিয়া। রায় শুনে হতাশ জাকিয়া-র কথায়, “সুপ্রিম কোর্টের উপরে এখনও আস্থা রয়েছে। তবে কিছু বিষয় চোখ এড়িয়ে গিয়েছে আদালতের।” সিট-এর তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমাদের সব প্রার্থনাই ব্যর্থ হল!” তবে লড়াই ছাড়তে নারাজ জাকিয়া ফের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলবেন।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবছেনই না। তাঁরা মনে করছেন, এসআইটি-কে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হলেও সুপ্রিম কোর্টই তাতে নজরদারি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিভিন্ন মামলায় এখন জেলে রয়েছেন ইউপিএ সরকারের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, যথাযথ তথ্য-প্রমাণ থাকলে সুপ্রিম কোর্ট মোদীকে কোনও ভাবেই ছেড়ে কথা বলত না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এসআইটি-র রিপোর্টে মোদীর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণই ছিল না। ফলে সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষে মোদীকে ‘রেহাই’ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও গতি ছিল না।
|
সিট -তদন্ত |
• ২৬ মার্চ, ২০০৮: গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তে বিশেষ দল (স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট) গঠন সুপ্রিম কোর্টের
• ২৭ এপ্রিল, ২০০৯: এহসান জাফরি-হত্যায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে সিটকে তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
• ৩০ জুলাই, ২০০৯: সিট এক্তিয়ার ছাড়াচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ মোদী সরকারের
• ২৭ ও ২৮ মার্চ, ২০১০: জাফরি হত্যায় মোদীকে জেরা সিট-এর
• ফেব্রুয়ারি, ২০১১: সুপ্রিম কোর্টে পেশ সিট-রিপোর্ট
• ৫ মে, ২০১১: আদালত-বান্ধব রাজু রামচন্দ্রনকে সিট রিপোর্ট দেখার নির্দেশ
• ২৫ জুলাই, ২০১১: সুপ্রিম কোর্টে রামচন্দ্রনের রিপোর্ট
|
১২ সেপ্টেম্বর ২০১১
নিম্ন আদালতে সিট রিপোর্ট পেশের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
|
|
|
|
|
|
|