বেদে-জীবন থেকে
বায়োস্কোপের স্মৃতির কোলাজ

...গন্ধ এসেছে
কালো কাপড়ে মাথা ঢেকে বায়োস্কোপে সিনেমা দেখার সুযোগ যদি ফিরে আসে?
নায়ক-নায়িকার কোনও অণুগল্প হয়তো থাকবে না সেখানে, কিন্তু বায়োস্কোপে চোখ রাখলেই ভেসে উঠবে পাহাড়-পর্বত, গাঁ-গঞ্জ, শহরের টুকরো টুকরো কোলাজ। আলো-আঁধারির সেই অণু-ছবিতে চোখে পড়বে বরাভয়ের প্রতিভূ সপরিবার উমাকে। যে ভাবে গান, সংলাপ ভেসে আসত বায়োস্কোপে লাগানো চোঙে, ঠিক সে ভাবেই জগজ্জননীকে দেখার ফাঁকে গুনগুনিয়ে উঠবে, “আয় রে ছুটে আয়, পুজোর গন্ধ এসেছে”...।
এই বায়োস্কোপ দেখার নস্টালজিয়ায় কি তা হলে এক বার ছুট লাগাবেন পূর্ব বড়িশার ‘শীতলাতলা কিশোর সঙ্ঘের’ মাঠে? গেলে চোখ টানবেই বায়োস্কোপের উপর রং-তুলির শৈল্পিক নকশা। কিশোর সঙ্ঘের বাসিন্দারাই নিজেদের আলপনা, পটচিত্রে সাজিয়েছেন বায়োস্কোপ-মণ্ডপ।
পুরনোকে ফিরে দেখার ভাবনায় সাপুড়ে-বেদেদের জীবন নিয়ে ‘মল পল্লি সর্বজনীন পুজো কমিটি’র মণ্ডপ সাজাচ্ছেন সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। সাপের ঝাঁপির ধাঁচে মণ্ডপ। সাপ যে ভাবে ঝাঁপিতে গুটিয়ে শুয়ে থাকে, সে ভাবেই পাক খেতে খেতে দর্শনার্থীরা পৌঁছে যাবেন প্রতিমার কাছে। ফণা তোলা সাপের নীচে মাংতা (বেদে উপজাতি) কন্যার মতোই আটপৌরে জংলা সাজে দুর্গা। গুটিয়ে থাকা সাপের লেজের উপরে লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিককে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উমার হাত, গলায় মাংতা মেয়েদের মতোই রূপোর মাদুলি, তাবিজ, হাঁসুলি।
অসুরনাশিনী উমা এখানে বেদিনী কন্যা। তাই তাঁর হাতে ত্রিশূলের বদলে খন্তা (এই অস্ত্রেই বেদিনীরা মাটি কুপিয়ে সাপ বার করে)। মণ্ডপ জুড়ে বেদেদের ঘর-গেরস্থালির টুকরো ছবি, বেহুলা-লখিন্দরের জীবনকথা। ভেসে আসবে বীণের ধুন। এমনই আবহ বেহালার ‘নন্দনা যুব সঙ্ঘে’র মণ্ডপে। বেদে-বেদেনীদের জীবনচর্যাই এই মণ্ডপের ভাবনায় ধরা দেবে। সাপ খেলার পরিবেশ ছেড়ে এর পরে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন ছো নাচের আঙিনায়। ‘সূর্যনগর সর্বজনীন’-এর মণ্ডপে। শ’তিনেক ছো মুখোশ বর্ণিল মণ্ডপ জুড়ে। মোরাম বিছানো পথ বেয়ে মণ্ডপে যেতে যেতে ধামসা-মাদলের দ্রিমি দ্রিম তালে এক লহমায় শহর ছেড়ে মন উড়ে যাবে পুরুলিয়ার ছো-পুরীতে।
মনে মনে দূর-দূরান্তে পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ শারদীয় মহানগরীর আনাচে-কানাচে। তাই সবুজে ঘেরা পাকদণ্ডী বেয়ে দুর্গম পাহাড়ের কোলে মন্দিরে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা বরাহনগরের ‘কর্মী সঙ্ঘে’। পাহাড় ছেড়ে সমুদ্রের আকর্ষণও দর্শনার্থীদের চুম্বকের মতো টানবে ‘কেন্দুয়া সর্বজনীন’-এর মণ্ডপে। নৌকার ছইয়ের ফুটো দিয়ে ঠিকরে পড়া চাঁদের আলোয় জীবন্ত ভাঙা ঘরে মাঝি-মাল্লাদের ঘরবসতের লড়াকু দিন-নামচা। চোখ টানবে সমুদ্রের পাড়ে মেলার পসরা। ঠিক যেন সমুদ্রপাড়ে বেড়াতে গিয়ে টুকিটাকি কিনে নেওয়ার সুযোগ।
প্রকৃতির টানে তালগাছ ঘেরা গ্রামীণ মণ্ডপ চোখে পড়বে বেহালা ‘আদর্শপল্লি’র মণ্ডপে গেলে। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি তালগাছ দেখে চমক লাগবেই। মাঝারি পুকুর পেরিয়ে তালপাতা, চাটাইয়ে ছাউনি দেওয়া মণ্ডপে ঢুকতে ঢুকতে নজর কাড়বে তালগাছ কেটে তৈরি বিভিন্ন মূর্তি কোথাও এক গাঁয়ের বধূ বঁটিতে মাছ কাটছেন, কোথাও মাথায় কলসী নিয়ে জল আনছেন মহিলারা, কোথাও বা ধান ঝাড়ছেন। একচালার প্রতিমা দেখতে দেখতে ঘোর লাগবে হাতে আঁকা আকাশ, ধানখেত, সবুজ মাঠ দেখে।
কল্পনার রং-তুলিতে একের পর এক এমন ভাবনায় এখন শুধু দর্শক টানার অপেক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.