শোলাতেই সিদ্ধহস্ত, দুর্গা গড়ছে বনকাপাশি
ক’দিন আগেও খুনোখুনি হয়েছে পাশের গুসুম্ব গ্রামে। তার আঁচে মঙ্গলকোটের বাতাস এখনও ভারী। তা বলে ‘হালকা দুর্গা’ গড়া থামেনি বনকাপাশিতে।
গোটা গ্রামটাই শোলা-শিল্পীদের আখড়া!
তাই গ্রামের নাম বনকাপাশি হলেও সবাই চেনে শোলাগ্রাম নামেই। পুজোর মরসুমে আট থেকে আশি সকলেই দেবীর সাজ তৈরিতে হাত লাগান।
মঙ্গলকোটের এই বনকাপাশি গ্রামের মিহির পণ্ডিত অনেকের মধ্যে নিজের সত্ত্বা চিনিয়ে পুজো-কর্তাদের মন জয় করে নিয়েছেন। আর এই ‘ব্রাত্যজন’-র ছোঁয়াতেই প্রতি বছর কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গা সজ্জিত হন। এ বারও তাঁর শিল্পকর্ম শোভা পাবে ভবানীপুরের জাগৃতি সঙ্ঘ থেকে উত্তরপাড়া টাউন ক্লাবে।
এই গ্রামের আশিস মালাকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী। তাঁর বাবা প্রয়াত আদিত্যবাবু ও ঠাকুরমা কাত্যায়নীদেবীও শোলাশিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে আদিত্যবাবুকে ‘শিল্পগুরু’ সম্মানে ভূষিত করে কেন্দ্র সরকার। এই পরিবারের হাত ধরেই বনকাপাশি গ্রামে শোলার গয়না তৈরির কাজ শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা গ্রাম শোলার কাজে নিযুক্ত হয়ে পড়েন। একটা সময় ছিল, যখন কলকাতার কুমারটুলি, কালীঘাটের পটুয়াপাড়ার মৃৎশিল্পীরা বনকাপাশি থেকে দেবীর সাজ নিয়ে যেতেন। এখন অবশ্য পুজো-কর্তারাই সরাসরি শোলা-শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর তাঁদের মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে ‘থিম’ অনুযায়ী দেবীকে সাজাতে বলেন।
নিজস্ব চিত্র।
‘থিম’ পুজোর দৌলতে শিল্পীদের কাজও আগের থেকে বেড়েছে। বনকাপাশি গ্রামের পণ্ডিতপাড়ার বাসিন্দা মিহিরবাবু নিজের শিল্পকর্ম দিয়ে কারিগর থেকে শিল্পী মর্যাদা ছিনিয়ে এনেছেন। তাই কলকাতা ছাড়াও মুম্বই, দিল্লিতেও তাঁর কাজ শোভা পেয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি কলকাতার চালতাবাগান, মুদিয়ালি, ভবানীপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় দেবী দুর্গাকে সাজিয়েছেন।
মিহিরবাবুর কথায়, “এখনও অনেক গ্রামে তথাকথিত উঁচু জাতের লোকেরা আমাদের মন্দিরে ঢুকতে দেন না। দেবীর পায়ে অঞ্জলি পর্যন্ত দিতে দেন না। নিজের যোগ্যতায় প্রতি বছর দেবীদূর্গাকে সাজাতে পারি, এটা কি কম কথা?” সারা বছরই বছর পয়তাল্লিশের মিহিরবাবু তাঁর মাটির বাড়িতেই শোলার গয়না থেকে মডেল তৈরির কাজ নিয়ে মগ্ন থাকেন। এ বারও তিনি সেখানেই উত্তরপাড়া টাউন ক্লাবের জন্য শোলার তৈরি প্রতিমা ও ভবানীপুরের মণ্ডপের জন্য দেবী দুর্গার সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, “নতুন ডিজাইন দেখাতে না পারলে পুজো-কর্তারা আমাকে দেবীকে সাজানোর দায়িত্ব দেবেন কেন?”
পড়ার ফাঁকে মিহিরবাবুকে সাহায্য করে তাঁর দুই ছেলে আর এক মেয়ে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র গৌরাঙ্গ, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নিতাই এবং মেয়ে প্রতিমা পণ্ডিত। সংসারের কাজ সামলে মিহিরবাবুর স্ত্রী সুমিত্রাদেবীও শোলার গয়না তৈরি করেন। তাঁদের কথায়, “তিনি (মিহিরবাবু) ছাড়াও ৪-৫ জন কর্মচারী রয়েছেন। পুজোর সময়ে কাজের চাপ বেশি থাকে, তাই আমরাও ওঁকে সাহায্য করি।”
মিহিরবাবুর বাবা দিবাকর পণ্ডিতও ভাল শোলার কাজ করতেন। মিহিরবাবুর কথায়, “আমার বাবা প্রকৃত পণ্ডিত ছিলেন। গ্রামের মানুষও শিল্পী বলে সমীহ করতেন। সেই ধারাই বজায় রাখতে চাই।”
মিহিরবাবু প্রায় ৩০ বছর এই কাজে যুক্ত। উত্তরপাড়া টাউনক্লাবের কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, “ওঁর কাজে মুগ্ধ হয়ে আমরা শোলার দুর্গা তৈরির বরাত দিয়েছি।” আশিস মালাকারের কথায়, “ভিড়ে না হারিয়ে মিহির শিল্পী হিসেবে অনন্য হয়ে উঠেছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.