পুরসভার নিষেধ কার্যত ‘উপেক্ষা’ করে বর্ধমানের রাজাদের আমলের একটি বাড়ি ভেঙেচুরে শপিং মল ও মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির কাজ চলছে বলে অভিযোগ।
শহরের আমড়াতলা লেনে ওই পুরনো বাড়ি ভাঙার বিরুদ্ধে গত ১৭ অগস্ট পুরসভার কাছে গণস্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছিলেন এলাকার বেশ কিছু মানুষ। কিন্তু ইতিমধ্যেই বাড়িটির বড় অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত ৭ সেপ্টেম্বর পুরপ্রধান আইনুল হক চিঠি দিয়ে নির্মানকারীদের জানান, পুরসভার অনুমতি না নিয়েই হোল্ডিং নম্বর ২৭০-এ নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। তা যেন বন্ধ করা হয়।
কিন্তু তার পরেও দিব্যি কাজ চলছিল। অন্যতম কর্ণধার অনুপকুমার মাথুর রবিবার বলেন, “সব ব্যবস্থা করেই আমরা কাজে নেমেছি। পুরসভা নাম-কা-ওয়াস্তে চিঠি দিয়েছে ঠিকই, তবে তাতে কাজ বন্ধ করার কারণ নেই।” সোমবারই অবশ্য তাঁদের পুরসভায় ডেকে পাঠানো হয়। পুরপ্রধান বলেন, “ওঁরা অনুমতিপত্র বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওঁরা যতটা নির্মাণ করেছেন, তা ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে।” |
আমড়াতলা লেনের ওই বাড়ির মালিক এক সময়ে ছিলেন বর্ধমানের রাজা বিজয়চন্দ মহতাবের ভাগ্নে শঙ্করদাস খন্না। রাজ এস্টেটের ম্যানেজার, রাজা বিনবিহারী কপূরের বড় মেয়ে শ্রীদেয়ীর পুত্র ছিলেন শঙ্করদাস। বর্ধমানের রাজা আফতাবচন্দ পরে শ্রীদেয়ীর ভাই, বনবিহারীর ছেলে বিজনবিহারীকে দত্তক নেন। বিজনবিহারীরই নতুন নাম হয় বিজয়চন্দ। তিনিই শঙ্করদাসের বাড়িটি তৈরি করান বলে অনেকের দাবি। শঙ্করবাবু ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। এক সময়ে বর্ধমানে তাঁর এতটাই প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ছিল যে পুর নির্বাচনে যাঁর হয়ে তিনি প্রচারে নামতেন, তিনিই বিপুল ভোটে জিততেন।
পুরসভার হেরিটেজ কমিটির প্রাক্তন সদস্য নিশীথকুমার দত্তের খেদ, একদা ‘সমাজসেবী’ বলে পরিচিত শঙ্করদাস প্রায় বিস্মৃত। তাঁর বাসস্থান সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ দে, রামদেব মণ্ডল, দীপাঞ্জন দাসেদের অভিযোগ, পুরসভার অনুমতি না নিয়েই বাড়িটি প্রায় ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরসভা কেন এত দেরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল, তা-ও তাঁরা বুঝতে পারছেন না। পুরসভার বিরোধী দলনেতা, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সমীর রায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ায় তাঁদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান থানাতেও তা জানানো হয়েছিল। থানা জানায়, তারা পরিস্থিতির দিকে ‘নজর’ রাখছে।
সমীরবাবু বলেন, “পুরপ্রধানকে সব জানিয়েছি। তিনি কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন। তাও কাজ চলছে কি না, তা দেখতে ঘটনাস্থলে যাব।” পুরপ্রধান বলেন, “নিষেধ সত্ত্বেও যদি কাজ চলে, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |