মাঠে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমার কাজ প্রায় শেষের মুখে। চাঁদা হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বারোয়ারির সদস্যেরা। কিন্তু বাজারে এখনও ভিড় জমেনি।
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “আসলে বন্যার ভয় পেয়েছিলেন অনেকে। সে ভয় এখন কেটেছে। কিন্তু পুজোর বাজার বলতে যা বোঝায়, তা এখনও ভাল করে জমেনি।” তাঁর কথায়, “মাস পয়লা হওয়ার পরে গত সপ্তাহান্তে আমরা ভেবেছিলাম বাজার জমে যাবে। কিন্তু কিছুটা আঁচ বাড়লেও শেষ পর্যন্ত আশাহতই হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এখন আমরা অপেক্ষা করছি এই সপ্তাহান্তের।” বন্যার ভয়ে এক দিকে যেমন ব্যবসায়ীরা অনেক সময় জিনিসপত্র তোলেননি, তেমনই খদ্দেররাও বাজারের দিকে আসেননি। প্রবল অতিবর্ষণে পাট থেকে পটোল, আমন থেকে আউশ বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে চাষিদের। উত্তমবাবু বলেন, “পাট আর ধানের টাকা দিয়েই চাষি পুজোর বাজার করেন। কিন্তু সেখানেই তো মার খেয়েছেন তাঁরা।”
কৃষ্ণনগর, কাটোয়া, কালনা এমনকী সালার পর্যন্ত ছড়ানো নবদ্বীপের পাইকারি বাজারের প্রভাব। এই গ্রামীণ ক্রেতারাই এই বাজারের বড় ভরসা। কিন্তু সেই গ্রামীণ ক্রেতারাই এখন নবদ্বীপের মতো বড় পাইকারি বাজারেও নেই বললেই চলে। তাঁদের হাতে পাটের টাকা না আসা পর্যন্ত, বাজার জমবে কি না, সন্দেহ দেখা দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের সোজা কথা, পাটের দর না উঠলে বাজারও উঠবে না।
নবদ্বীপের পোশাকের বাজারে সাধারণত দু’ধরনের ব্যবসা হয়। একটা হল স্থানীয় ভাবে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই উৎপাদন করেন। তার বাজার ছড়ানো গুপ্তিপাড়া থেকে শুরু করে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। এ ছাড়া, কলকাতা থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জামাকাপড় আসে। তার বাজারটা প্রধানত শহারঞ্চলে সীমিত। কিন্তু তাও খুচরো ও পাইকারি বিক্রেতাদের হাত ঘুরে অনেক সময় মফস্সলের বাজারে চলে যায়। নবদ্বীপের একটি রেডিমেড কারখানার মালিক প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আমরা এখন ভরসা করে রয়েছি শহরের ব্যবসায়ীদের উপরেই। আমাদের এখানে যা পোশাক তৈরি হয়, তা বেশ ভাল মানের। তাই অন্য জেলার বড় শহরের ব্যবসায়ীরাও কলকাতার বদলে আমাদের কাছ থেকে জিনিসপত্র কেনেন। এ বার পুজোয় সেই ব্যবসাটাই চলছে। স্থানীয় খদ্দের কিন্তু কম আসছেন।” নবদ্বীপের এক প্রথম সারির বস্ত্র ব্যবসায়ী রাজেশ অগ্রবালের কথায়, “দোকানে গ্রামের ক্রেতারা আসেন যখন, তখনই বাজার জমে। কিন্তু এ বার আসছেন কেবল চাকুরিজীবীরা। তবে একটা অন্য সমস্যাও হচ্ছে। শহুরে ক্রেতার নজর উঁচু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই চান সরাসরি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জিনিস তাদের দোকান থেকেই কিনতে।” গ্রামের ক্রেতার চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত হয়ে নবদ্বীপের এমন বহু দোকান তাই পুজোর মুখেও ঝিমোচ্ছে। রেডিমেড কারখানার সঙ্গে যুক্ত নিত্যানন্দ মহাপাত্র। তিনি বলেন, “ব্র্যান্ডের জামাকাপড়ের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, রেডিমেড জামা কাপড় তৈরির আঞ্চলিক কারখানাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিছু দিন বাদে আর দক্ষ কারিগরও মিলবে না। যাঁরা আছেন, তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে।” |