সঞ্জয় চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
তাঁর চোখে তিন মাসে ধরা পড়েছে তিনটি গুরুতর রোগ। প্রথমত, তিনি দেখেছেন, কর্মীরা সকলে সময়ে দফতরে আসেন না। তাঁর দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ, দফতরের নানা স্তরে দুর্নীতি। তৃতীয়ত, ঠিকাদার ও প্রমোটারদের একাংশের ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টাও নজরে পড়েছে তাঁর। তিনি মানে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাই রোগের দাওয়াই দিতে নিজেই আসরে নেমেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন ডিন রুদ্রনাথবাবু।
দফতরের আমলা-ইঞ্জিনিয়র-কর্মীদের একাংশের দুর্নীতি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিটি প্রকল্প ধরে খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। ঠিকাদারদের খামখেয়ালিপনা দূর করতে চেয়ারম্যান নিজে প্রতিটি প্রকল্পস্থল ঘুরে দেখছেন। ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলছেন। ইঞ্জিনিয়রদের কার কোথায় কাজ, কতটা অগ্রগতি তার প্রতি সপ্তাহের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ওয়েবসাইট নতুন করে তৈরি হচ্ছে যাতে যে কেউ সেখান থেকে সমস্ত তথ্য পেতে পারেন। এসজেডিএ-র মুখ তুলে ধরতে বস্তি এলাকায় হচ্ছে স্বাস্থ্যশিবির।
বুধবারের ঘটনাই ধরা যাক। বলা নেই, কওয়া নেই, সাতসকালে এসজেডিএ চেয়ারম্যান হাজির এসজেডিএ-র ড্রাই পোর্ট ও টি পার্ক প্রকল্প এলাকায়। খবর পেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়র। কাজে বেশ কিছু গরমিল ধরা পড়ায় দফতরে ডেকে পাঠানো হল ঠিকাদারকে। সকলেই তটস্থ।
লাভ কী কিছু হচ্ছে তাতে?
দফতরের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কথায়, “দারুণ ব্যাপার হয়েছে। বাবুদের ১২টায় দফতরে এসে চা, জল খেয়ে তিনটের বাড়িতে ফেরা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজের কৈফিয়ত দিতে হওয়ায় ফাইল থেকে মুখ তোলার সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকেই।” দফতরের এক ইঞ্জিনিয়রও স্বীকার করলেন, “কিছু কর্মীর কাজের হিসাবও চাওয়া যেত না। এ বার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে।” ই-টেন্ডার নিয়ে দফতরের প্রশিক্ষণ শিবিরে এসে অনেক ঠিকাদারও স্বীকার করে গিয়েছেন, “নির্দিষ্ট কয়েকজন ঠিকাদার ছাড়া কেউ এখানে ঢুকতেই পারত না। এ বার মনে হচ্ছে শিলিগুড়ির উন্নয়নে আমরাও সামিল হতে পারব।”
এসজেডিএ-র চেয়ারম্যানেরও সাফ কথা, “এই বদলটাই তো আমরা চাইছি। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হলেও এসজেডিএ-তে এতদিন এমন অনেক কাজ হয়েছে যাতে কর্মসংস্কৃতিটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমন কিছু প্রকল্প হয়েছে যেখানে মানুষের উপকারের চেয়ে দুর্নীতির অভিযোগটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মী-আধিকারিকদের বলে দিয়েছি, এ বার ভাবমূর্তি বদলাতেই হবে।”
রাজ্যে বাম সরকার তৈরির পরে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরির পরে শহরের চেহারায় পরিবর্তন অনেক এসেছে। কিন্তু তার সঙ্গে বিতর্ক কম দানা বাঁধেনি। কাজের মান নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। ইঞ্জিনিয়র-ঠিকাদার-আমলাদের যোগসাজস নিয়ে নানা জল্পনা হয়েছে। কর্মসংস্কৃতি লাটে উঠেছে। এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান বলেন, “একটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন উঠবে? ঠিক করেছি, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কোনও আপস করব না। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এসজেডিএ-র ভাবমূর্তিতে আমরা বদল আনতে পারব বলে বিশ্বাস করি।” |