নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
লাগাতার গোলমাল আর রক্তারক্তি এড়াতে আপাতত শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ির দুই শহরের পানশালায় নাচ-গান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ অফিসার, পানশালা মালিক ও কর্মীদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “কলকাতায় পানশালায় নাচগান হলেও প্রায়ই মারপিট, রক্তারক্তি হয় না। কিন্তু শিলিগুড়িতে মাঝেমধ্যে সে সব হচ্ছে। খুনের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশের পদস্থ কর্তাদের একাংশের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। এতে আমজনতাও ক্ষুব্ধ, বিরক্ত। সকলের সঙ্গে কথা বলে ঠিক হয়েছে, আগামী ভাইফোঁটা পর্যন্ত দুই শহরের পানশালায় নাচ-গান বন্ধ থাকবে। তার মধ্যে পুলিশ-প্রশাসন গোটা পরিস্থিতি সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে পদক্ষেপ করবে রাজ্য।” সম্প্রতি শিলিগুড়িতে নাচ-গান বন্ধ করার দাবিতে এক অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম করে ভাঙচুর-হামলা চালানোর ঘটনার সমালোচনা করেন মন্ত্রী। প্রশাসনের অঙ্গ হয়েও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত,মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) পানশালার সামনে গিয়ে কেন অবস্থান-বিক্ষোভ করেছেন, সেই প্রশ্নেও বিরক্ত মন্ত্রী। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রশাসনে থেকেও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় অভিযুক্তদের সতর্ক করে দেন মন্ত্রী। পরে মন্ত্রী বলেন, “আন্দোলন হলে তা গণতান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে। কনভেনশন, পরামর্শ দিতে পারে সংগঠন। কিন্তু পানশালা নিয়ে আন্দোলনের নামে যা হয় তা সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা বলে অনেকের মনে হয়েছে। এটা কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। আমি মেয়র-সহ সকলকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনীয় যা করার সব সরকার এবং প্রশাসন করবে।” তবে নাচ-গান বন্ধ থাকায় পুজোর মরশুমে পানশালার কর্মীরা কেউ যাতে সমস্যায় না-পড়েন, সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য মালিকপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।
সরকারের সিদ্ধান্তে কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পড়তে হলেও তা মেনে নিয়েছে নর্থ বেঙ্গল মিউজিক্যাল বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই সংগঠনের সহ-সভাপতি সরজু শর্মা বলেন, “মন্ত্রীর নির্দেশ মানা হবে। ভাইফোঁটা অবধি দুই শহরের কোনও পানশালায় নাচগানের আসর বসবে না। কিন্তু, কর্মীদের বেতন, বোনাস দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী যে নির্দেশ দিয়েছেন তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। দেখা যাক কী হয়!”
শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির ১৭ পানশালায় নাচ-গানের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু, ওই পানশালার একাংশে নানা অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মাল্লাগুড়ির একটি পানশালায় খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে মামলাও চলছে। সেবক রোডে একাধিক পানশালায় গায়িকা-নর্তকীদের কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে রক্তারক্তি ঘটে বলে পুলিশের কাছে খবর। সম্প্রতি সেবক রোডের এক পানশালায় নির্দিষ্ট সময়ের পরে তা খুলিয়ে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত চালানো নিয়ে কয়েকজন পদস্থ পুলিশকর্তার সঙ্গে হাতাহাতি হয় কয়েক জনের। পানশালা-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য পুলিশের সদর দফতর থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে পানশালায় নাচগান বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু। সামিল হন মেয়র। একাধিক পানশালার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন তাঁরা। ওই সময়ে একটি পানশালায় ভাঙচুরের অভিযোগে দুজন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পানশালায় নাচগান বন্ধের পক্ষে থাকলেও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগে কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক এবং তাঁর অনুগামীরা পানশালায় ভাঙচুর আন্দোলন করে কংগ্রেসের ঐতিহ্য নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নালিশ জানান। ঘটনার খবর পেয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কলকাতা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈঠক ডাকেন। সওয়া ২ টোয় বৈঠক শুরু হয়। মেয়র, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়কও ছিলেন। জেলার পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ অফিসাররাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পরে সিঙ্গিং-বার প্রতিবাদ মঞ্চের পক্ষ থেকে পুরসভার মেয়র পারিষদ (বিল্ডিং) সীমা সাহা বলেন, “আমরা এটাই চেয়েছিলাম।” |