কী যোগ্যতার কত লোক লাগবে, চুক্তির সময় জানাতে হবে শিল্পকে
কোনও শিল্পে দরকার হয়তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। শিল্পের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মানবসম্পদ জোগানের ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্য দূর করতে চায় রাজ্যের নতুন সরকার।
এখন থেকে কোনও প্রকল্প গড়তে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তির সময়েই শিল্প সংস্থার তরফে জানিয়ে দিতে হবে, সেখানে কাজের জন্য কী ধরনের যোগ্যতার, কত লোক লাগবে। সেই তথ্য মাথায় রেখে রাজ্য সরকার এমন পরিকল্পনা করবে, যাতে প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় যোগ্য লোকের অভাব না-হয়। বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলোচনাসভায় রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পের সম্পর্ক জরুরি কি না, তা নিয়ে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল বণিকসভা ‘কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ’ (সিআইআই)। পার্থবাবু সেখানে বলেন, “রাজ্যে মেধাবী ছেলেমেয়ের অভাব নেই। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই শিল্পে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্য নন।” তাই নতুন প্রকল্পের চুক্তি করার সময়েই শিল্পের চাহিদা জেনে নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তাঁর আশা, এই পরিকল্পনায় শিল্প সংস্থাগুলিকেও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না।
এ দিনই বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশন শিল্পমন্দিরে এক অনুষ্ঠানে পার্থবাবু জানান, লগ্নিকারীদের জমি, জল, বিদ্যুতের মতো পরিষেবার পাশাপাশি চাহিদামতো দক্ষ মানবসম্পদও দেবে সরকারই। সেই জন্যই ‘নলেজ ব্যাঙ্ক’ ও ‘এমপ্লয়মেন্ট পুল’ তৈরি করা জরুরি। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভাল সুযোগ আসতে চলেছে। তাই জেলা-ভিত্তিক ‘নলেজ ব্যাঙ্ক’ এবং ‘টেকনিক্যাল এমপ্লয়মেন্ট পুল’ গঠনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশন-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, কারিগরি শিক্ষায় ভাল ফল করা ছাত্রদের তালিকা দেওয়া হোক আমাদের। সুযোগমতো তাঁদের চাকরির চেষ্টা করবে সরকার।”
কিন্তু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অনেক ছেলেমেয়েরই যে হাতে-কলমে শিক্ষায় ঘাটতি থাকছে, শিল্প সংস্থা ও বণিকসভাগুলি বারবার তা জানিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও বিষয়টি অজানা নয়। কলকাতা, যাদবপুর-সহ রাজ্যের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই শিল্পের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এগোনোর কথা বলছে। কোনও কোনও শিল্প সংস্থার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তিও হয়েছে তাদের। কিন্তু তাতেও যে খামতি পূরণ হয়নি, এ দিন পার্থবাবুর কথায় সেটা স্পষ্ট।
যাদবপুরে এ দিনের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনে আচার্যের সঙ্গেও কথা বলব।” তাঁর মতে, অনেক রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যে পড়াশোনার মান খারাপ। যাদবপুর বা বেসু-র মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন নিয়ে প্রশ্ন না-থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মান নিয়ে সংশয় আছে। তিনি বলেন, “রাজ্যে চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য নেই। হয়তো কোনও কাজের জন্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন, কিন্তু সেই জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।”
বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের আঞ্চলিক কর্তা এস রাধাকৃষ্ণনের বক্তব্য, পাঠ্যক্রমেই যে সব সময় খামতি থাকে, তা নয়। তিনি বলেন, “পড়া শেষ করে যাঁরা কাজে যোগ দেন, তাঁদের অনেকেই তেমন বলিয়ে-কইয়ে নন। তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো দরকার।” সিআইআই-এর তরফে সুগত মুখোপাধ্যায়ও এ ব্যাপারে একমত। শিল্পের চাহিদা আগাম জেনে নিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার যে-ঘোষণা এ দিন মন্ত্রী করেছেন, তাকে স্বাগত জানান তিনি।
পাঠ্যক্রম তৈরিতে তাঁরা শিল্পের চাহিদাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন বলে জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষ। তবে তাঁর মতে, সেটাই যথেষ্ট নয়। মৌল বিষয়গুলি পাঠ্যক্রমে রাখতেই হবে। রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী সেনগুপ্ত বলেন, “পাঠ্যক্রম তৈরিতে সাহায্যের ব্যাপারে অনেক শিল্প সংস্থাই বিশেষ আগ্রহ বোধ করে না। বিভিন্ন সময়ে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েও পাশে পাইনি।”
পার্থবাবু চান, শিল্প সংস্থাগুলি গবেষণার কাজেও উদ্যোগী হোক। শিক্ষায় বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “যাঁরা রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসার বার্তা দিতে চাই।”
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.