জমি নিয়ে বিবাদের জেরে হিঙ্গলগঞ্জের আমবেড়িয়া গ্রামের এক বিজেপি নেতাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হল। ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা তৃণমূল কর্মী বলে দাবি নিহতের পরিবার এবং বিজেপি-র। ফলে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ লেগেছে। তৃণমূল জানিয়েছে, ধৃতেরা দলের কেউ নয়।
মারধরের ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাতে। প্রতীত মণ্ডল (৪২) নামে বিজেপি-র গ্রাম কমিটির ওই নেতাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে সান্ডেলের বিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে প্রথমে বসিরহাট হাসপাতাল এবং তার পরে কলকাতার আর জি কর হাসপাতাল হয়ে একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করানো হয়। বুধবার দুপুরে প্রতীত মারা যান। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রবি মণ্ডল, প্রকাশ মণ্ডল, অসিত মণ্ডল এবং হরেকৃষ্ণ মণ্ডল নামে ওই চার জনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি জমির দখল নিয়ে ওই গ্রামে দু’টি পক্ষ হয়ে গিয়েছে। প্রতীত ছিলেন এক পক্ষে। অন্য পক্ষে রয়েছেন রবি-প্রকাশরা। সম্প্রতি ওই জমি নিজের দখলে বলে এক মহিলা ধান চাষ করেছিলেন। অন্য পক্ষ তা নষ্ট করে দেয় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে গ্রামে গোলমাল চলছিলই। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ গ্রামের একটি রাস্তার মোড়ে রবি-প্রকাশরা মদ খাচ্ছিলেন। অভিযোগ, প্রতীতকে আসতে দেখে তাঁরা গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করায় প্রতীতকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারা হয়। গ্রামবাসীরা গিয়ে প্রতীতকে উদ্ধার করেন।
বুধবার গ্রামে ওই বিজেপি নেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এক দল গ্রামবাসী প্রতিবাদে বুধবার রাত পর্যন্ত পারহাসনাবাদ-লেবুখালি রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিহতের দাদু নির্মল মণ্ডল বলেন, “মদ খেয়ে প্রতীতকে উদ্দেশ্য করেই রবি-প্রকাশরা গালিগালাজ করছিল। ওরা তৃণমূল করে। আমার নাতি বিজেপি করে বলে ওদের রাগ ছিল। একটি জমি নিয়ে বিবাদের মীমাংসা করতে গিয়েছিল প্রতীত। সেই রাগেই ওরা নাতিকে বাঁশপেটা করে মেরে ফেলল।”
ধৃতেরা আগে সকলেই বিজেপি সমর্থক ছিল জানিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বিজেপি-র ব্যোমকেশ গাইন বলেন, “ওরা সম্প্রতি আমাদের দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়। ওই জমিটি ওরা অন্যায় ভাবে দখল করতে চাইছিল। প্রতীত প্রতিবাদ জানান। সেই কারণে ওদের রাগ ছিলই। পিটিয়ে মেরে ফেলল।” ধৃতেরা দলীয় সমর্থক বলে মানতে চাননি হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আবু বক্কর গাজি। তিনি বলেন, “কয়েক জন মদ খেয়ে মারামারি করছে জানতে পেরে রাতেই পুলিশকে বলেছিলাম। প্রতীতকে যারা মেরেছে, তারা আমাদের দলের কেউ নয়। আমি তাদের চিনিও না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।” |