সিপিএম প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা খারিজ হওয়ার পরও তিন দিন ধরে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ ও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীরা। নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে পাঁশকুড়ার হাউর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আসছেন না প্রধান। ফলে, পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ও উন্নয়নে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা নিয়ে। আটকে গিয়েছে শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের মজুরিও। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনে জিততে না পেরে গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখলে আনতে চাইছে তৃণমূল। যদিও তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানার বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও সিপিএমের প্রধান নিজের পদে থাকতে চাইছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও তিনি এলাকায় কোনও উন্নয়ন করেননি। তাই সাময়িক অসুবিধা হলেও এলাকার বাসিন্দাদের সমর্থন নিয়ে আমরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি।” পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েতের ১৭ সদস্যের মধ্যে ১০ জন বামফ্রন্ট ও ৭ জন তৃণমূল সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান লক্ষ্মীকান্ত সামন্তের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ৭ জন সদস্য উন্নয়নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অনাস্থা আনেন। ২৫ অগস্ট অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিডিওর ডাকা তলবি সভায় ছিলেন তৃণমূলের ৭ সদস্য ও সিপিএমের ২ জন। নিয়ম মেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য উপস্থিত থাকায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সভা হয়। বিডিও’র প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়। প্রথমে ধ্বনিভোটে প্রধানের বিরদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ৮ জন সমর্থন করেন এবং এক সিপিএম সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন। পরে সদস্যদের দাবি মেনে ব্যালটে ভোটাভুটি হয়। তাতে ৭ তৃণমূল সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। দুই সিপিএম সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন। এর ফলে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়নি বুঝতে পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব ওই দুই সদস্যের ভোট নেওয়ার দাবি তোলে। কিন্তু প্রশাসনের প্রতিনিধি তা গ্রাহ্য করেননি। তৃণমূলের দাবি, শেষ পর্যন্ত ৯ জন উপস্থিত সদস্যই প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থায় সম্মতি দেন। তবে, নিয়ম মেনে ভোটগ্রহণ না হওয়ায় প্রশাসনিক আধিকারিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। সভার রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বিডিও গত শনিবার চিঠি দিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানতে চাননি। প্রধানের অপসারণ চেয়ে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে গত সোমবার থেকে বিক্ষোভ-অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ও দলের বেশ কিছু কর্মী। এর ফলে, নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে গত ২৯ অগস্ট থেকে পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধান। থমকে গিয়েছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। ১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন না স্থানীয় কালীদান গ্রামের শ্রমিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, একমাস আগে কালীদান গ্রামে নিকাশি খাল সংস্কারের কাজ হলেও এখনও পারিশ্রমিক মেলেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার গ্রামীণ রাস্তা মেরামতি ও নলকূপ বসানোর মত জরুরি কাজের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৮ লক্ষ টাকার কাজ শুরু হয়নি প্রধান কাজের নির্দেশ দিতে না পারায়। পঞ্চায়েত প্রধান লক্ষ্মীকান্ত সামন্ত এলাকার উন্নয়নের কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছি। তাই অফিসে যাচ্ছি না। এ বিষয়ে ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি।” পাঁশকুড়ার বিডিও নীলাঞ্জন পাল বলেন, “পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির খবর পেয়েছি। ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছি।” |