নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দিব্যি বসেছিল এসি থ্রি টিয়ারে। ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুলে। চলছিল দু’জনের খোশ গপ্পো। গন্তব্য কাঠপাট্টি। শয়ে শয়ে বাঙালি ওখানে রোজ নামেন। কারও পেটের ব্যামো, কারও বা পিঠের। ভেলোরের হাসপাতাল যে কাঠপাট্টির কাছেই।
তবে ওদের কারও ব্যামো নেই। ফুরফুরে। পিঠে বন্দুক নিয়ে পুলিশ হেঁটে গেল। ওরা নির্বিকার। কালো কোট পরা দু’জন টিকিট পরীক্ষকও হেঁটে গেলেন। ওরা ঠায় বসে। যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস যখন বাগনানে ঢুকছে, তখন ওদের কাছে টিকিট চাইলেন টিকিট পরীক্ষক। ডট পেন দিয়ে সাদা পাতায় দাগ মারতে গিয়ে তিনি থেমে গেলেন। বললেন, “এ কী, এ তো সাধারণ কামরার টিকিট। এসিতে বসেছেন কেন!”
ওরা বসেই রইল। এক জন তাকাল টিকিট পরীক্ষকের দিকে। হিমশীতল চাউনি। বলল, “কত জরিমানা?” টিকিট পরীক্ষক জরিমানার অঙ্ক বললেন। তারা জরিমানা দিল। তাতে ছিল পাঁচশো টাকার নোট। |
জরিমানার জাল টাকা। নিজস্ব চিত্র |
এ-রকম রোজই হয়। প্রায় সব ট্রেনেই হয়। কিন্তু এটা যদি গোদ হয়, তা হলে বিষফোঁড়াটা এই রকমওরা জরিমানার টাকা দিল। টিকিট পরীক্ষক টাকাটা আলোর সামনে তুলে দেখলেন। টাকাটা আসল তো! একটু সন্দেহ হল। তিনি পাঁচশো টাকার নোটটি দিলেন রেল পুলিশের হাতে। তিনিও টাকাটা উল্টেপাল্টে দেখলেন। সন্দেহ তাঁরও। টাকাটা জাল।
শুরু হল পুলিশের জেরা। যে-সব যাত্রী বসেছিলেন তাঁরা দাঁড়ালেন। যাঁরা বালিশ মাথায় শুয়ে পড়েছিলেন তাঁরা নেমে এলেন। ব্যাপারটা কী! পুলিশকর্মী বললেন, “আ্যাই, তোর নাম কী?” হাওয়া খারাপ। আত্মবিশ্বাস কিঞ্চিৎ টাল খেয়েছে। বলল, “আমার নাম ইউসুফ মণ্ডল। বাড়ি মুর্শিদাবাদের রাজগঞ্জে।” আর তোর নাম? “আজ্ঞে আমি বাসারুল মাল। বাড়ি নদিয়ার তেহট্টে।” তোদের ব্যাগে কী আছে? ‘আজ্ঞে বিশেষ কিছু নেই। গরিব মানুষ।’ পুলিশ ব্যাগপত্র টেনে নামাল। ব্যাগের ভিতর কিছু জামাকাপড় এবং পাঁচটি পাঁচশো টাকার ও একটি ১ হাজার টাকার বান্ডিল। সবই জাল। এক যাত্রী অপার বিস্ময়ে মোবাইলে দু’জনের ছবি তুলে রাখল। প্রাতঃস্মরণীয়।
মানিকজোড় অতঃপর পুলিশের জালে। চলল আরও জেরা। জানা গেল, ওরা জাল নোটের বাহক। হাওড়া থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছিল তামিলনাড়ুর কাঠপাট্টিতে। জাল টাকা তারা এনেছে বাংলাদেশ থেকে। তাদের গুরুর নাম সামাদ। সে থাকে বাংলাদেশের করিমপুরে।
রেল পুলিশের দাবি, ওদের জেরা করে একটি আন্তর্দেশীয় জাল নোট চক্রের হদিস মিলেছে। |