|
|
|
|
জাল নথির রমরমা |
হাজার কোটির জমি কেলেঙ্কারি দেওঘরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রাঁচি |
হাজার কোটি টাকার জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় ঝাড়খণ্ডে। কেলেঙ্কারি এতটাই বড় মাপের যে সটান সিবিআই-এর দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। দেওঘরে গত তিন বছরে ৮০০ একরের বেশি জমি অবৈধ ভাবে বিক্রি বা হস্তান্তরিত হয়েছে বলে খবর। এই জমির মূল্য অন্তত হাজার কোটি টাকা। আদিবাসীদের জমি বেসরকারি হাতে হস্তান্তর রুখতে পুরনো আইন সাঁওতাল পরগনা টেন্যান্সি অ্যাক্টকে (এসটিএ) বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুকৌশলে বানানো হয়েছে জাল কাগজপত্র।
গত তিন বছর ধরে এই জালিয়াতি চলেছে বলে তদন্তে জেনেছে দেওঘরের পুলিশ। এ দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত তিনজন এখন পুলিশের জালে।
মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার নির্দেশে রাজ্য ভিজিল্যান্স দফতর এই কেলেঙ্কারির তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু করেছে। তবে জামশেদপুরে মুন্ডা আজ বলেন, “দেওঘরের জমি-মাফিয়াদের মধ্যে বিহারেরও কেউ কেউ জড়িত। তা ছাড়া, জমির কিছু নথি বা ম্যাপ বিহারে পড়ে রয়েছে। অতএব এর তদন্ত সিবিআই-ই করতে পারবে।” কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে দেওঘরের কালেক্টর এম আর মিনা তদন্তে নেমে প্রথমে এই ‘পুকুর-চুরি’ টের পান।
এমনিতে সাঁওতাল পরগনার জমি আইন অনুযায়ী আদিবাসী বা দলিতদের জমি কেউই ব্যবসায়িক কারণে বা ব্যক্তিগত স্বার্থে বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারে না। ওই জমি গোটা গ্রামের জমি বলে গণ্য। কিন্তু দেওঘরে এই আইনকে ধোঁকা দিতে জমি-মাফিয়ারা কালেক্টরের অফিসে নথিকক্ষের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের সঙ্গে যড়যন্ত্র করেছে বলে অভিযোগ। এক দিকে জমির জাল নথি তৈরি করা হয়েছে। অন্য দিকে সরকারি কর্মীদের টাকা খাইয়ে প্রকৃত নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেওঘরের এসপি সুবোধপ্রসাদ বলেন, “ এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন দেওঘরের নথিকক্ষের আধিকারিকের পুত্র সুনীল পোদ্দার। অসুস্থ বাবার হয়ে কাজ সামলাতে এসে জমি মাফিয়া ধ্রুবনারায়ণ পরিহস্তের হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। সুনীলের কাছ থেকে ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মিলেছে। ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি বিপুল জমির মূল নথি পুড়িয়ে দিয়েছেন। নরেশ মাঝি নামে আর এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি মালিকদের নামের রেজিস্টার মিলেছে। ওই রেজিস্টারের নথি পাল্টানো হয়েছে। ধ্রুবনারায়াণ ও নরেশকেও ধরা হয়েছে।” এসপি জানিয়েছেন, দেওঘরের সদর থানা ও কুন্ডা থানায় এখনও পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু দেওঘরের মফস্সল এলাকা, মোহনপুর ও মধুপুরে বিস্তর জমিতে দূর্নীতি চলেছে। ৮০০ একর জমির জালিয়াতি সামনে এলেও আরও বহু জমিই জালিয়াতি করে বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে ’৯০-এর দশকে সাবেক বিহারের আমলে রাঁচিতেও এমন জমি-কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। রাঁচির আদিবাসী কৃষিজমি রক্ষার আইন ছোটনাগপুর টেন্যান্সি অ্যাক্টকে অগ্রাহ্য করে রাঁচিতেও ২০০ একর জমি আবাসন তৈরির জন্য জমি মাফিয়ারা বেচে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বিহার ক্যাডারের আইএএস শিবশঙ্কর বর্মা তখন রাঁচির ডিসি। তিনিও এই জমি-কেলেঙ্কারিতে ফাঁসেন।
ঠিক কী ভাবে জালিয়াতি হয়েছে দেওঘরে?
পুলিশ সূত্রের খবর, এসটিএ আইনকে ধোঁকা দিতে জমির গত ৩০-৪০ বছরের জাল নথি তৈরি করা হয়েছে। ভুয়ো নথিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জমি ৪০-এর দশকেই হস্তান্তর করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। জমি থেকে রাজস্ব আদায়ের ভুয়ো নথি তৈরি থেকে জমির মালিকদের নাম পাল্টানোভূমি ও ভুমি রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের সাহায্যে সবই করে মাফিয়ারা। একই সঙ্গে জমির মূল নথি নষ্ট করে ফেলা হয়। |
|
|
|
|
|