জমি অধিগ্রহণ বিল পেশ হতে না হতেই সংসদে সরকার ও কংগ্রেসের তরফে রাহুল গাঁধীকে রাজনৈতিক কৃতিত্ব দেওয়ার প্রয়াস শুরু হয়ে গেল। সেই সঙ্গে কৌশলগত ভাবে কংগ্রেসের তরফে কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
‘জমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন ও পুনঃস্থাপন’ বিলটি আজ লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তার পরেই কৃষিভবনে তাঁর নিজের মন্ত্রকে এক সাংবাদিক বৈঠক করে জয়রাম বলেন, “মাত্র ৫৫ দিনের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ বিলটি একেবারে নতুন ভাবে খসড়া করে তা সংসদে পেশ করা সম্ভব হয়েছে স্রেফ রাহুল গাঁধীর জন্য। চূড়ান্ত খসড়ায় তাঁর বেশ কিছু মূল্যবান পরামর্শ রাখা হয়েছে। এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও কৃতিত্বও রয়েছে। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের আন্দোলনের মধ্যে গোটা দেশের সামনে তিনিই প্রথম সমস্যাটি তুলে ধরেছিলেন। তাঁর পরামর্শ মেনেই ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ গঠনের বিষয়টি বিলে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া রাহুল ও মমতা দু’জনেই চেয়েছিলেন, কেবল জমির মালিক নন, অধিগ্রহণের ফলে যাঁরা জীবিকা হারাবেন, তাঁদের স্বার্থও যেন সুরক্ষিত থাকে।” জয়রামের কথায়, এঁদের পরামর্শ নিয়েই, অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত দুটি বিলকে মিলিয়ে একটি বিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্টের’ কথাও বলা হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে, একটি কারণে জমি অধিগ্রহণ করে তা অন্য কারণে ব্যবহার করা যাবে না।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, তিস্তা জলবণ্টন নিয়ে মতান্তর সত্ত্বেও কংগ্রেস যে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে, জয়রামের মুখে মমতার প্রশংসার মধ্যে দিয়ে সেই বিষয়টিই উঠে আসছে। কারণ, কেন্দ্রে চলতি নানা সঙ্কটের বাতাবরণে শরিকদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদও এখন কংগ্রেসের রয়েছে। সে দিক থেকে তৃণমূল তো ইউপিএ-র বৃহত্তম শরিক দল। |
রাহুলকে কৃতিত্ব দেওয়ার রাজনীতিটা অবশ্যই ভিন্ন। দেশ জুড়ে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কৃষক অসন্তোষ ও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিলটি সংসদে পেশ করার দাবি অনেক দিন ধরেই ছিল। বস্তুত, সিঙ্গুর-নন্দ্রীগ্রাম বিতর্কের পর থেকেই। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই দেরি হয়েছে। আবার সেই রাজনৈতিক কারণেই যে তড়িঘড়ি নতুন বিলটি আনা হল, তা নিয়েও সংশয় নেই। কারণ উত্তরপ্রদেশে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কৃষক অসন্তোষকে আসন্ন বিধানসভা ভোটে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। সম্প্রতি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কৃষক মহাপঞ্চায়েতের মঞ্চ থেকেই রাহুল জানিয়েছিলেন, সংসদের বাদল অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হবে। তার পর রাহুলের পরামর্শেই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী পদে আনা হয় জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য তথা ১০ জনপথ ঘনিষ্ঠ জয়রাম রমেশকে। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, জয়রামের ওপর ১০ জনপথ তথা রাহুলের নির্দেশ ছিল, কেন্দ্রের বিলটি যেন উত্তরপ্রদেশের জমি নীতির তুলনায় ভাল হয়।
বলা মাত্রই কাজ। আজ সাংবাদিক বৈঠকে নতুন বিলটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের জমি নীতির সঙ্গে তুল্যমূল্য একটি তালিকাও সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেন জয়রাম রমেশ। সেখানে দেখানো হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের জমি নীতির তুলনায় ১৮টি বিষয়ে ভাল কেন্দ্রের নতুন বিল।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জানান, ২৭ জুলাইয়ের খসড়া থেকে খুব বেশি পরিবর্তন করা হয়নি চূড়ান্ত খসড়ায়। ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্টের’ বিষয়টি রাখা হয়েছে নতুন বিলে। যার অর্থ, অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলেও যেখানে এখনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি, সেখানে বর্তমান বিল প্রয়োগ করা হবে। অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হলেও যেখানে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি, সেখানেও নতুন নীতি কার্যকর হবে। এরই পাশাপাশি বহুফসলি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত খসড়ায় পরিবর্তন করে বাস্তবসম্মত ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, বর্তমান বিলটিকে ‘বেঞ্চমার্ক’ হিসাবে ধরে রাজ্যগুলি তাদের নতুন নীতি প্রণয়ন করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান বিলে আরও একটি সংশোধন আনা হবে। বলা হবে, অধিগ্রহণের দশ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে তা রাজ্যের ল্যান্ড ব্যাঙ্কের কাছে চলে যাবে। রাজ্য চাইলে ওই জমি মূল মালিককে ফিরিয়ে দিতে পারবে। |