পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদাহরণ করে আন্দোলনের ডাক দিল আলফার কট্টরপন্থী অংশ।
রাজ্যের জমি বাংলাদেশকে হস্তান্তরের প্রতিবাদে আজ অসম ও মেঘালয় জুড়ে প্রতিবাদ জানাল বিরোধীরা। পুড়ল মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল। পরেশ বরুয়ার অনুগামী আলফা মেল পাঠিয়ে জানাল, রাজ্যবাসীর স্বার্থ কী ভাবে সুরক্ষিত রাখতে হয়, মমতার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। সংসদেও এ দিন জমি হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছে অসম গণপরিষদ ও বিজেপি। তাদের প্রতিবাদের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম আশ্বস্ত করেন, বহু বছর ধরে চলা সমস্যার নিরসনেই এই ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তি হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত তিনটি চুক্তির সাপেক্ষে, অসমের প্রায় ৬০০ একর জমি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির সময়, দেশ ভাগের সময়কার র্যাডক্লিফ লাইনকে প্রামাণ্য ধরেই ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ হয়েছিল। তবে, দুই পক্ষের মানুষেরই এতে আপত্তি ছিল। মেঘালয়ের পিরদোয়া, মুক্তাপুর, দউকি, তামাবিল, অসমের ডুমাবারি-লাঠিটিলা, বরইবাড়ি এলাকায় বারবার দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। ২০০১-এ বরইবাড়িতে বিডিআর চৌকি দখল রাখতে গিয়ে ১৬ জন বিএসএফ জওয়ান প্রাণ হারান। গত বছর ছয় বার গুলিবিনিময় হয়েছে মেঘালয়ের মুক্তাপুরে। তাতে মারা যান বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী। তা ছাড়া অনুপ্রবেশ, জমি চাষ ও নদীতে মাছ ধরা নিয়ে দু’পারের মানুষের সংঘর্ষ ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। অবশেষে কাল, ১৯৭৪ সালের চুক্তির এক নম্বর অধ্যায়ের ১৫ নম্বর দফার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে, অসমের করিমগঞ্জ জেলার ডুমাবারি-লাঠিটিলা ও ধুবুরি জেলার মানকাচরের বিতর্কিত বরইবাড়ি বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়া হয়। দউকি-তামাবিলের বর্তমান সীমান্তরেখা বরাবর সোজাসুজি লাইন টানা হচ্ছে। পিরদোয়া ও মুক্তাপুরের বিতর্কিত জমি বাংলাদেশের হাতে গেলেও পিরদোয়ার গ্রামবাসীদের পৌয়ামং নদী থেকে জল নিতে দেওয়া হবে। মুক্তাপুরের গ্রামবাসীরাও মুক্তাপুরের দিকে, নদীতে মাছ ধরা ও জল নেওয়া চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ সীমান্তের কালী মন্দির দর্শনেও বাধা থাকছে না। সব মিলিয়ে পিরদোয়ার বিতর্কিত ২২০ একরের মধ্যে ১৯৩ একর ভারত পেয়েছে। লিংখাতে বিতর্কিত ৬ একরের জায়গায় মিলছে ৪.৭৫ একর। কিন্তু পিরদোয়া ও লিংখাত এলাকার গ্রামবাসীরা এই চুক্তি মানতে নারাজ। রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ ছাড়া এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না তাঁরা। আন্তর্জাতিক সীমান্ত সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান এম রিংসাই-এর মত, সীমান্তে যাঁরা জমির প্রকৃত মালিক, তাঁদের সঙ্গে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এক বার কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি। |
বিতর্কিত জমি বাংলাদেশের হাতে চলে যাওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে অসম জুড়েও। রাজ্যসভায় অগপ-র বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্য ও দীপক দাস বলেন, “অসমের জমি দিয়ে দেওয়ার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।” বিজেপি-র বেঙ্কাইয়া নায়ডুও এই চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে বিবৃতি দাবি করেন। বিজেপি-র অভিযোগ, অসমের জমি হস্তান্তর ও পশ্চিমবঙ্গের তিনবিঘার বিষয়ে সরকার আগে থেকে কিছুই জানায়নি বিরোধীদের। এই প্রতিবাদ দুই রাজ্যেই আন্দোলনে নামবে বিজেপি। সংসদে অগপ-বিজেপির অবস্থানকে সমর্থন জানায় বিজেডি, এডিএমকে-র মতো দলগুলিও।
চুক্তির বিরুদ্ধে অসমে আজ একযোগে পথে নামে আসু, অগপ, বিজেপি, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। উজানি অসম থেকে শুরু করে নামনি অসম ও বরাক উপত্যকার জেলায় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। জেলায় জেলায় গাছের ডালে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিকৃতির গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে আসু। কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির দাবি, গগৈয়ের আমলে রাজ্যের অনেক জমিই অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়ের বাসিন্দারা দখল করে নিয়েছেন। এ বার, ডুমাবারি, বরইবারির মানুষকে আরও প্রতারণা করলেন গগৈ। করিমগঞ্জের ৩৬৪ বিঘা জমি বাংলাদেশের অধীনে গেল। সেখানে ২২টি পরিবারের জমি রয়েছে। পরিবারগুলি জানিয়ে দিয়েছে, প্রাণ থাকতে জমি ছাড়বে না তারা।
আসু ও অগপ উভয়েই জানিয়েছে, বাংলাদেশকে দেওয়া জমি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে। এআইইউডিএফ ঘোষণা করে, অসমের এক ইঞ্চি জমিও বাংলাদেশকে দিতে দেওয়া হবে না। আলফার পরেশপন্থীরা ভূমি হস্তান্তরকে অসমের ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় আখ্যা দিয়ে জানায়, বাংলাদেশকে উপহার দেওয়া জমি না ফেরানো পর্যন্ত তারা ‘সংগ্রাম’ চালাবে। তাদের যুক্তি, মমতা যদি তিস্তা চুক্তির প্রতিবাদ করতে পারেন, তবে গগৈ কেন অসমের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রের বিরোধিতা করবেন না? |